Scrooling

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন বঙ্গতনয়া, ৮২তম ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অরিজন্তি বিভাগে সেরা পরিচালকের খেতাব জয় করলেন চিত্রপরিচালক অনুপর্ণা রায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর শুভেচ্ছা। # রজতজয়ন্তী বর্ষে সংবাদ প্রভাতী পত্রিকা। সকল পাঠক-পাঠিকা বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি শুভেচ্ছা # বর্ধমানে জাতীয় সড়কে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় ১১ পুণ্যার্থীর মৃত্যু। মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর # UGC NET 2025-এ অল ইন্ডিয়া র‍্যাঙ্ক-১ করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পিএইচডি স্কলার নিলুফা ইয়াসমিন # উচ্চ মাধ্যমিকের পর নিটেও রাজ্যে প্রথম বর্ধমানের রূপায়ণ পাল। # ষষ্ঠ সিন্ধু জিব্রাল্টার জয় করে ইতিহাসের পাতায় সায়নী # 'দাদাসাহেব ফালকে' সম্মানে ভূষিত হলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী

অরুণ দা : Arun Kumar Chakraborty Creator of 'Lalpaharir Dashey Ja'


 

অরুণ দা 

Arun Kumar Chakraborty
Creator of 'Lalpaharir Dashey Ja'


🔘  সর্বানী মুখোপাধ্যায়

Sarbani Mukhopadhyay 
Sangbad Prabhati, 23 November 2024

২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি। চন্দননগর রবীন্দ্র ভবনে ভ্রমণ বিষয়ক কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছিলাম। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার জন্যে কোন গাড়ী পাওয়া যাচ্ছিল না। কোন রকমে একটা টোটো ওলাকে পাকড়াও করে উঠে বসেছি। সঙ্গে পুত্রসম অরণ্য আধিকারিক অসিতাভ। টোটো ওলা যাওয়া আসার কড়ারে রাজী হয়েছে। গাড়ী জিটি রোডে বাঁক নিতে যাচ্ছে, এমন সময়ে তিনি হাত দেখালেন। টোটো ওলাও দিব্যি গাড়ি থামিয়ে দাঁড়ালো। 

"উঠতে পারি ? আমি এই স্টেশন অব্দি যাবো।"

বক্তা আর কেউ নন, একটু আগেই যাঁকে মঞ্চে দেখে এসেছি, সেই অরুণ কুমার চক্রবর্তী। আমি এতটাই হতভম্ব যে, আসুন, উঠে পড়ুন বলতেও ভুলে গেছি। অসিতাভই আমার হয়ে বলে " হ্যাঁ। উঠে পড়ুন।" 

আমি সরে ওনার বসার জায়গা করে দিই। অবাক লাগে, এতক্ষণ মঞ্চে যাঁর উপস্থিতি সবাই উপভোগ করলো, তাঁর স্টেশন পৌঁছনোর জন্যে একটা গাড়ীর ব্যবস্থা কর্মকর্তারা করে দিতে পারেননি। আশ্চর্য!

অরুণ দার কিন্তু তাতে কিছুই আসে যায় না। এমনই মাটির কাছের মানুষ তিনি।

বসেই উনি ঝোলা ব্যাগ থেকে টফি বের করে সবাইকে (টোটো ওলাকেও) দিলেন। তারপরে বললেন, " আমি অরুণ চক্রবর্তী।" যেন ওনার পরিচয় আমরা জানিনা! ঝোলা থেকে এবারে বেরোলো লালপাহাড়ি র দেশে ও অন্যান্য কবিতার বই। আমার হাতে দিয়ে বললেন "কোথায় থাকো ভাই?"

রিষড়া। শুনে স্মৃতিচারণের মতো বললেন, "ওখানে হুগলি ডিস্ট্রিক্ট এডভেঞ্চার লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন বলে শক্তির (সাইক্লিস্ট শক্তিদা) একটা ক্লাবের ক্যাম্প ট্যাম্পে আমায় ডাকতো। গেছি কয়েকবার।"

"সে তো আমারও ক্লাব। আমিও তো যেতাম বাচ্চাদের ওরিয়েন্টেশন ক্যাম্পে।"

" তাই বোলো! সেজন্যেই তো চেনা লাগছিল তোমায়.."

২০২২ থেকে ২০২৪। খুবই কাছ থেকে দেখেছি, কথা শুনেছি তাঁর। বহুবার চন্দননগরের গ্যালারি দ্য মঁসিয়ে সুর- এর নানান অনুষ্ঠানে ওনার সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ পেয়েছি। আমার ভাই অমিত, চন্দননগরের অমিত মিত্র ছিল ওনার খুব কাছের মানুষ। অরুণ দার সঙ্গে কত সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরেছি আমি অমিতের সহায়তায়।

কল্যানী বইমেলা ২০২৩। ছাপার হরফে আমার চতুর্থ বই পাঠকের দরবারে পৌঁছনোর জন্যে প্রস্তুত। বিষয় ছিল পাগুলে। অরুণ দার মনের মতো, অরুণাচলের ভাললাগা প্রকৃতির মাঝে পৌঁছনোর গল্প। আমার ইচ্ছে, অরুণ দার হাতে তার মলাটের উদ্বোধন হোক। সে ইচ্ছে আমার পূরণ হয়েছিল। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি এসেছিলেন। নিজে হাতে বইয়ের মলাটে সোনার অক্ষরে আশীষের বানী খোদাই করে দিয়েছিলেন। 

কথা হতো, গান, গল্পের আসরেও উপস্থিতির সুযোগ মিলেছে। শেষ দেখা, ২০২৪ এর মে মাসে, ওনার "রোদ্দুরে রাখি পা " কাব্য গ্রন্থ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। সস্ত্রীক তাঁকে সাথে নিয়ে যাবার সেই অনন্য অভিজ্ঞতার কথা কখনও ভুলবো না। দীর্ঘ পথ যাত্রা সম্বৃদ্ধ ছিল নানান বিষয়ের আলোচনায়। 

কলকাতার অনুষ্ঠান শেষে রাতে যখন বাড়ীতে পৌঁছে দিতে গেলাম, তখনও তাঁর বাড়ীর সামনে কিসের যেন প্যান্ডেল বাঁধা। ঘুর পথে বাড়ী ঢুকে, টেবিলে মুখোমুখি বসে বেমাপা সময়ের আড্ডা আমার জীবনের সঞ্চয় হয়েই থাকুক। আফশোষ, সেদিনটা আরও দীর্ঘ কেন হলোনা!

আপনার ইচ্ছাশক্তি, সৃষ্টিশীল মন আর প্রাণখোলা হাসি মনে রাখবো চিরকাল। যেখানেই থাকুন ভালো থাকবেন অরুণ দা।।