পড়ুয়াদের অবসাদ ঘোচাতে প্রকৃতি হোক সহচর
Sangbad Prabhati, 14 April 2025
ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, সংবাদ প্রভাতী : বর্তমান সমাজে স্কুল ও কলেজের পড়ুয়াদের মধ্যে দ্রুত বেড়ে চলেছে মানসিক চাপ, অবসাদ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার আগ্রহ, পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে প্রতিযোগিতা, পারিবারিক প্রত্যাশার চাপ ও আত্মপরিচয়ের সংকট মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতা আজ এক গভীর সংকটের মুখে। এই বাস্তবতায় প্রকৃতির সঙ্গে নতুন করে বন্ধন গড়াই হতে পারে এই সংকট থেকে পরিত্রাণের পথ। এই ভাবনাকেই সামনে রেখে স্টার্ট আপ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বর্ধমানের এক সভাগৃহে অনুষ্ঠিত হল এক ব্যতিক্রমী আলোচনা সভা – “শিশু ও জলবায়ু: দুজনেই সহপাঠী” শীর্ষক এক বিশেষ পর্ব।
এই আলোচনা সভায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের অধ্যাপক, সমাজকর্মী, পরিবেশকর্মী ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। আয়োজকদের পক্ষে সন্দীপন সরকার জানান, চিরাচরিত পঠনপাঠনের বাইরেও শিক্ষার্থীদের যদি প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী রক্ষা ও জলবায়ু সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যায়, তবে তাদের মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো সম্ভব।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অধ্যাপক রামানুজ কোনার, প্রীতম দাস, জয়ন্ত ঘোষ সহ অন্যান্য শিক্ষকরা মত প্রকাশ করেন যে, প্রকৃতির সঙ্গে শিশুদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক তৈরি হলে তারা আরও সংবেদনশীল, আত্মবিশ্বাসী ও উদ্বেগমুক্ত হয়ে উঠবে। আলোচনায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে প্রকৃতি-ভিত্তিক কর্মসূচি চালু করার প্রস্তাব উঠে আসে – যেমন স্কুল প্রাঙ্গণে উদ্যান রচনা, পাখির বাসা তৈরি, জল সংরক্ষণ প্রকল্প, প্রজাপতি বাগান, এবং পরিবেশ-সচেতন প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা।
এই সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি সুসংহত নীতিমালা প্রণয়ন, যার মাধ্যমে বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে পরিবেশগত সহানুভূতি এবং মানসিক সুস্থতার পরিসর বাড়ানো যায়। আলোচনার শেষে অংশগ্রহণকারীরা একটি খসড়া রূপরেখা তৈরি করেন, যা ভবিষ্যতে রাজ্য জুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যকর করার জন্য প্রস্তাবিত হবে। কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এই সবুজ কার্যক্রমে উৎসাহিত করতে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগকে অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলা হয়। আয়োজকরা প্রস্তাব দেন স্কুল ও কলেজে “মনের কথা” নামে একটি বাক্স রাখা হোক, যাতে সমর্থন জানিয়ে শিক্ষক রাহুল সিং, সুভাষচন্দ্র দত্ত ও নিখিল খাঁ বলেন "পড়ুয়ারা তাদের মানসিক যন্ত্রণার কথা লিখে জমা দিতে পারলে, প্রয়োজনে পরবর্তী পর্যায়ে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।" অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ১৪টি স্কুল, ১টি কলেজ, ১ জন অধ্যাপক ও ২৪ জন সমাজকর্মীকে সম্মাননা প্রদান করা হয় বলে আরেক আয়োজক পার্থ প্রতিম মিত্র জানান। এই সভার মধ্য দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা উঠে আসে—শিশুদের মানসিক সুস্থতার জন্য প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এই সভা প্রমাণ করে, প্রকৃতির সংস্পর্শেই লুকিয়ে আছে আগামী প্রজন্মের সুস্থ, সচেতন ও সবল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। প্রকৃতি শুধু বইয়ের পাতায় নয়, থাকুক প্রতিটি শিশুর মন ও জীবনের অনিবার্য অংশ হয়ে।