চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

গণহত্যা ও রাজনীতি


 

গণহত্যা ও রাজনীতি 


🟣  দিলীপ রঞ্জন ভাদুড়ী 


➡️  যে কোন হত্যায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যতদিন বন্ধ না হবে, ততদিন সুবিচার কেউ পাবেন না। রামপুরহাট বটকুল গ্রামে যে হত্যা বা তারপর গণহত্যা হয়ে গেছে, এটা নিয়ে রাজনৈতিক দল গুলোর কুমিরের কান্না দেখতে পাচ্ছি। কেউ চাইছে জমি ধরে রাখতে, কেউ চাইছে খুঁটি পুঁতে বসার ঠাঁই, কেউ চাইছে পুরনো জমি ফিরে পেতে। নানা রাজনৈতিক অতিথিদের আগমন, গমন, বাক বিতণ্ডা, অনশন, দান, প্রতিশ্রুতির বন্যা বইবে। এক কথায় ঘোলা জলে মাছ ধরতে নামবে। শাস্তি দেবার মালিক আদালত। সরকার শাস্তি নিশ্চিত বলার কেউ নয়। এর ফলে তদন্ত প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে।

                বর্তমানে বলিষ্ঠ চরিত্রবান, নিরপেক্ষ ও  স্পষ্টবাদী  সাংসদ, জননেতা, জননেত্রী, সমাজসেবী, বুদ্ধিজীবী খুব কম। কেউ অকলঙ্কিত নয়। গণহত্যার ইতিহাস উল্টে পাল্টে দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। অতীতের শিখ গণহত্যা, মরিচঝাঁপি ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা, গোধরা করসেবক হত্যাকান্ড, পরবর্তী গুজরাট দাঙ্গা, বেস্ট বেকারি গণহত্যা, পৈলান গণহত্যা, বিজনসেতু গণহত্যা, নিগন গণহত্যা, নন্দীগ্রাম গণহত্যা, আংগরিয়া হত্যাকাণ্ডের গল্প পড়লেই দেখা যাবে যাঁরা অহেতুক রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে নেমে পড়েছেন, তাঁদের কতটুকু নৈতিক অধিকার আছে। 

ইতিহাস কি তাঁদের কোনদিন ক্ষমা  করবে ? তদন্ত বলতে আমরা সবাই জানি, এই ধরনের মামলা তদন্ত করতে একজন দক্ষ সাব ইন্সপেক্টর, বা ইন্সপেক্টর নতুবা পোক্ত ডি এস পি পদের অফিসার যথেষ্ট। সুপার ভাইস বা তদারকির কাজ করবেন ঊর্ধ্বতন অফিসার গন। কেউ তদন্তে অংশ নিলে সি ডি দিয়ে তা সাপ্লিমেন্ট করবেন। মামলা স্পেশাল রিপোর্ট কেস হিসেবে রুজু হবে। ১৫ দিন অন্তর তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে একজন উর্ধতন অফিসার রিপোর্ট ও কি করা হল না, কি কি করতে হবে তা লিখিত ভাবে উপদেশ দিতে হবে।  উর্ধতন অফিসার গন রিপোর্ট দেখবেন, সি ডি খুঁটিয়ে পড়বেন ও প্রয়োজনীয় উপদেশ সহ তার ঊর্ধ্বতন অফিসারদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। ক্রাইম ওয়েস্ট বেঙ্গল একটি কপি পাবেন। ডি ডি আই নিরন্তর নজর রাখবেন। প্রয়োজনে পি ডি তে এনেক্সার সহ জানিয়ে দেবেন। জি ডি, পিডি র সাথে মিল রেখে তদন্ত করতে হবে। বিনা কারণে তদন্ত বন্ধ রাখা যাবে না। নেগেটিভ সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাবে না। প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। সাক্ষ্য আইনে কি কি গ্রাহ্য হয়,সেই খুঁটি নাটি ব্যাপার গুলো লক্ষ্য রেখে ঊর্ধ্বতন অফিসাররা নির্দেশ দেবেন। নিজে হাতে সি ডি লিখতে হবে। কম্পিউটারে নয়। এগুলো পুলিশ রেগুলেশন ও পুলিশ অর্ডারে লেখা আছে। আসল কথা সততা, আন্তরিকতা ও নিয়ম মেনে চলা। পুলিশের কাজ কাউকে সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট করা নয়। তদন্তে যা বেরোবে তাই লিখবেন। ফাইনাল রিপোর্ট বা চার্জশিট যা হবে, তাই দেবেন। বাদীর জন্য কোর্টের দরজা সব সময় খোলা। বাদীকে তদন্তের ফল লিখিত ভাবে জানাতে হবে। সম্পূর্ণ আইনের পথে চলতে হবে। প্রশংসা বা যে কোন নিন্দা চর্চা উপেক্ষা করতে শিখতে হবে। পুলিশের চাকরি আয়েশ করার জন্য নয়। বড্ড পরিশ্রমের ও লেখা পড়ার।  দায়সাড়া চার্জশিট একদম নয়। ইং ২০২০ যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কনভিকসন রেট ১.৯ শতাংশ।

                আনিস হত্যাকাণ্ডের পর বেশ কটি হত্যা ঘটে গেল। পুলিশের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে। একদল লোক সি বি আই, কেউ সিট এসব দাবী করছে। কিন্তু, এসবের কোন প্রয়োজন নেই। কেন সাধারণ মানুষ আজ পুলিশে আস্থা হারাচ্ছেন? 

               তাই সব ক্ষেত্রেই সিট গঠন করতে হচ্ছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যথার্থ ই বলেছেন "পুলিশের মনোবল বাড়াতে হবে"। কিন্তু, পুলিশ কি আইন বলে এতই অক্ষম হয়ে বসেছে, যে তাঁরা মনোবল হারিয়ে বসে আছেন। না, পুলিশ কেই পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে। পুলিশের চাকরিতে অনেক ঝুঁকি, বদলি, শাস্তি এসব ছিল, আছে ও থাকবে। এর মধ্যেই কাজ করতে হবে।। পুলিশে ভাল লোকের সংখ্যা বেশি। কটু স্বভাবের লোকও আছে। তাঁদের সংখ্যা কম। পুলিশ সমাজের বন্ধু। কিছু পুলিশ ভুল করে, আর তার প্রভাব গিয়ে পড়ে পুলিশের উপর।  খালি চোখে রামপুরহাটের ঘটনা গোষ্ঠী বিবাদ। উপপ্রধান হত্যা হবার পর পুলিশের অকুস্থল ছেড়ে চলে যাওয়া টা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এই গ্রামের পূর্বের হত্যা গুলি ও গোষ্ঠী বিবাদ জেলা ডি আই বি ও রামপুরহাট থানার অজানা থাকার কথা নয়। এখন পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে মিসিং লিঙ্ক খালি চোখে অনেক। টি ভি তে পুলিশের তদন্তের খুঁটিনাটি বিষয় প্রচার হচ্ছে। তদন্ত বিষয়টি গোপনীয়। কি পাওয়া গেল, মৃতদেহ সনাক্তকরণে সমস্যা, চাক্ষুষ সাক্ষী গায়েব এসব তথ্য কি প্রচার করা তদন্তের পক্ষে সহায়ক না দোষী ব্যক্তিদের আগাম অভয়বানী দেওয়া।

              সিট গঠন হয়েছে। যাঁদের নাম শুনছি, তাঁরা অত্যন্ত দক্ষ। চাইলে পাতাল থেকে ধরে আনতে পারেন দোষীদের। তাই পুলিশ কে অকারণে রাজনৈতিক দল গুলো কালিমা লিপ্ত করবেন না। ফিরিয়ে আনুন সেই পুলিশ কে যে একাই এই ধরনের মামলার তদন্ত করে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবেন।

              যাঁরা চলে গেলেন তাঁদের পরিবারের কান্না কেউ থামাতে পারবেন না। এটা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব বাংলায় এই ধরণের গণহত্যার নিন্দা করা ও সামাজিক শৃখলা ফিরিয়ে আনা। ডুয়েট করুন রাজনৈতিক মঞ্চে। সাধারণ জনজীবন স্তব্ধ করে নয়। সি বি আই, সিট এসব নিয়ে আদালতে লড়াই করুন, সংবিধানের বিভিন্ন ধারা নিয়ে  যাত্রাপালা, সিনেমা, থিয়েটার,  পথনাটক, গান বাজনা করুন রাজনৈতিক মঞ্চে। সাধারণ জনজীবন ব্যাহত করে নয়। এ সব অপরাধের রাজনৈতিক মেরুকরণ বাঞ্চনীয় নয়।

                        

লেখক অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার ও আইনজীবী।