বর্ধমানে সাংবাদিক ও তাঁর পরিবারের উপর হামলায় আসামীদের জামিনের পুট-আপ গ্রহণ করলেন না বিচারক
ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, সংবাদ প্রভাতী : বর্ধমানের বড়নীলপুরে সাংবাদিক ও তাঁর পরিবারের উপর দুষ্কৃতি হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ ক্রমশঃ জোরালো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সর্বভারতীয় সাংবাদিক সংগঠন ইণ্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন এর পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির তরফে জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন-কে ডেপুটেশন দিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে। প্রতিবাদে মুখর হয়ে পথে নেমেছেন বাউল গানের শিল্পী। এছাড়াও বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী সহ অনেকেই সাংবাদিকের উপর দুষ্কৃতি হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিষয়টি প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া'র দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে আইজেএ।
উল্লেখ্য দুর্গোৎসবে মহানবমীর রাতে বড়নীলপুর বাজার নিবাস ময়দান এলাকার বাসিন্দা "রিপাবলিক বাংলা"র সাংবাদিক সন্তোষ দাস এবং তাঁর পরিবারের সদস্য দের উপর একদল দুষ্কৃতী প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে বলে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সন্তোষ দাস অভিযোগে জানিয়েছেন, '৪ অক্টোবর রাতে পাড়ার পুজো মণ্ডপে যখন তাঁর ভাই অন্যান্যদের সঙ্গে বসে ছিল, সেই সময় পাড়ারই বাসিন্দা তন্ময় ঘোষের সঙ্গে কিছু কথা কাটাকাটি হয়। তখনই তন্ময় ফোন করে পরিমল ঘোষ ও অন্যান্যদের বিষয়টি জানায়। এরপর পরিমল আট দশজনকে নিয়ে এসে তাঁর বাড়িতে ঢুকে রড, লাঠি, বাঁশ নিয়ে হামলা চালায়'। সন্তোষ জানিয়েছেন, 'ঘটনার শুরুর সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। খবর পেয়ে ছুটে আসেন। দুষ্কৃতীরা তার ভাইকে মারধোরের পাশাপাশি তার স্ত্রী এবং মাকেও মারধর করেছে। বাড়ির মেয়েদের চুলের মুঠি ধরে টানাটানি করেছে। দুষ্কৃতীরা যখন তাণ্ডব চালাচ্ছিল সেই সময় তিনি বাড়িতে এসে হামলাকারীদের বোঝাতে গেলে তাঁকেও পেটে, বুকে, মুখে ঘুষি মারে। দৌড়ে পাড়ার ক্লাবে গেলে দুষ্কৃতীরা ক্লাবেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এই সময় পাড়ার মহিলারা প্রতিবাদ করে এগিয়ে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়'।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত পরিমল ঘোষ একজন দাগী অপরাধী। এর আগেও একাধিকবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ মদের কারবার, মাদক দ্রব্যের কারবার থেকে চুরি, ছিনতাই এর মত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এই ব্যক্তি। মাঝে মধ্যেই শাসক দলের মিছিল মিটিংয়েও এই দুষ্কৃতিকে দেখা যায় বলে অভিযোগ। এমনকি কয়েকবছর আগে বর্ধমান থানার পুলিশ এই এলাকায় অভিযানে গেলে পুলিশের উপরেও হামলা চালানোর অভিযোগও ছিল এই পরিমল ঘোষের বিরুদ্ধে। স্থানীয় এলাকার মানুষও পরিমল ঘোষকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে ক্লাব ভাঙচুরের প্রতিবাদেও এলাকার মানুষ যৌথভাবে বর্ধমান থানায় অভিযোগ জমা করেছেন।
এদিকে নবমীর রাতে বর্ধমানের নীলপুর বাজার এলাকার ঘটনায় অভিযুক্ত পলাতক ৮ জন জামিন চেয়ে মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে পেশ করা পুট-আপ গ্রহণ করলেন না মাননীয় বিচারক ছন্দা হাসমত। মঙ্গলবার আসামি পক্ষের উকিল পুলক মুখার্জী পলাতক আসামী পরিমল ঘোষ, নির্মল ঘোষ, অতনু ঘোষ, ঋজু জামাই, কার্তিক ঘোষ, কালু গুহ, দীপক গুহ ও মঙ্গল দাস যাদের সকলের বাড়ি বড়নীলপুর ঘোষপাড়া এলাকায় সকলকে আদালতে আত্মসমর্পন করিয়ে জামিন চেয়ে পুট-আপ দাখিল করেন। যদিও এই মামলার এদিন ডেট ছিল না। পরবর্তী তারিখের আগেই এদিন মামলার শুনানির জন্য ও বাকি আসামিদের জামিন চেয়ে পুট-আপ দাখিল করা হয়েছিল বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য বর্ধমান থানা কেস নং – ১১৫০/২০২২ এই মামলায় অভিযুক্ত দুজনকে বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনার দিন রাতেই গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, মহিলাদের উপর হামলা, বিপজ্জনক একাধিক অস্ত্র নিয়ে সংগঠিত ভাবে হামলা চালানোর ধারায় মামলা করে গত ৫ তারিখে আদালতে পেশ করেছিল। পুলিশ ঘটনার তদন্তের স্বার্থে এবং বাকি আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে ও হামলার সময় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আসামিদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল আদালতে। আদালত চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও চার দিনে পুলিশ বাকি আসামিদের ধরতে পারেনি। তারা নাকি পালিয়ে গিয়েছিল।
এরই মধ্যে চারদিন পর অর্থাৎ গত ৯ অক্টোবর ধৃত দুজনকে ফের আদালতে পেশ করা হলে আদালত দুই অভিযুক্তকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দিয়ে দেন। এরপরই মঙ্গলবার এফআইআর এ নাম থাকা বাকি আসামিরা বর্ধমান আদালতের সিজেএম কোর্টে সশরীরে হাজির হয়ে যায়। আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, এই মামলায় যেহেতু দুজন কে ইতিমধ্যেই জামিন দেওয়া হয়েছে, তাই একই ফুটিং-এ বাকিদের জামিন দেওয়া হোক। এই মর্মে আবেদন জানিয়ে আসামি পক্ষের উকিল একটি পুট-আপও জমা করেন আদালতে। বিচারক আসামি পক্ষের উকিল, সরকারি আইনজীবী ও অভিযোগকারীর উকিল বাবুর সওয়াল জবাব শোনার পর আসামিদের পুট-আপ টি গ্রহণ করেননি। ফলে এদিন জামিনের কোনো শুনানি হয়নি।
অভিযোগকারীর আইনজীবী সুমিত রায় এই পুট-আপের বিরোধিতা করে আদালতকে এদিন জানান, অভিযোগকারী এখনও চিকিৎসার জন্য নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন। এমতবস্থায় আসামিদের জামিন দিলে মামলার সঠিক বিচার হবে না। এরপরই আসামিরা পুট আপ টি ফেরত নিতে বাধ্য হয়। এদিকে অভিযোগকারী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ১০- ১২জন গুন্ডা সংগঠিতভাবে রড, লাঠি, বাঁশ নিয়ে আক্রমন চালালো বাড়িতে ঢুকে। মহিলাদের মারধর করা হল। পাঁচজনের মাথায় চোট লাগলো। প্রত্যেক কে হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমে চিকিৎসা করতে হল। পুলিশ খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করলো। তারপরেও ঘটনার ৭দিন পেরিয়ে গেলেও দুজন ছাড়া বাকি অপরাধীদের ধরতে পারলো না! এদিকে দুষ্কৃতীরা বহাল তবিয়তে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলেই এলাকার মানুষ জানতে পারছেন। এমনকি যেহেতু এই মামলায় দুজনের ইতিমধ্যে জামিন হয়েছে তাই একইভাবে জামিন চেয়ে বাকি আসামিরাও পুলিশের চোখের সামনেই খোদ সশরীরে হাজির হয়ে গেল আদালতে। তারপরেও পুলিশ আসামিদের পলাতক বলে আদালতে রিপোর্ট পেশ করছে! তবে যেহেতু অভিযোগে নাম থাকা আসামিরা এই মামলায় জামিন পেলনা সেক্ষেত্রে এখন আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের আর কোন বাধাও রইল না বলেই অভিযোগকারী ও তার পরিবারের সদস্যরা মনে করছেন।
তথ্য সূত্র : ফোকাস বেঙ্গল