অবসরের দিনে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে চোখের জলে বিদায় নিলেন শিক্ষিকা
Sangbad Prabhati, 31 December 2024
অতনু হাজরা, জামালপুর : ২০০২ সালে বেত্রাগরে বড় মুদি পাড়ায় প্রতিষ্ঠা হয় বেত্রগর শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই এই বিদ্যালয়ের প্রধান সহায়িকা পদে যোগদান করেছিলেন গ্রামেরই এক গৃহ বধূ শঙ্করী হাজরা। দেখতে দেখে পেরিয়ে গেছে ২২ টি বছর। প্রথম সেই পাড়ার একটি আটচালায় শুরু হয় এই স্কুল। দুজন সহায়িকা নিয়ে। একজন তিনি নিজে আর একজন অশোক পাঁজা। পরবর্তীতে চারটি ক্লাসের জন্য আরো একজন দিদিমনি নিয়োগ হয় সীমা সিংহরায়। সেই আটচালা ঘিরে একটি স্টোর রুমের মত ঘর করে দীর্ঘ দিন চলতে থাকে স্কুল। কিন্তু তিনি এই গ্রামের মানুষ আবার প্রধান সহায়িকা সর্বদাই তিনি চেষ্টা করতে থাকেন একটি স্কুল বাড়ি করতেই হবে এই পাড়ার ছেলে মেয়েদের জন্য। কারণ প্রাইমারি স্কুল এখান থেকে প্রায় ১ কিমি দূরে। অবশেষে রাজি করালেন তাঁরই আত্মীয় (ভাসুর) লক্ষী নারায়ন চক্রবর্তীকে। লক্ষী নারায়ন বাবু স্কুলের জন্য ৭ শতক জায়গা দান করলেন। আর সেই জায়গাতেই গড়ে উঠলো স্কুল বাড়ি। হলো রান্নাঘর। সরকারী সহযোগিতায় এবং তাঁর নিরবিচ্ছিন্ন চেষ্টায় ভালোই চলতে লাগলো স্কুল। পিছিয়ে পড়া এলাকার ছাত্র ছাত্রীরা পেতে থাকলো শিক্ষার আলো। সময়ের সাথে সাথে অবসর নিয়েছেন অশোকা পাঁজা ও সীমা সিংহরায়। শেষ দুবছর তিনি একা চালিয়েছেন এই স্কুল। শেষ দুবছরে নেননি একটিও সি এল।
আজকে বিদায় বেলায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিষন্ন তিনি। জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এই কচি কাঁচাদের সঙ্গে। কিভাবে কাটবে তাঁর সময়। বিদায় বেলায় পাড়ার সকল মানুষ আসছেন তাঁর কাছে দেখা করতে। সকলেরই চোখে জল। তাঁদের প্রিয় দিদিমণির এই স্কুলে আজই যে শেষ দিন। প্রত্যেক শিশু শিক্ষার্থী তাদের বড় দিদিমণির হাতে দিচ্ছে উপহার, প্রণাম করে নিচ্ছে আশীর্বাদ। প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা সকলেই হাজির তাদের প্রিয় দিদিমণির আজকের এই বিদায়ের দিনে। কেউ নিয়ে এসেছে ফুলের তোড়া, কেউ নিয়ে এসেছে পেন, বই আবার কেউ গলায় পরিয়ে দিয়েছে মালা।
সকলেই আজ চোখের জল ফেলছে তাদের বড় দিদিমণির জন্য।স্কুলের স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর দিদিরাও আজ মন খারাপ করে বসে আছেন। তাঁদের চোখেও আজ জল। প্রিয় দিদিমণির হাতে তাঁরা উপহার হিসাবে তুলে দিলেন একটি শাল।
আর আজকের এই দিনে বড় দিদিমনি তাঁর প্রিয় ছাত্র ছাত্রীদের করালেন তিথী ভোজন। লুচি, ছোলার ডাল, আলুর দম আর বোদে। সবাই মিলে একসাথে বসে চলল তিথী ভোজন। সব শেষে চোখের জলে প্রাণ প্রিয় স্কুলের জীবন শেষ করে ছেলে মেয়েদের টাটা নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন তিনি।