চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

কেমন হলো কার্নিভালের শোভাযাত্রা, পুরসভার চেয়ারম্যান মঞ্চ ছাড়লেন কেন ? জানতে হলে ক্লিক করুন



কেমন হলো কার্নিভালের শোভাযাত্রা, পুরসভার চেয়ারম্যান মঞ্চ ছাড়লেন কেন ? জানতে হলে ক্লিক করুন 


ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, সংবাদ প্রভাতী : দুর্গাপূজাকে ইউনেস্কো-র 'ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ'-এর স্বীকৃতি ও শারদোৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে কলকাতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শহর বর্ধমানে সেরা দুর্গা প্রতিমাগুলির বিসর্জন উপলক্ষে  ৭ অক্টোবর বিকেল থেকে ‘দুর্গাপূজা কার্নিভাল' অনুষ্ঠিত হলো। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে লাখো মানুষ রাস্তার দু'ধারে শোভাযাত্রার প্রর্দশনী উপভোগ করেছেন। বাংলার দুর্গাপূজা আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করায় সার্বিকভাবে এবারের দুর্গা পূজা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক ও ভাবনায় অভিনবত্ব এনেছিল। এদিনের মা কার্নিভালের ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন বলিউড তারকা চাঙ্কি পান্ডে।

 উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, জেলা শাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন,  সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু, বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার, অতিরিক্ত জেলা শাসক সুপ্রিয় অধিকারী, মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস, তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সুনীল মন্ডল, বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক খোকন দাস, জামালপুরের বিধায়ক অলক কুমার মাজি, বর্ধমান বাজেপ্রতাপপুর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান স্বামী অজ্ঞেয়ানন্দজী মহারাজ, পূর্ব বর্ধমান জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলর রাসবিহারী হালদার, জেলা পরিষদের মেন্টর উজ্জ্বল প্রামাণিক, বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি কাকলি তা গুপ্ত, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রাম শংকর মন্ডল, জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাচিক শিল্পী কল্লোল কোনার ও সুদীপা সরকার।

এই প্রথম বর্ধমান শহরে মনোনীত ৩১ টি  পুজো কমিটি নিয়ে মা কার্নিভাল শীর্ষক শোভাযাত্রা আয়োজিত হয়। বীরহাটা থেকে গোলাপবাগ মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু পাশে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। পুরুলিয়ার ছৌনৃত্য, লোকনৃত্য, আদিবাসী নৃত্য, ডান্ডিয়া নাচ, কাঠি নাচ সহ হরিনাম সংকীর্তনে মাতোয়ারা হয়েছিল বর্ধমানের প্রাণ কেন্দ্র কার্জন গেট সহ শহরে গোটা জি টি রোড।

 রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্প মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরার সঙ্গে সবুজায়ন, প্লাস্টিক বর্জন সহ জনসচেতনতামূলক নানা বিষয়ে এক অন্যমাত্রা পেয়েছিল কার্নিভালের শোভাযাত্রা। তবে কার্নিভালের আকর্ষণ  বেড়ে গিয়েছিল মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডের উপস্থিতি ও ঢাকের তালে নাচ। এককথায় দর্শকদের মন জয় করে নেন।

তবে ক্ষোভ বিক্ষোভও নজরে এসেছে। স্বয়ং বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে কার্নিভাল চলাকালীন মঞ্চ থেকে নেমে চলে যান। পরেশবাবু মঞ্চ থেকে নেমে আসতেই সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘খুবই ভালো অনুষ্ঠান হচ্ছে, সব কিছুই ঠিক আছে। তবে এই বয়সে এসে কোন অন্যায় দেখলে আর প্রতিবাদ না করে থাকতে পারিনা। পুরসভা কয়েকলক্ষ টাকা খরচ করেছে। এই দু মাস ধরে পুজো কে কেন্দ্র করে, কয়েকদিন ধরে কার্নিভাল কে কেন্দ্র করে যেভাবে আমাদের পুরকর্মীরা কাজ করেছেন সেখানে এত লক্ষ মানুষের সামনে একবারও কি তাঁদের সম্মান জানানো যেতো না? এইটুকু পাবার কি তাঁরা যোগ্য নয়? একবারও কি বর্ধমান পুরসভার নাম নেওয়া যেত না। সেই জায়গা থেকেই আমি আমার ক্ষোভের কথা জানিয়ে নেমে এসেছি।’

তবে কার্নিভালের সুষ্ঠু শোভাযাত্রার জন্য জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন -কে কুর্নিশ জানাতেই হয়। মে ভাবে তিনি নিজে রাস্তায় নেমে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁর পুরো টিম নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার তদারকি করেছেন। পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন বলেন, ‘জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা সমস্ত রকমের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি, একই সঙ্গে সিসি ক্যামেরায় নজরদারি রাখা হয়েছে। যাতে কোথাও কোন সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। জরুরি পরিষেবার গাড়িগুলোকে দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।’ 

জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘আমরা ১ সেপ্টেম্বর থেকেই পুজোর শুরু করে দিয়েছি। আর কার্নিভালের মাধ্যমে এবারের পুজোর শেষ হবে। বাংলার সৃষ্টি ও কৃষ্টিকে এদিন বিভিন্ন পুজো কমিটি যেভাবে তুলে ধরছেন তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’

৩১ টি পুজো কমিটি এই মা কার্নিভাল ২০২২ এ অংশ নিয়েছে। ৭ অক্টোবর বিকেল ৫ টায় বড়নীলপুর সৎ সঙ্ঘ আশ্রমের সামনে থেকে কার্নিভালের সূচনা হয়। কার্জন গেটের সামনে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। কার্নিভালের শোভাযাত্রা বড়নীলপুর থেকে শুরু হয়ে বীরহাটা, কার্জন গেট, স্টেশন হয়ে পাঞ্জাবি পাড়া মোড় পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। এরপর অনেকেই কমলসায়রে প্রতিমা বিসর্জন করেছেন।

কার্নিভালের শোভাযাত্রায়  অংশ নিয়েছিল বহিলাপাড়া অদ্বিতীয়া মহিলা কল্যাণ সমিতি, আমরা সবাই মহিলা কমিটি, লালটু স্মৃতি সংঘ,  সবুজ সংঘ, ইছলাবাদ পদ্মশ্রী সংঘ,  ইছলাবাদ কিরণ সংঘ দুর্গাপূজা কমিটি, বড়শুল জাগরণী সংঘ, পারবীহাটা সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি,  পাওয়ার হাউজ পাড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, চৌরঙ্গী ক্লাব, ২ নম্বর শাঁখারী পুকুর সর্বজনীন দুর্গাপূজা, বালাজি হাউজিং কমপ্লেক্স দুর্গোৎসব কমিটি, কেশবগঞ্জ বারোয়ারি দুর্গোৎসব, সদরঘাট কালীতলা বারোয়ারি দুর্গাপূজা কমিটি, কাঞ্চননগর দূর্গা পূজা সমন্বয় সমিতি, রথতলা দূর্গা পূজা সমন্বয় সমিতি

 মাতৃ সংঘ, সর্বমিলন সংঘ দূর্গা পূজা কমিটি, খালুইবিল গুডশেড দুর্গাপূজা কমিটি, গোদা দুর্গাপূজা সমন্বয় সমিতি, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড দূর্গা পূজা সমন্বয় সমিতি, ন্যাচারাল সিটি দূর্গা পূজা কমিটি, ভদ্রপল্লী সর্বজনীন দূর্গা উৎসব কমিটি, পাড়া পুকুর পূজা কমিটি, বুড়ীর বাগান সর্বজনীন পূজা কমিটি, আলমগঞ্জ বারোয়ারি, জোড়া মন্দির দুর্গাপূজা কমিটি, শ্যামলাল সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, তেঁতুলতলা দুর্গাপূজা কমিটি।