Psychological facts about LOVE
"মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রেম"
Sangbad Prabhati, 13 February 2023
🟣 ডা: দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায়
"প্রেম", পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র অনুভূতি৷ সর্বাধিক চর্চিত ও দোলা দেওয়া বিষয়৷ আদম -ইভের আমল থেকে বা কামদেবের ইচ্ছায় মানুষের মধ্যে এবং প্রাণীকুলের সৃষ্ঠি থেকে প্রতিটি জীবের মধ্যে চলে আসছে৷ এর মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে সৃষ্টি৷ বিশ্বের সব ভাষায় এ পর্যন্ত যত গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক থেকে সিনেমা হয়েছে বেশীর ভাগই প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে৷ তাই, ভুলেও ভাববেন না আমি এখানে আবার তার চর্বিত চর্বন করতে বসেছি।
আমি পেশাদার চিকিৎসক ও একজন মনোবিদ হিসাবে এই আলোচনা করছি শুধু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে৷ বিজ্ঞানের সাধারণ পড়াশুনা থাকা ছেলেমেয়েরাও জানে জীবের সবকিছুর মাঝেই বিভিন্ন হরমোন ও রাসায়নিকের খেলা৷ প্রেম ও ভালোবাসা হলো মস্তিষ্কের থ্যালামাসের এই রকমই এক রাসায়নিক অবস্থা। নিউরোট্রান্সমিটার, ডোপামিন, সেরেটোনিন, নরেপিনেফ্রিন হরমোনের কাজের ফল৷ এসব বুঝতে এখন অনেক রাসায়নিক বিশ্লেষণ ও যন্ত্রপাতি কাজে লাগানো হয়েছে৷ যেমন কোন প্রেমিক বা প্রেমিকার সামনে তার ভালোবাসার মানুষের ছবি দেখিয়ে মস্তিষ্কের ফাংশনাল এম আর আই ( FMRI) করে দেখা গেছে তাদের মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল ও কডেট অংশ উদ্দীপিত হচ্ছে এবং প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নিঃসৃত হচ্ছে৷ আরো দেখা যায় অক্সিটোসিন ও ভেসোপ্রেসিন হরমোনের কারিকুরি। শুধু প্রেমে পড়াই নয় তাকে টিকিয়ে রাখতেও মূল ভূমিকা হরমোনের৷ গ্রাহক অর্থাৎ রিসেপ্টর জিনে ভেসোপ্রেসিন হরমোন বেশী থাকলে তা পুরুষের একগামী মনোবৃত্তিকে বোঝায়৷ বিজ্ঞানীরা ভেসোপ্রেসিনের প্রবাহ রোধ করে একগামী (একজন সঙ্গিনী যার) ইঁদুরকে বহুগামী এবং বেশী মাত্রায় ভেসোপ্রেসিন দিয়ে বহুগামী ইঁদুরকে একগামী করতে সমর্থ হয়েছেন৷ অক্সিটোসিন হরমোনকে বলে Love Hormone.
প্রেমিক/প্রেমিকা বা প্রিয়জন (ভালোলাগার যেকেউ) কাছাকাছি এলে এই হরমোন শরীরে উৎপন্ন হয়৷ এরফলে আমরা আনন্দ ও রিল্যাক্স অনুভব করি ৷ প্রেম হলো দুই স্নায়ু তন্ত্র (Nervous System) এর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ভালোবাসার তিন পর্যায় কামনা, ভালোলাগা ও আনুগত্য। অক্সিটোসিন ও ভ্যাসোপ্রেসিন হরমোন অধিক নিঃসৃত হওয়ায় মস্তিষ্কে নিরাপত্তা ও স্থিতির অনুভূতি তৈরী হয়। এরফলে ওই সঙ্গীর সঙ্গেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কামনায় এড্রেনালিন ও নরপিনেফ্রিন হরমোন বেশী পরিমানে বের হয়৷ তাই, হৃপিন্ডের গতি বৃদ্ধি পায় ও হাতের তালু ঘামতে থাকে। ডোপামিনও বেড়ে গিয়ে ড্রাগ নেওয়ার মত উচ্ছ্বাসের অনুভূতি হয়। মরফিন যেমন ব্যথা কমায় প্রেমে পড়লে এজন্য শরীরে তাই ব্যথার অনুভূতি থাকে না। একে অপরকে আলিঙ্গন বা হাগ করলে শুধু মনের নয় দেহের ব্যথাও কমে যায়। মাথার সুখ কেন্দ্র বা প্লেজার সেন্টারে রক্ত সরবরাহ বেড়ে যায় যদি দুজনে একত্র হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারের মত প্রেমাসক্ত পুরুষ / মহিলা একগুঁয়ে হয়ে পড়ে। ওই রোগে যেমন সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা কমে যায় তেমনি হয় প্রেমে পড়লে৷ একে অন্যের মাঝে কোন খুঁত দেখতে পায় না৷ সঙ্গী/সঙ্গীনির সব কাজই খুব পছন্দ হয়। যাঁরা সঙ্গী/সঙ্গীনী পায় তাদের মন সবসময় আনন্দময় থাকে এবং নিজেরা ঠান্ডা থাকে। ফেরমোন এমন এক হরমোন যা বিপরীত লিঙ্গের মানুষ/প্রাণীকে আকর্ষণ করতে ভূমিকা গ্রহণ করে। ভালোবাসা এমন এক যাদু এর ছোঁয়ায় বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন এমনকি হার্ট এটাক হতে পারে না৷ তবে , ভালোবাসার সব কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও দেওয়া যায় নি৷ যেমন যদি কেউ তার সঙ্গীর সাথে মাত্র চার মিনিট একটানা চোখে চোখ লাগিয়ে থাকে তবে দেখা গেছে দুজনের হৃস্পন্দন একই গতিতে চলছে ! হয়তো, ভবিষ্যতে জানা যাবে এর বা ভালোবাসা সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানের আরো অনেক কারণ৷ এই পর্যন্ত এখন থাক৷ পরে আরো আলোচনা করবো৷ লেখাটি থেকে আমার রোগীদের বা বন্ধুদের কারো উপকার হলে চিকিৎসক হিসাবে নিজেকে সার্থক মনে করবো৷
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ : ৯৭৩২২১৭৪৮৯