Scrooling

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন বঙ্গতনয়া, ৮২তম ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অরিজন্তি বিভাগে সেরা পরিচালকের খেতাব জয় করলেন চিত্রপরিচালক অনুপর্ণা রায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর শুভেচ্ছা। # রজতজয়ন্তী বর্ষে সংবাদ প্রভাতী পত্রিকা। সকল পাঠক-পাঠিকা বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি শুভেচ্ছা # বর্ধমানে জাতীয় সড়কে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় ১১ পুণ্যার্থীর মৃত্যু। মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর # UGC NET 2025-এ অল ইন্ডিয়া র‍্যাঙ্ক-১ করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পিএইচডি স্কলার নিলুফা ইয়াসমিন # উচ্চ মাধ্যমিকের পর নিটেও রাজ্যে প্রথম বর্ধমানের রূপায়ণ পাল। # ষষ্ঠ সিন্ধু জিব্রাল্টার জয় করে ইতিহাসের পাতায় সায়নী # 'দাদাসাহেব ফালকে' সম্মানে ভূষিত হলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী

ভাই ফোঁটার আয়োজনে সম্প্রীতির নজির গড়লো মহিন্দরের তারামা ট্রাস্ট


 

ভাই ফোঁটার আয়োজনে সম্প্রীতির নজির গড়লো মহিন্দরের তারামা ট্রাস্ট


Atanu Hazra 
Sangbad Prabhati, 23 October 2025

অতনু হাজরা, জামালপুর : ভাই ফোঁটার আয়োজনে সম্প্রীতির নজির গড়লো জামালপুর ব্লকের মহিন্দরের তারামা ট্রাস্ট। আজ ভাই ফোঁটার পূণ্য তিথিতে বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় কপালে ফোঁটা দেয়। এটাই আমাদের ভারতের রীতি নীতি ও ঐতিহ্য। সেই পরম্পরাকে বজায় রেখেই জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মহিন্দরের তারামা মন্দিরে আয়োজন করা হলো ভাইফোঁটা। এলাকার প্রায় শ'তিনেক বাচ্চা ছেলে মেয়েরা অংশ নিয়েছিল। আর এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জামালপুর ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খাঁন (তিনি নিজেও তারামা ট্রাস্টের সদস্য)। তাঁর সাথে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ শিপ্রা ওঝা ও ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা।

 আশ্রমের গেটের মুখে মেহেমুদ খাঁন-কে বরণডালায় প্রদীপ জ্বালিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পুষ্প বৃষ্টির মাধ্যমে তাঁকে আশ্রমের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। মন্দিরে গিয়ে তিনি মাতৃ দর্শন করেন। সেখানে আয়োজিত ভাই ফোঁটায় তিনি কচি কাঁচাদের সাথে মিশে যান। তাঁর মঙ্গল কামনায় তাঁকে ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ নেন শিপ্রা ওঝা সহ অন্যান্যরা। একই সঙ্গে বসে ফোঁটা নিয়ে খাবার খাচ্ছেন মেহেমুদ খাঁন তাঁরই পাশে বসে খাচ্ছেন এই মন্দিরের পুরোহিত। 

এ এক বিরল দৃশ্য। ৩০০ জন বাচ্চা প্রত্যেকের হাতেই নতুন পোশাক (যা বোনেদের হাত দিয়ে ভাইয়েদের ও ভাইয়েদের হাত দিয়ে বোনেদের দেওয়া) তুলে দেয় এই তারামা ট্রাস্ট। ছোট ছোট বাচ্চারা মেহেমুদ খাঁনের কপালে ফোঁটা দেন আর তিনি প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন তাদের। মেহেমুদ খাঁন বলেন প্রায় ১২ বছর ধরে বাপিন দা এই অনুষ্ঠান করছেন এবং তিনি প্রতিবছরই এই ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে আসেন। এখানে এলে তাঁর এক অন্য অনুভূতি হয়। তিনি বলেন বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় কপালে ফোঁটা দেবে এর আবার জাত ধর্ম কী? তিনি তারামা মন্দিরের বা ট্রাস্টের কর্ণধার বাপিন দা কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তাঁকে প্রতিবছর আমন্ত্রণ করার জন্য। তিনি বাপিন দার বিশেষ প্রশংসা করেন।

 আজকের দিনে আমাদের সব সংস্কৃতি আমরা ভুলতে বসেছি। সেই জায়গায় ছোট্ট থেকেই এই বাচ্চাদের মনে সংস্কারের বীজ বপন করে দেওয়া হচ্ছে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। আবার একই আসনে বসে জাতি - ধর্ম - বর্ণ - ধনী - দরিদ্র নির্বিশেষে বসে ভাইফোঁটা নিচ্ছে মানে তাদের মধ্যে এক একাত্মতা গড়ে উঠছে। আর সবচেয়ে যেটা তাঁর ভালো লেগেছে তা হলো এই বাচ্চাগুলোকে নতুন বস্ত্র উপহার দেওয়ায়। শিপ্রা দেবী বলেন ১২ বছর ধরে তিনিও এখানে আসছেন মায়ের মন্দিরে মায়ের সামনে এই ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান সত্যি এক অন্য অনুভূতি। আর যিনি এই কর্মকাণ্ডের মূল কান্ডারী সেই বাপিন দা( দীপঙ্কর ঘোষ) নির্বাক। তিনি কোনো প্রচারের আলোয় আসতে চান না। তাঁর এই তারামা মন্দির এক সুন্দর পরিবেশ যা মানুষকে আকৃষ্ট করে।

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খাঁন-কে ভাইফোঁটা দিলেন দলের মহিলা নেত্রী ও কর্মীরা 

  


আজ মেহেমুদ খাঁনের ব্লক পার্টি অফিসেও ভাই ফোঁটার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ব্লকের ১৩ টি অঞ্চল থেকে আসা তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা নেত্রী ও কর্মীরা। এখানেও এক সম্প্রীতির আবহ লক্ষ্য করা যায়। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আসেন মেহেমুদ খাঁনকে ভাই ফোঁটা দিতে। পার্টি অফিসে তাঁর মঙ্গল কামনায় তাঁর কপালে প্রথম ফোঁটা দেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা মালিক, ছিলেন বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ শিপ্রা ওঝা আর ছিলেন ব্লকের সমস্ত স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী ঝর্না বেগম শেখ। এছাড়াও পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, সাধারণ কর্মী মিলে প্রায় একশজন উপস্থিত ছিলেন। এক মুসলমান ভাইয়ের কপালে এক হিন্দু বোন ফোঁটা দিচ্ছেন সত্যি সম্প্রীতির এক অসাধারণ নিদর্শন। ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে উপহারে ভরিয়ে দেন তাঁর বোনেরা। 

তিনিও বোনেদের হাতে উপহার হিসাবে তুলে দেন একটি করে শাড়ি। মেহেমুদ খাঁন বলেন তিনি আপ্লুত। এই ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান তিনি সরাজীবন মনে রাখবেন। তিনি নিজে মুসলমান কিন্তু এক হিন্দু ব্রাক্ষ্মন বোন তাঁকে ফোঁটা দিতে এসেছেন। এ তাঁর কাছে পরম পাওয়া। তিনি সকলকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন। সকলে যেন নিজের নিজের সংসারে সকলকে নিয়ে ভালো থাকে তিনি আলাহর কাছে এই প্রার্থনা করবেন। আর উপস্থিত তাঁর বোনেরাও ভগবানের কাছে তাঁদের প্রিয় দাদার মঙ্গল কামনা করেন। সত্যি বার বার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জামালপুরে সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি হচ্ছে।