চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

বিকল্পধারার চাষাবাদে দিশা দেখাচ্ছেন পোলেমপুরের কৃষক


 

বিকল্পধারার চাষাবাদে দিশা দেখাচ্ছেন পোলেমপুরের কৃষক 


অতনু হাজরা, রায়না : চাষাবাদে সোরগোল ফেলে দিয়েছেন রায়না ১ ব্লকের পোলেমপুরের এক কৃষক। উদ্যানপালন বা হর্টিকালচারের সঙ্গে কম বেশি অনেকেই পরিচিত। আর এই ধরনের চাষাবাদেই অসাধ্য সাধন করেছেন শেখ হাসিবুল রহমান নামে এক ওই কৃষক। রায়না ১ ব্লকে বাড়ি হলেও চাষ করেছেন রায়না ২ ব্লকের বড়বৈনান গ্রামের মাঠে। এখানেই ডিপটিউবওয়েল এলাকায় ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে সকলের নজর কাড়ছেন। মূলতঃ নানান রকমের ফল চাষ করেই তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে সাড়া ফেলেছেন।

সংবাদ প্রভাতী'র পক্ষ থেকে আজ আমরা তাঁর চাষাবাদ সরজমিনে দেখতে যাই এবং তাঁর চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাই। মূলত তাঁর জমিতে কুল, তরমুজ, মাল্টা, কাঁঠাল, তেঁতুল, কয়েতবেল এর পাশাপাশি পাতিলেবু, হোপা, পেঁপে, টমেটো, ঝিঙে সহ নানা সবজিও ফলাচ্ছেন হাসিবুল বাবু। বছরের সব সময় কোন না কোন গাছের ফল তার জমিতে থাকেই। এবং বেশ কিছু প্রজাতির গাছ, যেগুলি আবার সারা বছরই ফল দেয়। এক একটি ফলের আবার বিভিন্ন প্রজাতি আছে। পেয়ারার মধ্যে যেমন আছে এলাহাবাদ সফেদ, থাই ৭, ৮ ও থাই ১০। বিভিন্ন জাতের কুলের মধ্যে বাবু কুল, বলসুন্দরি, কাশ্মীরি আপেল, ভারত সুন্দরী ও সিডলেস কুল। যেগুলোর ব্যাপক ফলন হয়। মাল্টা ফলের দুটি প্রজাতি বারি ১ ও ভিয়েতনামী প্রজাতি। এগুলো খেতে মুসুম্বি লেবুর থেকেও বেশি সুস্বাদু। কাঁঠালের মধ্যে আছে থাইল্যান্ডের পিঙ্ক কাঁঠাল। এগুলো এঁচরেই বিক্রি হয়। বছরে দুবার ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও সিডলেস লেবুও চাষ করেছেন হাসিবুল বাবু। তরমুজ চাষ করে এবছর তিনি রাজ্য জুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এক আশ্চর্য্য রকমের তরমুজ তিনি ফলিয়েছেন। তরমুজের বাইরে রং হলুদ কিন্তু ভিতরে রং লাল। আবার কোনো তরমুজের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে আনারসের ফ্লেবার বা  স্ট্রবেরি ফ্লেবার। তিনি আমাদের জানান যে তিনি চার রকমের প্রজাতির তরমুজ চাষ করেছেন। সেগুলি হলো আনমোল, আরোহী, বিশালা ও গোল্ডেন রেজা।

  কথা প্রসঙ্গে জানান প্রথম থেকেই তিনি চাষাবাদ নিয়ে একটু অন্যরকম ভাবতেন। কিভাবে ব্যতিক্রমী চাষ করে বেশি অর্থ উপার্জন করা যায়। তিনি এই সমস্ত চাষ করার জন্য দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় নিজে গিয়ে বিকল্প চাষ দেখে এসেছেন এবং ট্রেনিংও নিয়েছেন। তারপরে নিজের এলাকায় এসে তার প্রয়োগ করে  যথেষ্ট মুনাফা করতে পেরেছেন। তিনি তাঁর এই চাষ সফল ভাবে করতে পারার জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা রায়নার বিধায়িকা শম্পা ধাড়া, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান তরুণ ঘোষ সহ বিডিও ম্যাডাম এবং সহকারী কৃষি অধিকর্তার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন। কারণ তাঁদের সহযোগিতায় তিনি আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছেন। রায়নার বিধায়িকা শম্পা ধাড়া'র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হাসিবুল বাবুর চাষের ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন হাসিবুল তাঁর এই চাষে এলাকার স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের যুক্ত করেছেন। তাঁরাও কাজ পাচ্ছেন। 

তার এই বিকল্প চাষের ধারণায় নতুনত্ব আছে। তিনি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে হর্টিকালচার দপ্তরে যোগাযোগ করে তাঁকে সাহায্য করেছেন এবং আগামীতে আরো সাহায্য করবেন বলে জানান। প্রধান তাপস বাবু জানান তাঁর পঞ্চায়েত এলাকায় এসে হাসিবুল বাবুর এই নতুন ধরনের চাষের ব্যবস্থা দেখে তিনি যথেষ্টই অবাক হয়েছেন। তাই তিনি তাঁর ক্ষমতার মধ্যে থেকে যতটা পারছেন তাঁকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। হাসিবুল বাবুর এই নতুন ধরনের চাষ শুধু রায়না ব্লকেই নয় পুরো জেলার চাষীদের দিশা দেখাচ্ছে আজ।