সিপিআইএম এর আইন অমান্য আন্দোলন ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড বর্ধমানে
ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, ৩১ আগস্ট, সংবাদ প্রভাতী : সিপিআইএম এর আইন অমান্য আন্দোলন ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড বর্ধমানে। বুধবার বিকেলে সি পি আই এমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির ডাকে জেলাশাসকের কাছে আইন অমান্য কর্মসূচি শুরু হয়। এদিন দুটি বড় মিছিলের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। বড়নীলপুর মোড় এবং স্টেশনে দুটি সভায় দলের নেতারা অংশ নেন। বড়নীলপুরের সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআইএম এর পলিটব্যুরো সদস্য মহঃ সেলিম। দুটি মিছিল শহরের দুই প্রান্ত থেকে কার্জনগেটের সামনে সমবেত হয়।
এদিন মহঃ সেলিম বলেন লুঠ হলে, ধর্ষণ হলে এ রাজ্যের পুলিশকে খুঁজে পাওয়া যায়না। ১৯৫৯ সালে হাজার হাজার মানুষ খাদ্যের দাবিতে সমবেত হন। পুলিশ লাঠি পিটিয়ে ৮৪ জন মানুষকে খুন করে। প্রত্যেক বছর এই লড়াই শহীদদের স্মরণ করি আমরা।জীবনজীবিকার এই লড়াই। এক সময় সব কিছু নিষিদ্ধ করে, গুন্ডা পুলিশ নামিয়েও আমাদের দমাতে পারেনি। শুভেন্দু অধিকারী কম দুর্নীতি গ্রস্থ নন। মুখ্যমন্ত্রী লিস্ট করে নাম বলে দিয়েছেন। লাল ঝান্ডা শেষ হয়েছে ? এমন হিটলার ভেবেছিল। হিটলার, মুসোলিনী মুছে গেছে। হক কথা সোচ্চারে বলার দাবিতে চোরদের ধরার দাবিতে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন।সব জেলাতেই। যতই বিশ্ববাংলার ঢাক পেটান, ওই ঢাক ফেটে গেছে। কেন বেকাররা কাজ পাবেনা, কেন মজুরেরা সঠিক মজুরি পাবেন না। লাল হটেছে কিন্তু রাজ্য বাঁচেনি। আজ রাজ্যকে বাঁচাতে লাল ঝান্ডা আবার রাস্তায় নেমেছে। চোর ধরো জেলে ভরো এটা কি ছাত্র যুবদের কাজ ? এটা কি পুলিশের কাজ নয় ? পুলিশ এখানে চোরেদের মাল পাহারা দেয়। এ লড়াই পুলিশকে জাগিয়ে তোলার। আনিস খুন হলেও আমরা বিচার চাই, পুলিশ খুন হলেও বিচার চাই। বিজেপির চোর আলাদা কিছু নয়। দুই চোরের বিচার চাই। সেলিম এদিন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এরপর স্টেশন ও নীলপুর থেকে দুটি মিছিল শুরু হয়ে জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে আসে। দুপুর থেকেই বিরাট পুলিশবাহিনী মোতায়েন ছিল গোটা এলাকায়।
সিপিআইএম এর আইন অমান্য রুখতে পাঁচটি ব্যারিকেড তৈরি করেছিল পুলিশ। সঙ্গে জল কামান ও টিয়ার গ্যাসের শেল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। আইন অমান্যকারীরা তিনটি ব্যারিকেড টপকাতেই আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জল কামান চালায়। এরপর শুরু হয় ইঁট বৃষ্টি। উত্তেজিত আন্দোলনকারীদের বাগে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায়। ইতিমধ্যেই আইন অমান্যকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বেঁধে যায়। মারমুখী আন্দোলনে কার্জন গেটের সামনে বিশ্ববাংলা ভাঙচুর করার পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পের গ্লোসাইন বোর্ড ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ইঁটের ঘায়ে কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে এরপর আইন অমান্যকারীদের উপর লাঠি চার্জ করার মাধ্যমে তাড়া করে হটিয়ে দেয়। মহিলা ও পুরুষ সহ কিছু সংখ্যক আন্দোলনকারিকে পুলিশ আটক করেছে। সিপিআইএম এর আইন অমান্য রুখতে পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন সহ অন্যান্য আধিকারিকরা ছিলেন।
ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলার সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানান। তিনি বলেন সিপিআইএম ৩৪ বছরের গুন্ডাগিরি ভুলতে পারেনি। তাঁরই বহিঃপ্রকাশ ঘটালো আজ। যে ভাবে বিশ্ববাংলা লোগো সহ সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে কোনও ধিক্কারই যথেষ্ট নয়। এমনকি বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক এর অফিসও সিপিআইএম এর হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অফিস লক্ষ্য করে যথেচ্ছভাবে ইঁট পাটকেল ছোড়া হয়েছে। আসলে এটাই সিপিআইএম এর কালচার। বাংলার মানুষ ওদের ক্ষমা করবে না।
অন্যদিকে সিপিআইএম পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান,অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বড়নীলপুর মোড় ও বর্ধমান স্টেশন থেকে মিছিল করে কার্জনগেট চত্ত্বরে আইন অমান্য আন্দোলনে সামিল হয়। পুলিশের প্রথম ব্যারিকেডের সামনে পৌঁছালে, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় প্রথমেই টিয়ার গ্যাসের সেল ছুঁড়তে থাকে, সঙ্গে ইঁটও ছোঁড়া হয়। এরপরই পুলিশ লাঠি চার্জ করে এবং পরে জল কামান ব্যবহার করে। কার্যত পুলিশ প্রশাসন এই ধরনের জমায়েতের প্রশ্নে যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) পালন করা হয় তা না করে ব্যাপক জন জমায়েতকে প্ররোচিত করে। পুলিশের নির্মম লাঠিচার্জে প্রায় দুই শতাধিক গুরুতর আহত হয়েছেন। এর মধ্যে মহিলার সংখ্যাও অনেক। এছাড়া আরও অনেকেই আহত হয়েছেন । আবার কমরেড'রা বাড়ি ফেরার পথে গাড়ি আটকে অনেক জায়গাতেই তৃণমূল কংগ্রেস পুলিশের উপস্থিতিতেই ভাঙচুর ও আক্রমণ করছে। পুলিশ সিপিআইএম এর রাজ্য নেতৃত্ব আভাস রায়চৌধুরী, ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রী পৃথা তা, জেলা কমিটির সদস্য সুপর্ণা ব্যানার্জী, অনির্বান রায়চৌধুরী, জনা মুখার্জী, বিন কাশেম সেখ সহ ১৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৩১ জন মহিলা কমরেড। এই আইন অমান্য আন্দোলনে পুলিশের নির্মম অত্যাচারের সম্মুখে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন সিপিআইএম কর্মীরা।
যে দাবিগুলির ভিত্তিতে আইন অমান্য আন্দোলনে সামিল হয়েছিলো সেগুলো হলো মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যপণ্যে জি এস টি চালু, কাজের দাবিতে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং বিভাজনের রাজনীতি রুখতে আইনের শাসন জারি করতে। ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাবার ডাক দিয়েছেন জেলা সম্পাদক। আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বর জেলা জুড়ে এই দাবিগুলি সহ পুলিশের অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে মিছিল, স্কোয়াড় পথসভা সংগঠিত করতে সিপিআইএম কর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।