চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

Centenary celebration of Primary School মহাসমারোহে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন, উপস্থিত রাজ্যের মন্ত্রী সহ বিশিষ্ট জনেরা


 

Centenary celebration of Primary School 
মহাসমারোহে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন, উপস্থিত রাজ্যের মন্ত্রী সহ বিশিষ্ট জনেরা 


অতনু হাজরা, জামালপুর : পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম ৩২ বিঘা। এই গ্রামেই রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়টি দেখতে দেখতে আজ শতবর্ষের গণ্ডি পার করেছে। ১৯২০ সালের ৩০ শে অক্টোবর এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। যদিও দু'বছর আগে শতবর্ষ পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু করোনার কারণে করা যায়নি কোন শতবর্ষের অনুষ্ঠান। তাই ২০২২ সালে এসে বিদ্যালয় এবং সকল গ্রামবাসী মিলে সাড়ম্বরে উদযাপন করলো বিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠান। আজকে এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তিনি ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা রায়নার বিদায়িকা শম্পা ধাড়া, জামালপুরের বিধায়ক অলক কুমার মাঝি, জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান, জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মিঠু মাঝি, জামালপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান ডলি নন্দী, উপপ্রধান সাহাবুদ্দিন মন্ডল, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাপ্পাদিত্য মুখার্জী সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

 সকালে একটি বর্ণাঢ্য প্রভাত ফেরীর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। প্রচুর গ্রামবাসী পা মেলান এই প্রভাত ফেরীতে। পরে বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ের অনুষ্ঠানে এখানে এসে উপস্থিত হন রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপস্থিত অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয় এবং সম্মাননা হিসেবে একটি স্মারক দেওয়া হয়। 

প্রদীপ প্রজ্জলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার সহ উপস্থিত অতিথিরা। ১০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয় একটি স্মরণিকা "কলতান"। বইটির প্রকাশ মন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিদের হাত দিয়েই করা হয়। 

রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপবাবু বলেন, তিনি নিজে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছেন প্রত্যন্ত একটি গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে আসতে পেরে। তিনি তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনিই বিপ্লবী রাবিহারী বসু, রাসবিহারী ঘোষের নাম করেন। বিদ্যালয় এর অনুষ্ঠানে এসে তিনি রাজ্য সরকার ২০১১ সাল থেকে ক্ষমতায় আসার পর আজ পর্যন্ত শিক্ষার জন্য কি কি করেছেন তার একটা খতিয়ান তুলে ধরেন। ৩৫০ টি মহাবিদ্যালয়, প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় ও ২১ লক্ষ শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়েছে। ২০২১ ও ২০২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা খাতে ৯৪৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। দুস্থ অথচ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা, রাজ্য সরকারের স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ, সবুজ সাথীর সাইকেল, শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড সহ সকল প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন তিনি। শুধু তাই নয় গ্রামোন্নয়নে বর্তমান রাজ্য সরকার কি করেছেন তার খতিয়ানও দেন তিনি। এই ১১ বছরে ১ লক্ষ ৩ হাজার কিমি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। গ্রামের মহিলাদের স্বয়ং সম্পূর্ণ করার জন্য লক্ষ্মী ভান্ডার, কৃষকদের জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্প যা আজ বাড়িয়ে ১০ হাজার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

শম্পা ধাড়া তাঁর বক্তব্যে বলেন স্কুল শিক্ষায় অনেক উন্নতি করেছে রাজ্য সরকার। ছাত্র ছাত্রীদের পোশাক, পায়ের জুতো থেকে শুরু করে বই খাতা সবই দেওয়া হচ্ছে। আর কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুফল আজ হাতে নাতে পাওয়া যাচ্ছে। মাধ্যমিক - উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে মেয়েদের সংখ্যা কিভাবে বাড়ছে। অলক মাঝি বলেন গ্রামের একটি স্কুল ১০০ বছর পার করলো এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এলাকার মানুষ প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী সকলকেই এগিয়ে এসে এই স্কুলে ভালো-মন্দের দায়িত্ব নিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্কুলগুলির পরিকাঠামোই বদলে গেছে। 

মেহেমুদ খান বলেন তিনি নিজে এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তার বিদ্যালয় দেখতে দেখতে একশ বছর পার করেছে এটা ভাবতেই তিনি রোমাঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে ধন্যবাদ জানান যে এই প্রথম ৩২ বিঘায় কোন মন্ত্রী পা রাখলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি তত্ত্বাবধান করেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান। শতবর্ষের এই অনুষ্ঠানে থাকছে বসে আঁকো, কুইজ, আবৃত্তি সহ নানা প্রতিযোগিতা। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মঞ্চস্থ হবে নাটক। দু'দিন ধরে চলবে এই অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দায়িত্বে আছেন সুরমান আলী মল্লিক। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সঞ্চালনা করেন শ্যামাপ্রসাদ চৌধুরী ও শেখ জাহাঙ্গীর।