চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

কবিগুরুর জন্মদিনে স্বীকৃতি পেলেন গ্রাম্য বিদুষী নারী, উন্মোচিত হলো কবিগুরুর পূর্ণাবয়ব মূর্তি


 

কবিগুরুর জন্মদিনে স্বীকৃতি পেলেন গ্রাম্য বিদুষী নারী, উন্মোচিত হলো কবিগুরুর পূর্ণাবয়ব মূর্তি 


অতনু হাজরা, জামালপুর : কবিগুরু, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূণ্য জন্মতিথির দিন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি এক অনন্য কাজ করে দেখালো। যাতে নেতৃত্ব দিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান ও পূর্ত কর্মধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক। সালটা ১৯৬২ সেই সময় চিকিৎসার সেরকম কোনো ব্যবস্থাই ছিল না জামালপুরে। মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে ছুটতে হতো বর্ধমান। বিনা চিকিৎসায় মারা যেত বহু মানুষ। ঠিক সেই সময়ই এই মানুষদের অসহায়ত্বের কথা ভাবলেন গ্রাম্য এক বিদুষী রমণী, নাম লীলাবতী মিত্র। সেই সময় তিনি জামালপুরে একটি হাসপাতাল গড়ার জন্য তৎকালীন রাজ্য সরকারকে ৯ একর ৭০ শতক জমি বিনামূল্যে দান করলেন। তারপর দামোদর দিয়ে  বয়ে গেছে অনেক জল। এতখানি আত্মত্যাগ, মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ যে মহীয়সী অনুভব করে এতখানি এগিয়ে এলেন তাঁর কোনো স্বীকৃতি তিনি পেলেন না। স্বীকৃতি পেতে অপেক্ষা করতে হলো প্রায় ৬০ বছর। বিভিন্ন সরকার পাল্টেছে গেছে কংগ্রেস সরকার, বাম সরকার। অবশেষে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার যাঁর মুখ্যমন্ত্রী হন জননেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ক্ষমতায় এসেই তিনি  ঘোষণা করলেন সরকারি ভাবে যোগ্য সম্মান পাবেন সমস্ত মনীষীরা। শুধু তাই নয় , রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে যেসমস্ত মানুষদের বিভিন্ন কাজে অবদান আছে তাঁদেরও স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এইবার হয়তো আশায় বুক বাঁধলেন লীলাবতী দেবীর পরিবার। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জামালপুরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দায়িত্বে মেহেমুদ খান। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ দায়িত্ব পেলেন ভূতনাথ মালিক। আর ঠিক তখনই ব্লকের বিডিও'র দায়িত্বে আসেন শুভঙ্কর মজুমদার। এই তিনজনের মেলবন্ধনে ব্লকে একের পর এক উন্নয়নের কাজ হতে শুরু করে। লীলাবতী দেবী পরিবারের পক্ষ থেকে তার নাতি সুশান্ত ঘোষ তার স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান এর কাছে। কারণ লীলাবতী দেবীর বৌমা প্রভাবতী দেবীর শেষ ইচ্ছা ছিল তার মৃত্যুর আগে তিনি যেন দেখে যেতে পারেন তার শাশুড়ি মা স্বীকৃতি পেয়েছেন। ঠিক তার পরেই পঞ্চায়েত সমিতির সিদ্ধান্ত হয় লীলাবতী দেবীর একটি আবক্ষ মূর্তি বসিয়ে দেওয়া হবে জামালপুর হাসপাতালে। কিন্তু এরই মাঝে কোভিড এসে যাওয়ায় দু'বছর থমকে যায় নানা উন্নয়নের কাজ। কোভিড পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই শুরু হয় এই মূর্তি বসানোর কাজ। আজ ২৫ শে বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২ তম জন্ম দিনে আর এক গ্রাম্য বিদুষী নারীর আবক্ষ মূর্তি বসানো হলো জামালপুর হাসপাতালে।

আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জামালপুরের বিধায়ক অলক কুমার মাঝি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান, ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ঋত্বিক ঘোষ, ডাঃ আনন্দমোহন গড়াই, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক, সহ-সভাপতি দেবু হেমরম, ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিট্টু মল্লিক, সংখ্যালঘু সভাপতি ওয়াসিম সরকার সহ বিভিন্ন প্রধান, উপপ্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা। লীলাদেবীর এই স্বীকৃতির পেছনে আরেকটি মানুষ যার কথা না বললেই নয় তিনি হলেন এলাকার বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। তিনিও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন যাতে লীলাবতী দেবীকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়। এই আবক্ষ মূর্তি ফিতে কেটে উন্মোচন করেন লীলাবতী দেবীর বৌমা প্রভাবতী দেবী ও উপস্থিত সমস্ত অতিথিরা। 

আজকের এই অনুষ্ঠান এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ডাব প্রদান করা হয় এবং এর সাথে সাথেই হাসপাতাল চত্বরে ইচ্ছে গ্রুপের সহায়তায় বৃক্ষরোপণ করেন উপস্থিত অতিথিরা। এই অনুষ্ঠানে নৃত্য প্রদর্শন করেন স্থানীয় জামালপুর নেতাজি অ্যাথলেটিক ক্লাব এর খুদে শিল্পীরা। এখানে অনুষ্ঠানের পর নেতাজি অ্যাথলেটিক ক্লাব এর পক্ষ থেকে একটি র‌্যালি  করা হয়। 

জামালপুর বাইপাসের ধার পর্যন্ত যেখানে আজ একশো বাষট্টি তম জন্ম জয়ন্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তির উন্মোচন করা হয়। জামালপুরের এত বছরের ইতিহাসে এই ধরনের কোন মনীষীকে সামনে রেখে তার পূর্ণ অবয়ব মূর্তি বসানো এই প্রথম। যা করে দেখালো জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি। ছোট্ট অনুষ্ঠানে নেতাজি ক্লাব এর  পূরবীর সব পেয়েছি আসরের ছোট ছোট সদস্যরা  নৃত্য-গীত এবং আবৃত্তি পাঠ করেন। 

ছোট্ট অথচ মনোজ্ঞ এই অনুষ্ঠানটি দেখতে এলাকার মানুষ ভিড় জমান। বিধায়ক অলক কুমার মাঝি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  মনীষীদের বিভিন্নভাবে সম্মান শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন এবং করার কথা বলছেন। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে  ১৯৬২ সালে যে মানুষটি জামালপুর হাসপাতালকে ৯ একর ৭০ শতক জমি দান করে গিয়েছিলেন তাকে যে স্বীকৃতি পঞ্চায়েত সমিতি দিল এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে উন্মোচন করা হল তার জন্য তিনি জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি কে ধন্যবাদ জানান। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল তাদের এই পঞ্চায়েত সমিতিতে আসা তিনি বলেন আজ এই দিনটি তার এই কার্যকালের সময়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি দিন। লীলাবতী দেবীর মর্মর মূর্তি স্থাপন এবং জামালপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি উন্মোচন তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তিনি বলেন যে এই কাজ দুটি করতে পেরে তিনি যথেষ্ট তৃপ্তি বোধ করছেন কারণ মুখ্যমন্ত্রী বারবার এই কাজগুলি করার কথাই বলেছেন। এছাড়াও তিনি নেতাজি ক্লাবের সভাপতি, সম্পাদক সহ প্রত্যেক সদস্যকে ধন্যবাদ জানান। সরকারি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানটিকে এত সুন্দর ভাবে পরিচালনার জন্য। যার দপ্তর থেকে এই কাজ সেই পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক তিনি বলেন লীলাবতী দেবী একজন অনন্য মহীয়সী নারী। এই সম্মান তার প্রাপ্য ছিল আজ এতদিন পর তাঁকে এই সম্মান দিতে পেরে তারা পঞ্চায়েত সমিতি গর্ব অনুভব করছেন। তার দপ্তর থেকে আগামী দিনে জামালপুরে এরকম অনেক কাজই করা হবে। ভিডিও শুভঙ্কর মজুমদার এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান এই স্থানটির নামকরণ করেন রবীন্দ্র বাইপাস এবং সকলকে এই  জায়গাটির এই নামটি ব্যবহার করার কথা বলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে লীলাবতী দেবীর নাতি সুশান্ত ঘোষ জানান আজকে দীর্ঘদিন পর তার ঠাকুমার এই স্বীকৃতি পেয়ে তাদের পরিবার বেশ গর্ব অনুভব করছেন তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খানকে এবং পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ভূত মালিককে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান এই স্বীকৃতি প্রদানের জন্য। 

২৫ শে বৈশাখের এই শুভ দিনে জামালপুরের বুকে এরকম দুটি কাজ করায় পঞ্চায়েত সমিতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন এলাকার মানুষজন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ত্রম্বক সেনগুপ্ত।