চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে বেসরকারিকরণ রুখতে সরব পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন


 

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে বেসরকারিকরণ রুখতে সরব পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন 

# সংবাদ প্রভাতী 

জগন্নাথ ভৌমিক, বর্ধমান : 'ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও' এই স্লোগানকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন বৃহত্তর আন্দোলনে নেমেছে। বিপুল জনসমর্থন পেতে গত দু'দিন ধরে বঙ্গযাত্রা অভিযানের পর রবিবার বর্ধমান লায়ন্স ক্লাব অডিটোরিয়ামে যুব সম্মেলনের আয়োজন করে। এই উপলক্ষে আজ সম্মেলনের উদ্বোধনের প্রাক্ মুহূর্তে একটি সাংবাদিক বৈঠকে মিলিত হন অল ইন্ডিয়া রিজিওনাল রুরাল ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশন এর জেনারেল সেক্রেটারি সৃজন কুমার পাল। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অর্ণব সামন্ত।

উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন হল একচেটিয়াভাবে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং স্বীকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশন অফ অফিসার্স অফ পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক হলো অল ইন্ডিয়া রিজিওনাল রুরাল ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশন (এআইআরআরবিওএফ), অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন (এআইবিওসি) এবং অল ইন্ডিয়া ইউকো ব্যাঙ্ক অফিসার্স ফেডারেশন (এআইইউসিবিওএফ) এর সাথে অনুমোদিত। এই মুহূর্তে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ রুখতে তীব্র ভাবে সোচ্চার হয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ অফিসার্স অফ পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। আজ এওপিবিজিবি'র জেনারেল সেক্রেটারি সৃজন কুমার পাল এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, এই কনভেনশনটি এমন এক সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কিংয়ের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ব্যাঙ্কিং শিল্পের জাতীয়করণ কৃষি ও শিল্পে অর্থনৈতিক অগ্রগতির যুগের সূচনা করেছে সহজে এবং বাধাহীন পুঁজির প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার পাবলিক সেক্টরের ব্যাঙ্কগুলিকে বেসরকারীকরণ করে এই মূল সেক্টরকে ভেঙে ফেলার পথ শুরু করেছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং নিয়ন্ত্রণ আইন এবং ব্যাঙ্কিং অধিগ্রহণ আইন সংশোধনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য এখন জনগণের কাছে যাওয়া এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান সংগঠিত করা যাতে এই ধরনের একটি অকল্পনীয়, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং জাতীয় বিরোধী পদক্ষেপের পরিণতি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। আর সেই জন্যই আমরা বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছি।  সাংগঠনিকভাবে, আমাদের অবশ্যই বেসরকারীকরণকে প্রতিহত করার জন্য দীর্ঘ এবং তিক্ত সংগ্রামের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে এবং আমাদের একার স্বার্থে নয়, আমাদের দেশের জন্য, এর অব্যাহত অগ্রগতির স্বার্থে সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। কোনও ভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া যাবেনা। আর সেই জন্যই যুব সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

এই সম্মেলনে প্যানেল ডিসকাশনে   'বেসরকারিকরনের বিরুদ্ধে যুবরা' শীর্ষক বিষয়ে বলেন ডঃ প্রদীপ্ত মুখার্জী, সৃজন ভট্টাচার্য প্রমুখ। মডারেটর ছিলেন রূপম রায়। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে 'সোশ্যাল মিডিয়া ও আমাদের কাজ' নিয়ে বক্তব্য রাখেন রাহুল পাল। 'সামাজিক সুরক্ষা ও বেসরকারিকরণের বিপদ' বিষয়ে বলেন দিপ্সীতা ধর। প্রতিনিধিদের বক্তব্যের উপর বিশ্লেষণ ও দেশের অর্থনীতিতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়ে বলেন সৃজন কুমার পাল। 'বেসরকারিকরণের বিপদ ও আমাদের কাজ' বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সৌম্য দত্ত। 

এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে সৃজন কুমার পাল বলেন, আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন এবং এই অধিবেশনে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিলটি আনা হবে। আমরা অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। আর সেজন্যই আমরা যুব সম্মেলনের আয়োজন করেছি। ১৯৬৯ সালের ১৯শে জুলাই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশের ১৪ টি বেসরকারি ব্যাঙ্ককে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের স্বীকৃতি দেন। এরপর ১৯৮০ সালে আরও ছটি ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মর্যাদা পায়। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত দেশে ৩৫০ টিরও বেশি ব্যাঙ্ক ছিল আর এই ব্যাঙ্ক পরিষেবা মুষ্টিমেয় মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। গরিব এবং নিম্নবিত্ত মানুষেরা ব্যাঙ্কের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী ব্যাঙ্ক পরিষেবাকে রাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন। যার হাত ধরেই আমরা কৃষিতে স্বনির্ভর হয়েছি মৎস্য চাষের স্বনির্ভর হয়েছি দুগ্ধ উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছি। সেইসব বিষয়ের তোয়াক্কা না করে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে। এর বিরুদ্ধেই ব্যাঙ্ক অফিসার্স সংগঠন প্রতিবাদে সামিল হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কাদের স্বার্থে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে সরকার বোধগম্য হচ্ছে না। কিছু মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে নানা অজুহাতে পরিশোধ না করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। অথচ গরীব অথবা নিম্নবিত্ত মানুষ সামান্য কিছু টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পারলে আইনি বেড়াজালে তাদের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে। আসলে গরীব মানুষদের পিষে মারার ষড়যন্ত্র চলছে। তাই আরো বৃহত্তর মানুষের কাছে পৌঁছাতেই মিডিয়া বন্ধুদের মুখোমুখি হয়েছি।