যুদ্ধাপরাধ ও মানবিকতা
🟣 দিলীপ রঞ্জন ভাদুড়ী
➡️ রাশিয়া গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনকে আক্রমন করে। এক তরফা আক্রমণ পুতিন সাহেব শুরু করেন। পূর্ব ইউরোপে ইউক্রেন রাশিয়ার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। রাশিয়া বিশ্বের পাঁচটি শক্তিধর দেশের একটি। ইউক্রেন বৃহত্তর পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দেশ গুলির অন্যতম স্বাধীন দেশ। বলতে গেলে ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইয়ের যুদ্ধ। আমি রাজনীতি ও পররাষ্ট্র নীতির বিন্দু বিসর্গ বুঝিনা। কিন্তু, যুদ্ধ মাত্রই অপরাধ ও মানবিকতা বিরোধী। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ'র ইতিহাস আমরা পড়েছি। কিন্তু, সাম্রাজ্যবাদ কে বর্জন করতে পারিনি। তাই বহু দেশের সীমানা বিরোধ আজও অমীমাংসিত। আমরা বিংশ শতাব্দীতে নিজেদের সভ্য বলে দাবি করলেও, আমরা আজও আদিম হিংস্র মানবিকতার মুখটি সভ্যতার ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছি।
১৯৯১ সালের ২৪ শে আগস্ট, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পৃথক হয়ে ইউক্রেন নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করে। সর্ব প্রথম কানাডা ও পোল্যান্ড ইউক্রেন কে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেয়। এখানে উল্লেখ্য যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর, ভেঙে ১৫ টি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। রাশিয়া তার অন্যতম। লাল পতাকা কাস্তে হাতুড়ি ও তারার সমৃদ্ধশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়। ১৯৯১ সালের ২৪ শে আগস্ট, রাশিয়া আগে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেই বেরিয়ে এসে নিজেদের সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের বিরোধ কিন্তু এই প্রথম নয়। সীমান্ত বিরোধ ছিলই। ২০১৪ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারি, থেকেই এই লড়াই শুরু। প্রায় ৮ বছর ব্যাপী এই বিরোধ ও রাশিয়ার দিক থেকে আক্রমন চলে আসছিল। বকলমে ন্যাটোর দিকে ঝুঁকে পড়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু, ন্যাটোর সদস্য ভুক্ত দেশ না হলেও পুতিন সাহেব এটাকে ভাল চোখে দেখেন নি। তাই এবার যুদ্ধ শুরু করে দিলেন।
আজ সারা বিশ্বের দেশ গুলো চেয়ে চেয়ে দেখছে চোখের সামনে ইউক্রেন আস্তে আস্তে ধংসে পরিণত হচ্ছে। ইউক্রেন নিজেদের শেষ বিন্দু রক্ত দিয়ে লড়ছে এই অসম যুদ্ধ। শান্তির মুখোশ ধারী কোনও জোট কোন সদর্থক ভূমিকায় এই যুদ্ধ থামাতে চেষ্টা করছে না।তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ বাধুক, এটা কেউই চাইছেন না। শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার শিশু, পিতা-মাতা, জনগন বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন। ধ্বংস ও হত্যালীলা চলছে। ইউক্রেনের পতন আসন্ন বলে মনে হচ্ছে। রাশিয়া অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এই রক্ত নদীর স্রোত ইউক্রেন থেকে আরও অন্য কোথাও বইবে কি না, সন্দেহের যথেষ্ট কারন আছে। কোনও অনুরোধ, হালকা হুমকিকে পুতিন সাহেব পাত্তা দিচ্ছেন না। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সম্রাট নিরো বীনা বাদনে ব্যস্ত। একটি সভ্যতা আজ ধংসের মুখে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি কে হাতে পেতে পুতিন সাহেব ব্যস্ত। আমেরিকা যে ভাবে সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করেছিল, পুতিন সাহেবও কি তাই চাইছেন। না জেলেনস্কি পালান নি। সাদ্দাম হোসেনের মত লড়ে যাচ্ছেন। তিনি মারা গেলেও চিরতরে অমর হয়ে যাবেন।
আমরা সবাই নাটুকে কথাবার্তায় অভ্যস্ত। মুখে বলি "যুদ্ধ নয়,শান্তি চাই"। এর মধ্যে মনের কোনায় বিন্দুমাত্র ঠাঁই নেই। তাই মেকি স্লোগানে আমার শ্রদ্ধা, ভক্তি ও বিশ্বাস নেই। যে যুদ্ধ থামাতে পারেন এক মাত্র বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র নায়করা। তাঁরা সবাই অদ্ভুত ভাবে অগ্রণী ভূমিকায় এগিয়ে আসছেন না। জোট বদ্ধতা বড় দায়। পররাষ্ট্র নীতি বড় জটিল। কে কি নীতি বা কোন দায়ে কিছু করবেন নিশ্চিত নয়। এখন ভরসা শুধু ভগবান। মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধের অবসান হোক।
লেখক অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার ও আইনজীবী।