চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

Thief Autobiography চোরের আত্মকথা


 

Thief Autobiography 

 চোরের আত্মকথা


🟣 দিলীপ রঞ্জন ভাদুড়ী


➡️ চোর বলে আমাদের অসম্মান করবেন না। আমাদের আদি পুরুষ স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ, ব্রহ্মা, ইন্দ্রপুত্র জয়ন্ত ও অনেক দেবতা ও অসুর কুল। শ্রীকৃষ্ণ ছোট বেলাতেই মাখন চুরি করে হাত পাকিয়েছে, রাধারানী ও গোপীদের মন চুরি করেছে, ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণের গরু চুরি করেছে, ইন্দ্ররাজ অশ্বমেধের ঘোড়া চুরি করে কপিল মুনির আশ্রমে রেখেছিল, ইন্দ্রপুত্র জয়ন্ত অমৃত কুম্ভ চুরি করেছিল, অসুর বেদ চুরি করে পাতালে লুকিয়ে রেখেছিল। আপনারা তাঁদের পুজো করেন, যজ্ঞ করেন, কীর্তন করেন, অর্চনা করেন। ভেবে দেখুন আমরা অজ্ঞাত কুলশীল নই, আমরা অপরাধ জগতের কুলশ্ৰেষ্ঠ ও আদি পুরুষের বংশধর। অথচ আমাদের কেন আধুনিক সমাজ সম্মান দিতে চায় না, এর কোন ব্যাখ্যা পাই না।

মোগল আমলে ও তারও আগে রাজ আমলে চুরি প্রমান হলে অঙ্গচ্ছেদ বা মৃত্যু দন্ড হত। ব্রিটিশ আমলে পুলিশ সন্দেহ হলেই ধরত, পেটাই করত ও নানা ভাবে অত্যাচার করত। ভারত স্বাধীন হবার পরেও পুলিশ তদন্ত প্রমান না পেলেও অত্যাচার করত। মানব অধিকার রক্ষা কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কোন মর্যাদা ছিল না। মহামান্য জাস্টিস ডি কে বসু এসে আসামী বলে গ্রেপ্তারের নানা বিধি নিষেধ জারি করে আমাদের কিছু রক্ষা কবচ দিলেন। এখন গ্রেপ্তার করলে লিখিত মেমো চাই, অন্তত দুজন সাক্ষী চাই, আত্মীয়, বন্ধু বা পছন্দের উকিল বাবুকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খবর দেওয়া চাই, গ্রেপ্তার করার পর ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে, থানায় মারধর করা চলবে না, কোমড়ে দড়ি বা হাতে কড়া পড়াতে হলে অবশ্যই ডায়েরীতে কারন সহ লেখা বাধ্যতামূলক হয়ে গেল। আমরা কিছুটা সম্মান পেলাম। পুলিশ বাবুদের হ্যাপা বেড়ে গেল। অনেকটা ভিক্ষের দরকার নেই, কুকুর ঠেকাও অবস্থা। 

        উকিল বাবুরা বরাবর আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। ফলে উকিল বাবুরা আমাদের দেবতা ও পরম বান্ধব। খুব কম কেসেই আমাদের সাজা হয়। পুলিশ বাবুরা কি করবেন, চাকরী তো করতেই হবে। তাই কোন প্রমাণ ছাড়াই আমাদের হামেশাই ধরতে হয়। উনাদের কোটা আছে বেশি চুরি কেস হলে কৈফিয়ত দিতে হয়, কত শতাংশ চার্জশিট হল সেটাও ধর্তব্য। তাই উনারাও সমঝোতার পথেই চলে। পুলিশের এগোলেও দোষ পিছলেও দোষ। তাই যতটুকু করা সম্ভব ততটুকুই করেন। 

           সাহিত্য জগতেও আমরা মর্যাদা পেয়েছি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের নিয়ে কবিতা লিখেছেন। সিনেমা জগতে আমাদের শিল্পকলা বহুদিন আগেই ঠাঁই পেয়েছে।

         আমরা এখন পাদ প্রদীপের আলোকে আলোকিত। হামেশাই খবরের কাগজে আমাদের নিয়ে খবর হয়। ইদানিং তালা ভেঙে চুরি সর্বত্র হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। চুরি বিদ্যা এখন শিল্পের পর্যায় চলে গেছে। চুরিতে হিংসার আশ্রয় নিতে হয় না। তবে সমাজে বদনাম রয়ে গেছে। কেউ বলে ছিচকে চোর, কেউ বলে সিঁধেল চোর, কেউ বলে পকেট মার। নাই কামে মা জাতকে আমাদের নাম ধরে গালাগাল দেয় "চোরের মায়ের বড় গলা"।

           অথচ আমাদের জন্য বাণিজ্যর কত উন্নতি হয়েছে, চোর ধরার জন্য সি সি টিভি, এলার্ম মেশিন, মোবাইল ট্র্যাকিং, ফিংগার প্রিন্ট সার্চ গ্লাস, পাউডার, পুলিশ ডগ আরো কত কি!

           একটা সময় ছিল আমাদের জীবনী পুলিশ দপ্তরে যত্ন করে লেখা হত। ওটাকে বলা হত হিস্ট্রি শিট। পুলিশ বাবুরা রাতে আমাদের বাড়িতে আসতেন ও খোঁজ খবর নিয়ে যেতেন। সডারম্যান সাহেব পর্যন্ত আমাদের নিয়ে কলম ধরেছেন। পি আর বি হলো পুলিশের বই। ওখানে লেখা আছে পুলিশ বাবুকে তদন্ত কালে চোরাই মালের বর্ণনা ও তালিকা আলাদা ভাবে নিতে হবে। সেটা আবার মালখানা রেজিস্টারে স্টোলেন প্রপার্টি বলে তুলতে হবে, উদ্ধার হোক বা না হোক। তার রেফারেন্স আবার থাকবে খতিয়ানে। দেখুন, আমরা কর্ম দিবস তৈরীর কারিগর। চুরি বন্ধ করার জন্য কত আইন যে করা হয়েছে। আই পি সি, সেলস এ্যাক্ট ( চোরাই মালের স্বত্ব), পেটেন্ট এ্যাক্ট, ইত্যাদি। আজকাল, কি চুরি হয়না। রেল ওয়াগন থেকে মাল, গরু, কয়লা, লোহা, চাল, দেব দেবীর মূর্তি, বন্য সম্পদ,পাখী এমন কি মেধা। চুরি বিদ্যা মহাবিদ্য যদি না পড়ে ধরা। তবে অহিংস ও মেধা সম্পন্ন।

 'চোরের আত্মকথা' একটি রম্যরচনা
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার ও আইনজীবী ।