Scrooling

হাঁপানি ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় ভুগছেন ? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ অয়ন শিকদার আগামী ২৫ আগস্ট বর্ধমানে আসছেন। নাম লেখাতে যোগাযোগ 9734548484 অথবা 9434360442 # টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট ২০২৪ : ভারতের বিশ্ব রেকর্ড, প্রথম থেকে শেষ সব ম্যাচে ভারতের জয় # কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আউসগ্রামের বিউটি বেগম # নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে শপথ নিলেন ডঃ সুকান্ত মজুমদার ও শান্তনু ঠাকুর # আঠারো তম লোকসভা ভোটের ফলাফল : মোট আসন ৫৪৩টি। NDA - 292, INDIA - 234, Others : 17 # পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফলাফল : তৃণমূল কংগ্রেস - ২৯, বিজেপি - ১২, কংগ্রেস - ১

পাটুলীতে ২৫৯ বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ সাহাবাড়ির মা দুর্গা আজও জাঁকজমক ভাবে পূজিত হন


 

পাটুলীতে ২৫৯ বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ সাহাবাড়ির মা দুর্গা আজও জাঁকজমক ভাবে পূজিত হন 




Dwarakanath Das
Sangbad Prabhati, 21 October 2023

দ্বারকানাথ দাস, পূর্বস্থলি : পাটুলী সাহা বাড়ির দুর্গাপূজা আজ থেকে ২৫১ বছর আগে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এখানকার অন্যতম বণিক ছিলেন ব্যবসায়ী জমিদার ভূসম্পত্তিশালী নিত্যানন্দ (কলু) সাহা। তিনি নিজের বাড়িতে মহাধুমধাম করে জাঁকজমক ভাবে দুর্গাপূজার সূচনা করেন। তাঁর তিন পুত্র চারুচন্দ্র সাহা, সতীশচন্দ্র সাহা, ব্যোমকেশ সাহা। পরবর্তীকালে সাহা পরিবার চৌধুরী উপাধি লাভ করেন। ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থে নিত্যানন্দ সাহার মৃত্যুর পর চারুচন্দ্র সাহা এবং সতীশচন্দ্র সাহার এই দুই বিরাট অট্টালিকা বাড়িতে দুর্গাপুজোর বিপুল আয়োজন হতো। বর্তমানে তার বংশধররা আড়াইশো বছরের বেশি প্রাচীন দুর্গাপুজো মহাধুমধাম সহকারে আয়োজন করে।

পাটুলীর সাহা বাড়ির দুর্গাপুজোর বৈশিষ্ট্য হলো পুজোর বোধনের দিনই মহাসমারোহে গঙ্গার ঘাটে নবপত্রিকা স্নান করানো। স্নান পর্ব চলাকালীন দেবী ঘট গঙ্গাজলে ভর্তি করা হলেই পুরোহিত স্নান করেন। পাঁচটি তোপধ্বনি করা হতো, পরবর্তীকালে বেশ কয়েক বছর দোলানো বন্দুকের গুলি ছোড়া হতো। এখন তা হয় না। এখন আতস বাজি বিধিনিষেধ থাকার ফলে তোপ ফাটানো রীতি প্রচলিত হয়ে আসছে বলে সাহাবাড়ির প্রবীন সদস্য নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান।

পাটুলীর সাহা বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রতিষ্ঠাতা নিত্যানন্দ সাহার প্রয়াণকালে তার পুত্র চারুচন্দ্র সাহা, ব্যোমকেশ সাহা এবং সতীশচন্দ্র সাহা। পরে বর্তমান প্রজন্ম সমরেশ চন্দ্র সাহার আমলেও নিষ্ঠাভাবে জাঁকজমক ভাবে দুর্গাপুজো সম্পন্ন করা হয়। রথযাত্রার দিনে দেবী মূর্তি গড়তে খড় বাঁধা এবং মাটি দেওয়া হয়। মহলয়ার দিন থেকে শুরু হয় দেবীর আনুষ্ঠানিক ভাবে পুজো, লোকাচার মতে। অষ্টমীর দিন সাহাবাড়ির মেয়েদের ও বউদের রীতি মেনে সিঁদুর খেলা সম্পন্ন হয়। নবমীর দিন হয় কুমারী পুজো। বলিদান হয় এখানে চাল কুমড়ো ও আখ। দেবীর নিরঞ্জনের প্রথা ভারী অদ্ভুত। আগের রাতে খুঁজে আনা হতো নীলকণ্ঠ পাখি'। তাকে খাঁচায় পুরে রাখা হতো। বর্তমানে এই নীলকণ্ঠ পাখি অমিল, পাওয়া যায় না। নিরঞ্জনের দিন বিশেষ শোভাযাত্রার আগে দেবী দুর্গা পুজো মন্ডপের থেকে বার করার পর বাঁশের বেহারা করে গঙ্গা বক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগে উড়ানো হয় নীলকণ্ঠ পাখি, খাঁচা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুটি নৌকার মাঝে বাঁশের পাটাতনে মাচায় তোলা হয় দেবীকে। শুরু হয় নদীবক্ষে বিসর্জনের মহাসমারোহে শোভা যাত্রা। বর্তমানে এই প্রথা চালু আছে। প্রতি বছর নৌকায় বিসর্জন পর্ব শেষ হয়। এই নিরঞ্জন পর্ব দেখার জন্য গঙ্গার ঘাটে মেলা বসতো, বর্তমানে তা হয় না। নৌবিহার আর হয় না। নৌবিহার ছিল দেখার মতো। জেলেদের একটি নৌকায় সাজানো হতো ময়ূরের মুখ দিয়ে। বলা হতো ময়ূরপক্ষী তাতে একজন রাজা সেজে থাকতো, এই রাজার সাজ করতেন সাহা বাড়ির যারা যাত্রা পালায় অভিনেতাদের সাজাতেন। অপর নৌকায় ছিলো মকর মুখো তাতেও ১৬জন করে দক্ষ নৌকাচালক থাকতো, আগে একটি নৌকা ছিলো তাদের বলা হতো মাতালের নৌকা। সারা গঙ্গা বক্ষ জুড়ে তাদের উৎসাহে নৌকা চালানো হতো। এটি পাটুলী ঐতিহ্য মণ্ডিত এক উৎসব, বর্তমানে এটি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে পাটুলীর হাইস্কুল মাঠে ভাগীরথীর পাড় জুড়ে বিশাল মেলা বসে দূরদূরান্ত থেকে বহু দুর্গাঠাকুর এখানে এনে উৎসব পালন করা হয়। এসবের মধ্যে দিয়ে পাটুলীর সাহা বাড়ির জাঁকজমক পূর্ণ দুর্গা পুজোর কোন খামতি নেই। বিশাল রাজবাড়ির আদলে দালানকোঠা সাজানো হয়। পাটুলী পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানকার দুর্গাপুজা উৎসব দেখতে আসেন। সাহা বাড়ির দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জন প্রতি বছরের মতো গঙ্গাবক্ষে নৌকাযোগে বিসর্জন পর্ব শেষ হয়। সেই প্রাচীন রীতি বর্তমানে চলে আসছে।