চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

অনুব্রত নয়, আউসগ্রাম মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে তৃণমূলের  সাংগঠনিক দায়িত্বে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়


 

অনুব্রত নয়, আউসগ্রাম মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে তৃণমূলের  সাংগঠনিক দায়িত্বে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় 


মোল্লা জসিমউদ্দিন, মঙ্গলকোট 


অনুব্রত আর নয়, এবার থেকে দায়িত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। ২৫ আগস্ট রাতেই তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দেয় বোলপুর লোকসভার অধীনে পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম - কেতুগ্রাম - মঙ্গলকোটের সাংগঠনিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট জেলা সভাপতির অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা  সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়-এর হাতে দেওয়া হলো। কাটোয়ার বর্ষীয়ান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এই দায়িত্ব পাওয়ায় মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমাত্রা এসেছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে -  'বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডল যেভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই - ইডির মামলায় অভিযুক্ত রয়েছেন, সেখানে আপাতত জেলমুক্তি সম্ভব নয়। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে এই রদবদল ঘটানো হলো '। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকা অনুব্রত মন্ডলের 'সেকেন্ড হোম' বলা যায়। অনুব্রতের পৈতৃক বাড়ি মঙ্গলকোটের সীমান্তবর্তী নানুরের হাটসেরান্ডিতে। মঙ্গলকোটের বর্তমান বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর জন্য সমস্ত কিছু করেছেন অনুব্রত। এইরকম নানান রাজনৈতিক অধ্যায় জানা যায় মঙ্গলকোটের বুকে। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল ঘটলেও সিপিএমের শাহজাহান চৌধুরী জিতেছিলেন। তাই সেই সময়কার পরাজিত তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরী-কে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি করে পুনর্বাসন দেন অনুব্রত। তৃণমূলের তখনকার ব্লক সভাপতি প্রণব মন্ডল দলের এহেন আচরণে দুঃখ পেয়ে হঠাৎই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এই প্রণব মন্ডলকে বাম জমানার 'কমরেড' পুলিশ অফিসারদের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। 'সুখপায়রা' নেতারা অবশ্য তৃণমূল সরকার আমলে  স্থানীয় থানার পুলিশের পূর্ণ সহযোগিতায় এলাকার 'নয়নমণি' হয়ে উঠেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ছিল গতবারের পরাজিত প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরীই দলীয় টিকিট পাবেন। তবে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের হিসাব-নিকাশে মঙ্গলকোটে প্রার্থী করা হয়েছিল সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী জিতে রাজ্যের মন্ত্রী হন। তবে মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক রাশ নিয়ে অনুব্রতের হিটলিস্টে চলে আসেন সিদ্দিকুল্লাহ। দলীয়  কর্মী সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হওয়া থেকে, বিধায়ক অফিসে বোমাবাজি,  একের পর এক সিদ্দিকুল্লাহ অনুগামীদের গাঁজার মামলায়  জড়ানো হয়। সবই নাকি অনুব্রতের ইশারায়।পরিস্থিতি এমনও হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের (২০১৮) দলীয় প্রতীক নিয়ে সুব্রত বক্সি,  ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে বৈঠক চলেছে। মনোনয়ন দাখিলের দিন কাটোয়ায় সিদ্দিকুল্লাহের নিকটাত্মীয় রক্তাক্ত হয়েছিলেন।  তবুও নাছোড়বান্দা ছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে মঙ্গলকোটের কৈচরে খুন হন তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল  সভাপতি তথা সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ডালিম দেখ। এই খুনে একদা অনুব্রত মন্ডলের দু'চোখের বালি বিকাশ চৌধুরী (একদা তৃণমূলেরই জেলাপরিষদ সদস্য) গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। এখনও জেলেই রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এই খুনে এফআইআর কপিতে অভিযুক্ত হন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর এক ভাই। এই মামলাতেই গুটিয়ে যান সিদ্দিকুল্লাহ। মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক ময়দান অটুট রাখতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাপেক্ষা গুরত্বপূর্ণ বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কেননা পুলিশের পোস্টিং নাকি 'স্যার' অনুব্রত করতেন। এই রকমই জানা যায় পুলিশের একাংশ থেকে।  ঠিক এহেন পরিস্থিতিতে চলতি মাসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হলেন অনুব্রত মন্ডল। দু'দফায় সিবিআই হেফাজত এরপর বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন অনুব্রত। গত বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বীরভূমের অনুব্রত মন্ডলের হাতে থাকা পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম ও কেতুগ্রাম  বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক দায়িত্ব তুলে দিল কাটোয়ার বর্ষীয়ান বিধায়ক তথা পূর্ব জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এর 'হাতে'। কে এই রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ?  ২০১৫ সালের আগে পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের একজন দক্ষ সংগঠক এবং বিধায়ক - কাটোয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। এখনো বিধায়ক আছেন রবিবাবু। সময় অনেক কিছুরই উত্তর দেয় ! হ্যাঁ, ২০১৫ সালে কাটোয়া পৌরসভা নির্বাচনে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এর হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল।  রাজনৈতিক বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দলবদল করে হাত ছেড়ে ঘাসফুলের পতাকা তলে আসেন। স্বপদেই ফেরেন রবিবাবু। তবুও চোরা বিবাদ অব্যাহত ছিল অনুব্রত - রবীন্দ্রনাথের। রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়-কে জেলা তৃণমূল সভাপতি পদে আনা হয়। আবার অনুব্রত ঘনিষ্ঠ অরিন্দম নিজেকে রবীবাবুর খাসতালুক কাটোয়ারই শহর তৃণমূল সভাপতি দাবি করেন একসময়। সর্বশেষ কাটোয়া পৌরসভা নির্বাচনে একদা রবীবাবুর কট্টর দলীয় বিরোধীরা ভোটে পরাজিত হন। কোন রাজনৈতিক অঙ্কে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন প্রার্থী পরাজিত হন সেটা নিয়েও ভিন্নমত রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে অনুব্রত মন্ডল গ্রেপ্তারিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি  রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।