Social reformer Mahatma Jyotiba Phule
সমাজ সংস্কারক এবং নারী শিক্ষার অগ্রণী মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে
🟣 কৃষ্ণেন্দু কুমার মন্ডল
Sangbad Prabhati, 11 April 2023
এদিকে বড়লাট লিটনের আসার সবকিছু ঠিক। পুনা মিউনিসিপ্যালিটি ঠিক করলো বড়লাটের সম্বর্ধনার জন্য তারা এক হাজার টাকা খরচ করবে। ১৮৮০ খৃষ্টাব্দে ১০০০ টাকা অনেক। মিউনিসিপ্যালিটির মিটিং এ প্রস্তাব ওঠে। লিটন তার ভারনাকুলার প্রেস অ্যাক্টের জন্য কুখ্যাত ছিল। সত্যশোধক সমাজের মুখপাত্র দীনবন্ধুতেও এই আইনের বিরোধিতা করা হয়েছিল। তাই মিউনিসিপ্যালিটির ৩২ জন সদস্যের মধ্যে ৩১ জন লিটনের সংবর্ধনা করতে চাইলেও একজন কিন্তু পুরোদমে বিরোধিতা করেন। জ্যোতিরাও গোবিন্দরাও ফুলে বরং প্রস্তাব দেন এই টাকা পুনের গরীব ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাতে খরচ করা হোক।
বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে যাই আমরা। ভারতবর্ষ সে সময় সামাজিক ভাবে আরো বেশি বিভাজিত ছিল। তা সমাজের তথাকথিত নিম্ন জাতির জ্যোতিরাও (যাকে আমরা জ্যোতিবা বলেও চিনি) তথাকথিত উচ্চ জাতির বন্ধুর বিয়েতে বন্ধুর আমন্ত্রণে অংশ গ্রহণ করতে যান এবং সেই তথাকথিত উচ্চ জাতির লোকেদের কাছে নিজের জাতির নামে প্রচণ্ড অপমানিত হন। বাড়ি ফিরে বাবা গোবিন্দরাওকে জানালে বাবা জ্যোতিবাকেই এই দুঃসাহসের জন্য দোষারোপ করেন। বাবা তাঁকে বোঝান সমাজের নিয়ম হল জাতি হিসেবে কেউ ছোট আর কেউ বড় আর নিচু জাতির কারো অধিকার নেই বড় জাতির কারো সমকক্ষ হতে চাওয়া। বিয়েতে লোকজনের কথায় না যত দুঃখ পান জ্যোতিবা তার থেকে অনেক বেশি দুঃখ পান বাবার এই মানসিকতায়।জ্যোতিবা শপথ নেন সারা জীবন তিনি জাতি, লিঙ্গের উপর আধারিত ভেদাভেদ এর বিরোধ করে যাবেন। ১৮৭৩ খৃষ্টাব্দে সত্য শোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
অনেকের বোঝানোর পর বাবা রাজি হয়েছিলেন ছোট জ্যোতিবাকে স্কুলে পাঠাতে। তা নিম্ন জাতির ছেলেকে কে আর স্কুলে পড়তে নেবে? অগত্যা মিশনারি স্কুল। প্রথমে মরাঠি ও বেশ বেশি বয়সে ইংরাজি শিক্ষা পান। কিন্তু খুব বেশি পড়া হয়ে ওঠেনি। তা সবাই যখন ভাবলো কিছু একটা চাকরি বাকরি করে সংসার দেখবে তখন তাঁর মাথায় অন্য চিন্তা। বারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেলে ঠিক করেন নিজের পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীকে পড়াবেন। পাগল আর বলেছে কাকে? শুধুকি তাই যে যুগে ভারতে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের পড়াশোনা ছিল প্রায় নিষিদ্ধ সেসময় ১৮৪৮ খৃষ্টাব্দে তিনি মেয়েদের জন্য স্কুল খুলবেন ঠিক করেন। ভারতের অন্য প্রান্তে বাংলায় বিদ্যাসাগর পরের বছর বেথুন স্কুল আরম্ভ করবেন। প্রথমে কিছুদিন নিজে পড়ানোর পর ঠিক করেন শিক্ষক নয় মেয়েদের পড়াবেন শিক্ষিকা। এগিয়ে এলেন সহধর্মিণী সাবিত্রী বাই ফুলে। কিন্তু সমাজ এ পাপ সহ্য করবে কেন? তাই চাপে পড়ে বাবা গোবিন্দরাও শর্ত দেন হয় স্কুল ছাড়ো নচেত্ বাড়ি। ফুলে দম্পতি বাড়ি ছাড়তে দুবার ভাবেননি। সেই সময় এগিয়ে আসেন বন্ধু ওসমান সেখ। ফুলে দম্পতির থাকার জন্য বাড়ির এবং স্কুলের ব্যবস্থা করেন। শিক্ষিকা হিসেবে সাবিত্রী বাই এর সঙ্গে যোগদান করেন ফাতেমা সেখ। দাদা ওসমান লুকিয়ে লুকিয়ে বোন ফাতেমার পড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন আগে। আজ তাই তিনি সাবিত্রীর যোগ্য সাথি। রাস্তায় যখন লোকেরা সাবিত্রীর গায়ে গোবর ছোড়ে জ্যোতিবা তাঁকে সান্ত্বনা দেন। সাবিত্রী এবার সঙ্গে আরেকখানা কাপড় রাখেন যাতে গোবরলাগা কাপড় বদলিয়ে স্কুল করতে পারেন। এহেন জ্যোতিবা কে মুম্বইয়ে এক বিশাল সভা করে লোকে মহাত্মা উপাধি দেন।
তাঁর লেখা বইগুলি হলো - গুলামগিরি, তৃতীয় রত্ন, ছত্রপতি শিবাজী, রাজা ভোসলা কা পখড়া, কিসান কা কোড়া, অছুতো কী কৈফিয়ত।
তাঁর বিখ্যাত উক্তি :
বিদ্যা বিনা মতি গই, মতি বিনা গতি গই
গতি বিনা নীতি গই, নীতি বিনা বিত্ত গই ।
সমাজ সংস্কারক এবং নারী শিক্ষার অগ্রণী মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে ১৮২৭ খৃষ্টাব্দের ১১ এপ্রিল অর্থাৎ আজকের দিনেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে ২৮ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ আমরা তাঁকে আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও বর্ধমান সদর দক্ষিণের মহকুমা শাসক।