চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

অরণ্যনিধন, গ্রীন ইন্ডিয়া মিশন ও ভবিষ্যত পরিবেশ সংরক্ষন    


 

অরণ্যনিধন, গ্রীন ইন্ডিয়া মিশন ও ভবিষ্যত পরিবেশ সংরক্ষন     


🟣  অভিজিৎ মিত্র


➡️   কোভিড বাদ দিলে ভারতে এই মুহুর্তে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যত পৃথিবী ও প্রজন্মের জন্য পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র/জীববৈচিত্র্য অক্ষুন্ন রাখা। শহরে থাকার জন্য হয়ত আমরা বুঝতে পারি না কিন্তু আমাদের চোখের আড়ালে ভারতের অরণ্যের ক্ষেত্রফল রোজ কমে যাচ্ছে। এবং সেটা চোখ কপালে তোলা হারে। একুশ শতকের শুরুতে ভারতের ১১ শতাংশ স্থলভাগ জুড়ে ছিল অরণ্য। ২০১০ সালের ভেতর সেটা কমে ৯.৯ শতাংশে পরিনত হয়। আর কোভিড আতঙ্কের মাঝেই, ২০১৯-২০ সালে, আরো ৩৮.৫ হাজার হেক্টর (১ হেক্টর = ১০০০০ বর্গমিটার বা ১০০ হেক্টর = ১ বর্গ কিলোমিটার) চিরহরিৎ অরণ্য ভারতের বুক থেকে ধ্বংস হয়ে গেছে, যা ভারতের চিরহরিৎ অরণ্যের প্রায় ১২ শতাংশ। অর্থাৎ এই মুহুর্তে ভারতের মাত্র ৮.৫ শতাংশ স্থলভাগ জুড়ে রয়েছে অরণ্য। এবং বিগত কয়েক বছরে অরণ্যনিধন সবথেকে বেশি হয়েছে মিজোরাম, মনিপুর, আসাম, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে। যদিও কেন্দ্র সরকার এই তথ্যের ঠিক উল্টো তথ্য প্রতিবার পার্লামেন্টে দিয়ে চলেছে, তাদের দাবী যে ভারতে অরণ্য নাকি তাদের উদ্যোগে বেড়েই চলেছে, কিন্তু এক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ’ ওপরের তথ্যগুলো জানাচ্ছে। এটাও জানাচ্ছে যে অরণ্য ও বাস্তুতন্ত্রের এই যে তলানিতে এসে ঠেকা, এটা শুধু ভারতেই নয়, এই মুহুর্তে গোটা পৃথিবীর এক জ্বলন্ত সমস্যা।

গত একদশকে ভারতে প্রায় ২২৩ হাজার হেক্টর জঙ্গল মুছে গেছে। যার মধ্যে ৪৭ হাজার হেক্টর ধ্বংস হয়েছে শুধু মিজোরামে। ২০০১ থেকে ২০২০, এই কুড়ি বছরে অরণ্যনিধনের জন্য ভারত ৭৪২ মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছেড়েছে, অর্থাৎ গড়ে প্রতি বছর ৩৭.১ মেট্রিক টন বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছেড়েছে। এ বিষয়ে রাশিয়া, আমেরিকা, চিন বা ব্রাজিলের মত দেশগুলোও পিছিয়ে নেই। রাশিয়ার মানচিত্র থেকে গত এক দশকে ৬.৪ শতাংশ অরণ্য মুছে গেছে। ব্রাজিলে শুধুমাত্র ২০২০ সালেই ১৭০০ হাজার হেক্টর জঙ্গল ধ্বংস হয়েছে (আমাজন অরণ্য যখন পুড়ে ছাই হল)। গোটা পৃথিবীতে ২০১৯-২০ সালে প্রায় ১২ শতাংশ চিরহরিৎ জঙ্গল ধ্বংস হয়ে গেছে, যার ফলস্বরূপ যে অরিতিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে মিশেছে, তা প্রায় ৫৭ কোটি গাড়ির থেকে সারাবছর বেরোন দূষনের সমান।

প্রশ্ন উঠবে, পরিবেশ সুস্থ-স্বাভাবিক রাখতে গাছপালা ও অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা কতখানি? সবাই জানি, তবুও এক সহজ উদাহরন দেওয়া যাক। আমরা রোজ গড়ে ০.৭৮ কেজি অক্সিজেন ব্যবহার করি, বা বছরে গড়ে ২৮৫ কেজি। একটা বড় গাছ বছরে পরিবেশে ১০০ কেজি অক্সিজেনের জোগান দেয়। তাহলে আমাদের, প্রত্যেক মানুষের, সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য তিনটে করে বড় গাছ দরকার। অর্থাৎ ‘তিনটি গাছ, একটি প্রাণ’। পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহুর্তে পৃথিবীর স্থলভাগের মোট ৩১ শতাংশ হল অরণ্য, অর্থাৎ গোটা পৃথিবীর মোট ৮.৯ শতাংশ জঙ্গলে ঢাকা। কিন্তু এই ৮.৯ শতাংশ থেকেই গোটা পৃথিবীর প্রয়োজনীয় ৪০ শতাংশ অক্সিজেনের জোগান আসে। আবার কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে গাছ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কার্বন বিচ্ছিন্ন (কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন) করে নিজের ও মাটির গভীরে রেখে দেয়, যার জন্য জলশোধন থেকে শুরু করে মাটির ক্ষয়রোধ, সব সম্ভব হয়। এছাড়াও জলবায়ুর পরিবর্তন রুখে দেওয়া, নদীর পলি পড়া রুখে বন্যার হার কমানো, অরণ্যজ খাদ্য, ওষধি ও পৃথিবীজোড়া অন্তত ১০০ কোটি মানুষের জীবনধারনের বস্তু জোগান, এই সব কিছুই বনের জন্য সম্ভব। সুতরাং জঙ্গল বাঁচিয়ে রাখা এবং তার এলাকা বৃদ্ধি করা আমাদের নিজেদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই দরকার।

তবুও রাতারাতি ভারত ও বিশ্বজুড়ে অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে। ওপরে যে পরিসংখ্যান দিলাম, সেই হারে। অনেক কারনের ভেতর এই নিধনযজ্ঞের যে কয়েকটা প্রধান, সেগুলো হলঃ ১) কৃষিকাজঃ দেশে লোকসংখ্যা যত বাড়ছে, তত বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ছে জঙ্গল কেটে ক্ষেতখামার করার, ২) নগর/শহরায়নঃ সেই একই কারন, লোকসংখ্যা বাড়ার জন্য বন কেটে নিজের মত করে থাকার জায়গা বাড়ানো বা কল-কারখানা বা রাস্তা তৈরি করা, ৩) খননকাজঃ খনিজ পদার্থ তুলতে গিয়ে মাঝে মাঝেই বনজঙ্গল ধ্বসে যায় কিন্তু তাও খননকাজ থামে না, ফলে বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে অরণ্য ধ্বংস হয়ে যায়, ৪) বাণিজ্যিক গাছকাটাইঃ শুধুমাত্র মূল্যবান কাঠের জন্যই জঙ্গল ধ্বংস নয়, মাঝে মাঝে খননকাজের পাশের জায়গাতেও কাঠ কাটা হয় যাতে ফাঁকা এলাকায় মাটি খুঁড়ে পাওয়া জিনিষপত্র রাখা যায়, ৫) বাঁধ তৈরিঃ গভীর জঙ্গলে নদীর ওপর বাঁধ তৈরি করতে গিয়ে হাজার হাজার গাছ কাটা পড়ে অথবা বাঁধের আশেপাশে বন্যা/খরা হলে অরণ্যের অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়, ৬) অতিরিক্ত পশুচারনঃ বনের পাশে লোকালয় থাকলে মানুষ গবাদি পশু চরানোর জন্য বনের ওপরেই নির্ভর করে, ফলে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত পশুচারন জঙ্গল ধ্বংসের কারন হয়ে ওঠে, ৭) দাবানলঃ সাধারনত মার্চ মাসের আশেপাশে আবহাওয়া বদলের জন্য শুকনো বনে আগুন লাগে এবং ২০১৯ থেকে ২১-এর মাঝে ভারতের বেশ খানিকটা অরণ্য এরকম দাবানলের রোষেই ধ্বংস হয়েছে। ভালভাবে লক্ষ্য করুন, ওপরের কারনগুলোর ভেতর শেষ কারনটা বাদ দিলে কিন্তু বাকি সমস্ত কারন মানুষের তৈরি। মোদ্দা কথা, মানুষের লোভ আর উচ্চাকাঙ্খা এরজন্য দায়ী। এবার অরণ্যনিধনের জন্য পরিবেশে কি কি বিশেষ প্রভাব পড়ে, সেটাও একটু দেখে নেওয়া যাক। ১) জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিঃ এটাই সম্ভবত বন কেটে ফেলার পর বাস্তুতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্ষতি, যার জন্য কেটে ফেলা অংশে অনেক রকম গাছ মারা পড়ে বা অবলুপ্ত হয়ে যায়, অনেক পশু/পাখি/কীট/পতঙ্গ সেই যায়গা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় বা মারা যায়, ২) জলবায়ুর পরিবর্তনঃ কেটে ফেলা জঙ্গলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে গেলে তার ফলে যে তাপমাত্রা বেড়ে জলবায়ুর পরিবর্তন হবে, সেটা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, ৩) বন্যা ও ভূমিক্ষয়ঃ নিহত অরণ্য মাটির জল ধরে রাখতে পারে না, কার্বন বিচ্ছিন্ন করতে পারে না, ফলে সেখানে সহজেই বন্যা আর মাটির ক্ষয় হয়, ৪) খাদ্য ও কৃষির সমস্যাঃ গাছ কেটে ফেলা অংশে অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি কৃষিকাজ করা যায় না, ফলে শস্য উৎপাদনের সমস্যা কিন্তু রয়েই যায়। এছাড়াও গাছ কেটে ফেলার পর ঘন জঙ্গলের যে অংশ সরাসরি সূর্যতাপ বা বর্ষার সংস্পর্শে আসে, সেখানে মাটির ওপরের উর্বরতা চট করে কমে গিয়ে বেশ কিছুদিন তা চাষের অযোগ্য হয়ে যায়। তাছাড়া বন ধ্বংস করার পর আশেপাশের জনজাতির যে স্বাস্থ্যজনিত, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি হয়, তার মেরামত সহজে করা যায় না। এবং এই এতগুলো কারনে কোন দেশের যে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে, সেটাও একটা উদাহরনে দেখা যাক। ২০১৩ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল ২০১০-১৩ অরণ্যনিধনের জন্য ভারতের জিডিপি-তে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল। বৃক্ষনিধন ঠেকাতে না পারলে ২০৪০ সালের ভেতর জলবায়ু পরিবর্তনের এবং উষ্ণায়নের আরো বড় মাসুল ভারতকে গুনতে হবে।  

গোটা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবেশের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য ১৯৮১ সালে পৃথিবী জুড়ে ‘বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবা’ (ইকোসিস্টেম সার্ভিস) নামক এক টার্ম ব্যবহার করা শুরু হয়। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র যেমন অরণ্য, মরুভূমি, জলাজমি, চারনভূমি, নদী, সমুদ্র ইত্যাদি থেকে আমরা যে যে পরিষেবা ও বস্তু পাই, তার পরিসংখ্যান। বর্তমানে জিডিপি-র পাশাপাশি জিইপি (গ্রস এনভায়রনমেন্টাল প্রোডাক্ট) আরেক পরিসংখ্যান হিসেবে উঠে এসেছে, যা ‘বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবা’র খানিকটা ছোট অংশ। এবং এবার থেকে উত্তরাখন্ড সরকার প্রতি বছর জিইপি-র হিসেব দেবে সেকথাও শোনা যাচ্ছে। অবশ্য অনেক পরিবেশবিদ মনে করেন, জিইপি-র তুলনায় ‘বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবা’র হিসেব অনেক স্বচ্ছ এবং প্রতি রাজ্যের সেটাই প্রতি বছর তৈরি করা উচিৎ। যাইহোক, ২০১৪ সালে তৎকালীন কেন্দ্র সরকার ভারতে ‘গ্রীন ইন্ডিয়া মিশন’ তৈরি করে, যার উদ্দেশ্য ছিল এই কমে যাওয়া অরণ্যের হিসেবপত্র করে তা সংশোধন করা, ২০২০ সালের ভেতর কৃত্তিমভাবে অন্তত ৫০-৬০ মিলিয়ন টন কার্বন বিচ্ছিন্নকরন করা এবং গোটা ভারতের ‘বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবা’র স্বচ্ছ হিসেব দেওয়া। দুর্ভাগ্য, এখনো অব্ধি সেই কাজ পুরো তো হলই না, অর্ধেক হয়েছে কিনা সেটাও সন্দেহ। গ্রীন ইন্ডিয়া মিশনের ২০২০ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাদের লক্ষ্য ছিল ভারতে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার হেক্টর বনসৃজন করা, যেটা তারা ১ লক্ষ ১৭ হাজার হেক্টর অব্ধি করতে পেরেছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩০ শতাংশ ঘাটতি। কিন্তু এই পুরো হিসেবটাই কাগজে কলমে, এক আরটিআই-এর উত্তরে জানানো। ফলে বৃক্ষরোপন করার পরে সেটা সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কিনা, তার যত্ন হচ্ছে কিনা, কত শতাংশ জঙ্গল আবার সবুজ হল এবং কত শতাংশ রোপনের পর মারা পড়ল, সেসব কিছুই এই রিপোর্টে নেই। দ্বিতীয়ত, সরকারী হিসেবে, গ্রীন ইন্ডিয়া মিশনে এ পর্যন্ত ১৫টা রাজ্যের জন্য প্রায় ৪৫৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে (সেই আরটিআই-এর উত্তর অনু্যায়ী)। কিন্তু সেখানেও কোন স্বচ্ছতা নেই। কতটা কৃত্তিম কার্বন বিচ্ছিন্নকরন হল, কোথায় কোথায় হল, আগামি দশ বছরের লক্ষ্যমাত্রা আদৌ করা সম্ভব হবে কিনা, এবং এই বনসৃজন করে জলবায়ুর পরিবর্তন কতটা রুখে দেওয়া গেল, সেসব তথ্য এখনো অধরা। ফলে এই পুরো মিশন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। এবং সরকারের সদিচ্ছে নিয়েও।

শেষের প্রায় দু’বছর কোভিড অতিমারীর কারনে আমাদের সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান আপাতত করোনা ভাইরাসের ওপরেই ন্যস্ত। কিন্তু কোভিডের তৃতীয় ঢেউ এখন নিচের দিকে। ফ্রান্স বলে দিয়েছে এবার কোভিডকে সাধারন সর্দি-কাশির ভাইরাস হিসেবে দেখা দরকার, ব্রিটেন বলেছে কোভিডের সঙ্গেই এরপর বেঁচে থাকতে হবে, আর দশটা রোগের মত এই ভাইরাসও এখন সাধারন। ধরে নেওয়া যায় ইউরোপের অন্যান্য দেশও এবার সেই রাস্তাতেই হাঁটবে। এবং ভারতও তার ব্যতিক্রম হবে না। সুতরাং এবার সময় হয়েছে আস্তে আস্তে পরিবেশের দিকে নজর ফেরানোর। ভবিষ্যত মজবুত করার। ভারতের সমস্ত নাগরিককে এ ব্যাপারে সচেতন হতেই হবে। কেন্দ্র সরকার যাই হিসেব দিক, অরণ্য কমছে এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। যে কারনে মাঝে মাঝেই বাঘ, হাতি, চিতা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। তাদের খাবার নেই, তাই মানুষের খাবার তুলে নিয়ে যাচ্ছে, মানুষের জীবনযাত্রায় থাবা মারছে। আজকাল মাঝে মাঝেই জলবায়ুর পরিবর্তন হয়ে চলেছে, পৃথিবীর উষ্ণায়ন এবং হিমবাহ ভেঙে পড়ার খবর এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। আমরা জানি যে শেষ ২০ বছরে সমুদ্রতল প্রায় চার ইঞ্চি বেড়ে গেছে। অনেক গাছপালা কীট-পতঙ্গ-পাখি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ও যাচ্ছে।

ভারতের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জঙ্গলের সঙ্গে জড়িয়ে। খাবার বা জ্বালানী বা অন্যান্য বিভিন্ন উপকরন এরা বন থেকেই সংগ্রহ করে জীবন চালায়। এটাও দেখা গেছে, যেখানে স্থানীয় উপজাতির মানুষজন বন-জঙ্গল রক্ষনাবেক্ষন করে, সেখানে অনুপ্রবেশ হয় না এবং জঙ্গল তুলনামূলকভাবে অক্ষত থাকে। এগুলো সরকারকে মাথায় রাখতে হবে, একতরফা কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং ২০৩০-এর ভেতর ‘গ্রিন ইন্ডিয়া মিশন’-এর ৩৩ শতাংশ অরণ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা খাতায়-কলমে নয়, হাতেনাতে বাস্তবায়িত করতে হবে। দরকার হলে তদারকির লোক লাগিয়ে। নাহলে ভবিষ্যতে কোন একদিন হয়ত উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি অরণ্য বা পশ্চিমঘাটের চিরহরিৎ জঙ্গল সাভানায় পরিনত হয়ে যেতে পারে। নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য বনজঙ্গল বাঁচিয়ে রাখতেই হবে, এই সারসত্য এবার বোঝার সময় এসে গেছে।

                                                       (তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট)   

(লেখক বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যক্ষ)