মহরম উপলক্ষে বর্ধমানে কালা পাহাড়ি মাজারে চাদর চড়ালেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ
Sangbad Prabhati, 28 July 2023
ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, সংবাদ প্রভাতী : মহরম উপলক্ষে শহর বর্ধমানের বি সি রোডে কালা পাহাড়ি মাজারে ধর্মীয় উৎসবের উদ্বোধন করেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস। কালা পাহাড়িতে চাদর চড়ালেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। উল্লেখ্য ইসলাম ধর্মে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান মহরম। বিশ্বব্যাপী ওই দিনটিতে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন নবি মহম্মদের নাতি এবং হযরত আলীর পুত্র ইমাম হোসেনের শাহাদাতে শোক প্রকাশ করেন। তাদের বিশ্বাস, আশুরার দিনে আল্লাহ হযরত মুসা ও ইজরাইলের মানুষকে ফারাওর বাহিনীর থেকে রক্ষা করেন।
মহরম উপলক্ষ্যে শুক্রবার বর্ধমানের বিসি রোডে প্রায় শতাধিক বছরের পুরানো কালা পাহাড়ির মহরম উৎসব উদ্বোধন করেন বিধায়ক খোকন দাস। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, পৌরপতি পরেশ চন্দ্র সরকার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর সুখময় চক্রবর্তী সহ অন্যান্যরা।
কে ছিলেন এই কালা পাহাড় ? যেখানে মন্ত্রী এসে চাদর চড়ালেন, বিধায়ক ফিতে কেটে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলেন।
ইতিহাসের পাতা উল্টালেই জানা যায় কালাপাহাড় আসলে একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তিনি ছিলেন হিন্দু বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ রাজীবলোচন রায় ভাদুড়ি। তিনি কালাচাঁদ নামেও পরিচিত ছিলেন। আসলে তিনি ছিলেন কৃষ্ণকায় উচ্চতাসম্পন্ন সুঠাম দেহের অধিকারী। তাঁর চেহারার গড়নে হিন্দুদের কালাচাঁদ পরে মুসলমান সম্প্রদায়ে কালা পাহাড় নামে অভিহিত হন। কিন্তু বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ কি ভাবে মুসলমান হলেন। চলতি কথায় একটা প্রবাদ আছে 'প্রেমেতে মজিলে মন ..........'। সেই প্রেমের ফাঁদে পড়েই ব্রাহ্মণ সন্তান ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হলেন। সুলতান সুলেইমান করানির কন্যার প্রেমে পাগল হলেন। জানা যায়, সুলেইমান-কন্যার পাণিপ্রার্থী হলেন কালাচাঁদ। সুলতান সুলেইমান বললেন তিনি এই বিবাহে রাজি। তবে কালাচাঁদকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে হবে। তবে ধর্মান্তরিত হওয়ার পিছনে আর একটি কারণ আছে বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। যাইহোক, কালাচাঁদ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করলেন। তাঁর নতুন নাম হলো মোহাম্মদ ফারমুলি। চেহারার সঙ্গে সাদৃশ্য থেকে লোকমুখে কালাচাঁদ হয়ে গেল কালা পাহাড়। তাকে সেনাপতি করে দিলেন শ্বশুর সুলেইমান করানি। এরপর বাংলা বিহার উড়িষ্যা জুড়ে কিছু মন্দির ও বিগ্রহ গুঁড়িয়ে দিয়ে রাতারাতি কুখ্যাত হয়ে ওঠেন। ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে তার আক্রমণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোণার্কের সূর্যমন্দির। আবার তাম্রলিপ্তের বর্গভীমা মন্দির ধ্বংস করতে গিয়ে কালাপাহাড় মন্দির ও দেব বিগ্রহের সৌন্দর্য দেখে কোনও কারণে নিরস্ত হন। পরাক্রমী এই কালা পাহাড়ের মৃত্যু নিয়েও প্রচলিত গল্প শোনা যায়। তিনি নাকি ওড়িশার সম্বলপুরে সম্বলেশরীর মন্দির ধ্বংস করতে গিয়েছিলেন। মন্দিরের আগেই তাঁবু খাটিয়ে ছিলেন। কথিত আছে সেখানে এক তরুণী গোপিনীর কাছে দইয়ের ছাঁচ কিনে পান করেন কালাপাহাড় ও তার সৈন্যরা। সেই দইয়ের ছাঁচ খেয়েই তাদের মৃত্যু হয়েছিল। যদিও এই ঘটনার পর গোপিনীকে আর পাওয়া যায়ন। ওড়িষ্যায় লোক মুখে শোনা যায় স্বয়ং সম্বলেশ্বরী এসেছিলেন তরুণী গোপিনীর বেশে। কালের বিবর্তনে তারপর থেকেই কালা পাহাড় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকেই পুজো পান।
এদিন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কালা পাহাড়িতে চাদর চড়ানোর পরে খক্কর শাহ'র দরগায় ও চাদর চড়ান।