চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

Various Colours of Fagun ফাগুনে রঙের বাহার


 

Various Colours of Fagun

ফাগুনে রঙের বাহার 



যাঁরা লিখেছেন ----------------


🔸 দিলীপ রঞ্জন ভাদুড়ী

🔸 শান্তনু সেনশর্মা

🔸 মিষ্টি মিত্র

🔸অতনু হাজরা

🔸 তাপস কুমার পাল

🔸 অভিজিৎ মিত্র 


##########


দোল


🟣 দিলীপ রঞ্জন ভাদুড়ী


আসছে দোল বাজবে খোল

হবে হোলি খেলা,

শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব

দেবেই মনে দোলা।

পঞ্চমীতেই কৃষ্ণ সনে সখীরা

করবে রঙের খেলা,

বৃন্দাবনে চেয়ে দেখুন

বসেছে ঐ ফাগের মেলা।

বৃন্দাবন,মথুরা, গোকুল

সঙ্গে বারসানা,

কৃষ্ণ প্রেমে পাগল সবাই

হয়ে যাবে আনমনা।

হোলিকা দহন ,নেড়া পোড়া

নয়কো কিন্তু নিছক কিছু

হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা

দহনে হয়, শুদ্ধ রিপু।

সনাতনী আচার বিচার

হোলি উৎসবের আগে

প্রেম প্রীতি ভালবাসায়

রাঙিয়ে তুলে মনকে ফাগে।

ফাকুয়া, ফাগুয়া,হোলা মহল্লা

খাদি, মহুয়া,শিগমো গান

ইয়াওয়ং ছদিন হোলি

মণিপুরে লোক নৃত্য ধাম।

হোলি,হোরি, দোল, আবির

আনুক প্রেম, সবার মনে

মুছে যাক যত বিবাদ বিষাদ

সম্প্রীতি থাক আলিঙ্গনে।


##########


নবরঙ


🟣 শান্তনু সেনশর্মা 


চলতো একটু রঙ মাখি মনে

যে মনের খাতাতে 

লেখা আছে জীবনের মানে।

শিমুল-পলাশের গল্প

অনেক তো হলো

এবার অন্য কোথাও চলো।

যেখানে পাহাড় সমুদ্র

মরুপথ পেরিয়ে

জীবনের শত বাধা সরিয়ে

যদি খুঁজে পাই 

একটু সবুজের রাশি,

যেথা কোকিলের কলতানে

মন হবে খুশি।

চলো না ঘুরে আসি সেখানেতে

হৃদয়পুরের নতুন

সে ঠিকানাতে।


##########


ধার করা ক্যানভাস অথবা তুমি


🟣 মিষ্টি মিত্র


আজ তোমার কাছে একটা  ফাঁকা ক্যানভাস ধার নেব... নিশ্চই ভাবছ, কেন? ছবি আঁকবো যে। কোন ছবি, কেমন ছবি ভাবছ তো? ভাবো, মনের রঙে সুর দিয়ে আঁকব। বসন্ত আর দ্রিদিম মিশিয়ে। রঙ তুলি ক্যানভাসের শেকল বিধিনিষেধ কিছুই আজ মানব না।

দ্যাখো, তুলির টানে ক্যানভাসে ফুটে উঠছে চড়াই শালিখ ভর্তি একটা রেল স্টেশন, কি  যেন নাম... ‘ধ’ দেখতে পাচ্ছি... বোর্ডটা বেশ ঝাপসা। যাকগে, নামে কিবা এসে যায় ।

একটা সবুজ লোকাল এসে থামল, মেয়েটি নামছে... দরজায় অপেক্ষারত এক সহযাত্রীর দিকে চোখে চোখ... দুপুর বেলা, আর কেউ নেই। স্মার্ট সপ্রভিত একটি ছেলে... বয়সে তার থেকে হয়ত একটু বড়, মাথার মাঝে চুল একদম হাল্কা, চাউনি গভীর, গোল চশমা। ট্রেন থামলে মেয়েটি তরতর করে আগে নেমে গেল... রিকশা স্ট্যান্ডে মেয়েটির রিকশা ওকে পাস কাটিয়ে যাবার সময় শুনতে পেল... ছেলেটি রিকশাওয়ালাকে বলছে, পলাশবাগ যাবে?

পরের দিন সকাল ১০ টা, মেয়েটি কলেজের হাজিরা খাতায় সই করছে... আরে, প্রিন্সিপালের ঘরে কালকের সেই ছেলেটি না!

ব্রেক টাইম, কলেজ  ক্যান্টিন, মেয়েটির সাথে দেখা হল ছেলেটির, অবশ্য বৈশাখ নয়। প্রথম সৌজন্য বিনিময়, প্রথম এক চিলতে হাসি... কাল দুপুরের ট্রেনে ছিলেন না? মেয়েটি প্রশ্ন না করে থাকতে পারে না। ছেলেটি কম কথা বলে, হেসে ঘাড় নেড়ে জানায় সে আজ থেকে ফিজিক্স টিচার হিসেবে জয়েন করেছে... IIT passout... মেয়েটি জানায় তার অফিস উল্টোদিকে, সফটঅয়ার শেখায়। সপ্তাহখানেক... ফোন নম্বর ইথার টপকে দুদিকে... যত দিন যায়, মেয়েটি মুগ্ধ হতে থাকে সেই ভিনদেশী তারায়ঃ

কবিতা...গল্প ...প্রবন্ধ...গান... মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক সবেতে state level প্রথম। ওর চোখের চশমা মাথার প্রায় ফাঁকা কিছু কালো লাইন, মেয়েটি এসব সরিয়ে রাখে। ওর জীবনে গুনি মানুষের কদর খুব বেশি... গল্প বেড়ে চলে, গল্পের টান-ও। তারপর, অ-নে-ক দিন, গল্প নদীর মত গড়িয়ে চলে, ওকে দেখতে না পেলে ভাল লাগে না। এক মনভালো করা sms থেকে মেয়েটি জানতে পারে ভাললাগা একতরফা নয়... দুষ্টুমি, সই নকল করে রাগিয়ে দেওয়া, মাথায় পলাশের কমলা আভা... ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হয় দু’তরফেই। 

সন্ধের চলন্ত টোটোয় মেয়েটি একদিন বলে, তুমি তো এত গুনি, আমার মত মেয়েকে ভাল লাগার কারন কি, আমি কি তোমার যোগ্য? ছেলেটি হাসে... তুমি চিনির মত মিষ্টি, আজ থেকে এই আকাশ তোমার, তুমি আমার মিষ্টি ... 

কলেজের পর ঘুরে বেড়ানো ... ছুটির দিনে কলকাতা ... মিষ্টির কোলে মাথা রেখে শুয়ে সে আলোর মত কবিতা বলে চলে, এক অজানা ফোটন... রবীন্দ্রনাথ ...নজরুল ...কীটস...শেলি... গান কবিতা সিনেমা গল্প, সব কিছুতেই সে দক্ষ... মিষ্টি ডুব দেয় তার এই অতল গভীরে...

একদিন যখন দুজনের ঠোঁট মিশে গেছে একে অপরের ঠোঁটে, মিষ্টি জিজ্ঞেস করে, কি গো, তুমি কি বাড়িতে বলবে না? 

রাজি না হওয়ার ত সঠিক কোন কারন ছিল না, তাই বিয়ে হতেও সময় লাগে নি বেশি দিন, একটা দুষ্টু ছেলে আর একটা মিষ্টির মত সুন্দর মেয়ে কোল আলো করে... 

এই রে, দেখেছ, এত কিছু আঁকার পর খেয়াল করলাম... ক্যানভাসটা তোমার থেকে ধার করেছি... ফেরৎ দিতে হবে... আচ্ছা ধরো, ক্যানভাসটা যদি ফেরৎ দিয়ে শুধু তোমায় আমার কাছে রেখে দিই? 

বড্ড লোভ হয়। এবুকে তোমার প্রতিকৃতি, ‘এল আমার হারিয়ে যাওয়া, কোন ফাগুনের পাগল হাওয়া’, এ পাগল শুধু আমার।


##########


দোলের দোলা

🟣  অতনু হাজরা

অশোক,পলাশে লাল হয়েছে প্রান্তর।

রঙিন হয়েছে মন।

বাঁশ বনে মর্মর ধ্বনি,

পাতা ঝরানোর কাজ শুরু হয়েছে।

প্রাতে হালকা শীতের আমেজ,

মিষ্টি এক গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।

কচি কাঁচার দল ব্যস্ত রং নিয়ে,

হরিনাম নিয়ে গ্রাম পরিভ্রমণ।

পাড়ায় পাড়ায় বসন্ত উৎসব,

সকলের মনে দোলের দোলা।


##########


দোল ফাগুনের মাঝে


🟣 তাপস কুমার পাল 


সেদিন ছিল দোল পূর্ণিমা----

  সকালের বাসন্তী শাড়িতে

     আর লম্বা চুলের গন্ধে--_-

          আমি একেবারে তোমার পাশে। 

ছিল দুই হাতে লুকানো আবির

  বাসন্তী রঙ ই তোমার পচ্ছন্দ

   তাও আমি জানি। 

হঠাৎ তোমার নরম গাল

  ভরে ওঠে রঙে আমার স্পর্শে। 

রঙে র নেশা য় পূর্ন তোমার হৃদয়----

দুই হাতে ই ছিল তোমার ও রঙ

  লজ্জা না রেখে ই দিলে মাখিয়ে। 

তোমার কালো চুলের রঙ হল বাসন্তী

 দুই পাশে র চুল ও এলোমেলো। 

এক অন্য অপরূপের মাঝে

  তোমাকে কেউ নাই চিনতে পারুক

আমার কাছে তুমি আমার

বহু দিনের চেনা

সুন্দর পৃথিবীর অপরূপ সৃষ্টি। 


##########


...আজ বসন্ত


🟣 অভিজিৎ মিত্র


 সকাল আটটা বাজার ঠিক দু’মিনিট আগে তোমার ফোন। ওপাড় থেকে সেই মিষ্টি মডিউলেশন। ‘উঠে পড়ো, আজ না তোমার পাবলিক লেকচার! যাও দাড়ি কামাও’। কয়েক শব্দে এত ভালবাসা, চুড়ির রিনরিন, উঠতেই হল। ‘মনে হল, যেন পেরিয়ে এলেম অন্তবিহীন...’। ফেব্রুয়ারীর শেষ। পাতাঝরার, মর্মরের, ধূলোর। এক দৌড়ে সিধে ছাদে। লাল শিমূল ফুলগুলো একে একে, পুরো ছাদ জুড়ে। পায়ের কাছে, ফটাস্‌ শব্দে, মাঝে মাঝেই। কি করুণ, কি দারুন। যেন সূর্যের কয়েক টুকরো এ ছাদে। ছাদের গালিচায়, আমার ওপর আকাশ, মাঝে ছাতা হয়ে শিমূল গাছ। মনে হল, ছাদ জুড়ে তুমি। লাল সবুজ শাড়ি। হাওয়া তোমার আঁচল। গাছের পাতারা সূর্যের আলোয় ঝিলমিল, পিনহোল ক্যামেরায় ফটোশুট চলছে। এসেছ? বিড়বিড় করলাম। আলতা পায়ে কেন এলে না? কেন আসো না? আমার হাতে হাত তুলে দিতে আষ্টেপৃষ্ঠে শেকল, রক্তচোখ, না? চোখ বুজলাম। এবার তুমি স্পষ্ট। ‘হৃদয়ে এসে মধুর হেসে প্রানের গান গাহিয়া, পাগল করে দিবে সে মোরে চাহিয়া...’ 

ব্রাশ করতে এসে দরজা খুলতেই হঠাৎ। একদম হঠাৎ। হলুদ টুকটুকে ‘বৌ কথা কও’, কোথায় ছিল, কোন্‌ গাছে কে জানে, একদম আমার সামনে, আমার দক্ষিন ব্যালকনির কার্নিশে, কয়েক সেকেন্ড, তারপর হাল্কা ডানায় ফুড়ুৎ। ও কি কিছু বলে গেল? আবার চোখ বুজলাম। এবার সেই গন্ধ। চেনা, খুব চেনা। হরিন, হরিনের নাভি, ফর্সা খাজুরাহো এক শরীর, শরীরকে আড়াআড়ি গেঁথে তার দিকচিহ্ন, আকাশেও মিষ্টি গন্ধ, চোখের ঘোর। তবুও তুমি পাশে নেই। র-ই-ই-ত-উ-উ জলতরঙ্গ কদ্দূর যায়? তোমার বাড়ির দোতলা অব্ধি? ঐ পাখির ডানার ফ্ল্যাপ, হাওয়া বাড়ছে। এ জীবনের প্রডিগাল ক্যাওস, নাভিগন্ধে আস্তে আস্তে, বহুদূর। ‘বহিছে বসন্তপবন সুমন্দ তোমারি সুগন্ধ হে...’। তোমার কপালে যখন শিমূলের টিপ পরাই, ভালবাসার কাঁপা গন্ধ? অস্বীকার করতে পারবে?

কাজ হল। অনেক হাতের হাততালি। যদিও তোমায় বহুবার, এক ঝলক দেখার জন্য, আমার অবাধ্য চোখ আর ঘাড়। এদিক, ওদিক, নেই। কেন পারো না এক মুহূর্ত, মাঝে মাঝে, ঐ চোখ? দু’পাপড়ি ঠোঁটের হাসি দেখার জন্য আমি আজন্ম চাতক। ‘ভালবেসে থাকো যদি, লও লও এই হৃদি...’

অগত্যা প্রান্তরে এসে সেই পলাশের নিচে। যেন গাছে আগুন। হাঁটছি। শুকিয়ে যাওয়া পলাশলেন। তুমি এখানে রোজ, আমি অফিস থেকে দেখি, জীবনের প্রতি চুমুকে। আজ আমি। পায়ের গভীরে কিছু শব্দ পিষে যাচ্ছে। মাথার ওপর গাছভর্তি নীল দিগন্ত, সুর। কুঁড়ির মাঝে তুমিগন্ধ। কুঁড়ি হাতে মনে হল, পলাশে আঁকা সরু দুচোখ, চোখ হয়ে হৃদ বাষ্প, দানা দানা, ‘তুমি সেকি হেসে গেলে আঁখিকোনে, আমি বসে বসে ভাবি, লয়ে কম্পিত হৃদয়খানি’। প্রায় আধঘন্টা। ক’পা হল? গুনিনি। হাঁটা শেষ হয়ে আসে, ভালবাসায় জড়িয়ে থাকার আকাঙ্খা? ওরে উদাস পাগল, ‘এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে...' 

তুমি আসবে না, তবু। হৃদয় থেকে হারাবার ভয় নেই। কথা দিয়েছ। যেদিন তোমার হাত এবুকে, আমার হাত ওবুকে। লাবডুবে এ জীবনের যদিদং ধূলোভর্তি আলমারি তোমায় দিলাম। চাবির গোছা। শুরু ফাগুনের এই আলো, আকাশ, ধূলো, ঘাস... আমার মুক্তি। কমিউনিকেশনের সবুজগুলো। সবুজ হয়ে ঘাসের দেশ হয়ে দারুচিনি দ্বীপ হয়ে হাঁটতে হাঁটতে বননীড়, আশ্রয়। গভীর। ‘যখন সবাই মগন ঘুমের ঘোরে...’ আমার পেনে ম্যাজিক রিয়েলিজম। দশ বাই দশ। ছোট খাট। বইভর্তি দেয়ালের কোলাজ। ‘আমার নিশীথ রাতের বাদলধারা, এসো হে, গোপনে, আমার স্বপনলোকের দিশাহারা’ আঁচড়গুলো দেখতে পাচ্ছো? আমি তুমি। মাঝে স্পেস টাইম, কেউ না। পঞ্চাশ পঁয়তাল্লিশ বসন্ত পেরিয়ে সেরাতে চাঁদ ডোবে নি। ওমুখ আঁজলায় ধরে অশোকের মৃদু খোঁপায় করবীতে তখন কোন্‌ গান?

‘এসো হে, এসো হে, এসো হে, আমার বসন্ত এসো...’

‘ওর সাথে মোর প্রানের কথা নিশ্বাসে নিশ্বাসে...’