Dimensional diversity fair
খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি ও প্রাণী বিকাশ উৎসব উদযাপন
জগন্নাথ ভৌমিক, শ্রীরামপুর : বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ২২ তম বর্ষ খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি উৎসব শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাণী সম্পদ বিকাশ সপ্তাহ উদযাপনেরও সূচনা হয়েছে। জেলা ও ব্লক স্তরের এই অনুষ্ঠান ঘিরে প্রাণী পালকরা উজ্জীবিত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এবং রাজ্যের প্রাণীসম্পদ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে ২২ বছর ধরে খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি উৎসব আয়োজিত হচ্ছে।
২৫ ডিসেম্বর পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কোবলা বাঁশদহ বিল ও চাঁদের বিল এলাকায় উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের মন্ত্রী বেচারাম মান্না, প্রাণীসম্পদ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, মেন্টর উজ্জ্বল প্রামানিক, ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যানিমেল অ্যান্ড ফিসারি সাইন্স ডীন ডঃ তপন মন্ডল, মৎস্য দপ্তরের অধিকর্তা তাপস পারিয়া, জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক, তপন চট্টোপাধ্যায়, শিল্পপতি সুশীল মিশ্র, জেলা পরিষদের কো-মেন্টর অধ্যাপক আবুল হাশেম মন্ডল, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রাম শংকর মন্ডল, উৎসব কমিটির সভাপতি বিভাস বিশ্বাস, সম্পাদক তথা পূর্বস্থলি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মাম্পি রুদ্র, মেহেবুব মন্ডল, মহঃ ইসমাইল, মিঠু মাঝি সহ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা। এদিনের অনুষ্ঠানে কচুরিপানার তৈরি ফুলদানিতে শাপলা ফুল, উত্তরীয় ও মেমেন্টো দিয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়।
উলেখ্য এলাকার উন্নয়নের কান্ডারী তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, একসময় এই বিস্তীর্ণ জলাশয় দুরাবস্থায় পড়ে ছিল। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টায় এবং সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় বাঁশদহ বড় কোবলা, বিদ্যানগর এখন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। সংস্কারের পর ভাগীরথী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত এই পাঁচ কিলোমিটার জলাশয় এখন পূর্ণাঙ্গ আকার পেয়েছে। আগামীদিনে ইকো টুরিরিজম গড়ার চিন্তাভাবনা চলছে। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া চুনো মাছ, আবার পাওয়া যাচ্ছে। এই বিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষদের অনেকেই রুটি রুজির পথ খুঁজে পেয়েছেন। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ আরও জানান, বিলের জলে গজিয়ে ওঠা কচুরিপানা থেকে জৈব সার তৈরির পাশাপাশি কচুরিপানা থেকে হস্তশিল্পের সামগ্রী তৈরির প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
এদিন উদ্বোধকের ভাষণে রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি ও প্রাণী পালন উৎসবের ভূয়ষী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অনেক সোসাইটি দেখেছি, কিন্তু খাল বিল নিয়ে যে সোসাইটি হতে পারে ভাবতেই পারছি না। অনেক উৎসবের থেকে এই উৎসব একেবারে অন্যরকম। তাই স্বপন বাবুকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
শ্রীচৈতন্যের পদধূলিতে ধন্য নবদ্বীপ এবং শ্রীরামপুর অঞ্চলের বিদ্যানগর সহ বিস্তৃত এলাকা আজ উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেই ইতিহাস ও খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি সবমিলিয়ে একটি সুন্দর স্মরণিকা প্রকাশ করেন রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী। উপস্থিত অতিথিদের হাতে সেই স্মরণিকা তুলে দেওয়া হয়।
উৎসবে অতিথি অভ্যাগতদের আপ্যায়নের জন্য ছিল হরেক রকম ব্যবস্থা। সকালে শীতের মিঠেকড়া রোদে দাঁড়িয়ে ভাপা পিঠে, পাটিসাপটা পরে লাল চা। সমগ্র অনুষ্ঠানের আমেজের সঙ্গে এক অন্য অন্যভূতি। ভোজের আয়োজনে হরেক রকমের চূনো মাছের সঙ্গে অন্যান্য মাছের পদ। দুপুরে সাদা ভাতের সঙ্গে পালংশাকের চচ্চড়ি, ডাল, আলু ফুলকপির তরকারি, চুনোমাছ ভাজা, মাছের ঝাল, মাছের কালিয়া, টমেটোর চাটনি, নলেনগুড়ের পায়েশ। সব মিলিয়ে তৃপ্তির মধ্যাহ্নভোজন। পাশাপাশি হরিনাম সংকীর্তন ও বাউলের ছন্দে সুর মুর্ছনায় কঠিন হৃদয়ও শান্তি মৈত্রী ও প্রেমের জোয়ারে ভাসমান।
অন্যদিকে গ্রামবাসীরা জানান, এই উৎসবকে ঘিরে দূরদূরান্ত থেকে মেলায় ও পিকনিক করতে আত্মীয় স্বজন ও অন্য জেলা থেকেও মানুষরা আসেন এখানে। আছে নৌকা বিহারের ব্যবস্থা।