চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

নয়া প্রজন্মের কারিগর অমৃতলোকে


 

নয়া প্রজন্মের কারিগর অমৃতলোকে 


🟣  বিশ্বরূপ দাস 


➡️  শুধুই পরোপকার, গঠনমূলক এবং সৃজনশীল কর্মে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য এই পৃথিবীতে মাঝে মাঝে দেবদূতের মতো যেসব মহৎ মানুষের আবির্ভাব হয় তাদের মধ্যে একজন হলেন সিউড়ির ভূমিপুত্র কাঞ্চন সরকার। সদাহাস্যময়,অকুতোভয়, কর্মযোগী  এই মানুষটি নিজের হাতে গড়েছিলেন "নয়া প্রজন্ম"কে। সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের নীরব সাক্ষী বীরভূমের লাল মাটির দেশের অসংখ্য লেখক লেখিকা থেকে শুরু করে গুনমুগ্ধ পাঠক । বলতে দ্বিধা নেই তিনিই প্রথম জেলার বিচিত্র সংবাদকে তামাম পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে দেবার জন্য কান্ডারীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। আর সেজন্য তাকে প্রতি পদে পদে নানান বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। বরং তার অশ্বমেধের ঘোড়া প্রতিনিয়ত ছুটেছে সবুজের অভিযানে। জেলাশহর সিউড়ির বুকে "বসুন্ধরায়" তিনি যে রাজসুয় যজ্ঞের আয়োজন করেছেন তা শহর কলকাতার বিশ্ববাংলা কিংবা নন্দন চত্বরকেও হার মানায়। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির এমন অভূতপূর্ব অত্যাধুনিক ত্রিবেণী সঙ্গম আর অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। সত্যি সত্যি এ যেন বীরভূমের বুকে তাঁর হাতে গড়া আর একটা শান্তিনিকেতন। যেখান থেকে উঠে এসেছেন শত শত খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং লেখকবৃন্দ। তার নয়া প্রজন্ম আজও নবাগতদের সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার মস্ত একটা  প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং সাংবাদিক হিসেবে তিনি কোনদিন কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। অসততার সাথে হ্যান্ডশেক করেননি। এমনকি প্রবল প্রতিপক্ষ কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চোখ রাঙানিকে তিনি ভয় করেন নি। বরং তার  ক্ষুরধার লেখনী এবং নির্ভীক কণ্ঠ ধ্বনিত হয়েছে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাকল্পে ও মানুষের মুক্তির কল্যাণে। জীবনের শেষ দিন অবধি মানুষের পাশে থেকে তাদের উপকার করে গেছেন।

আজ আমাদের বড়ই দুঃখের দিন। শোকের দিন। তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই এই কথাটা বলতে এক অব্যক্ত বেদনায় হৃদয় ফেটে যাচ্ছে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না যে মানুষটা কয়েক ঘণ্টা আগে একজন অসুস্থ ব্যক্তি কে দুর্গাপুর মিশন হসপিটালে  ভর্তি করতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনিই হঠাৎ  (গতকাল রাত আড়াইটা নাগাদ) হার্ট অ্যাটাক হয়ে চলে যাবেন না ফেরার দেশে।

তার এভাবে চলে যাওয়ায় শুধু নয়া প্রজন্ম বা বসুন্ধরা নয় তামাম পশ্চিমবঙ্গ তথা বীরভূমের শিল্প -সাহিত্য- সংস্কৃতি জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। বিশাল বটবৃক্ষটা  হঠাৎ যেন কালবৈশাখীর ঝড়ে মাটি থেকে উপরে পড়লো। তার প্রশান্ত স্নিগ্ধ ছায়া হারালাম আমরা। নিরাপদ নিশ্চিত আশ্রয় হারালো পাখি রুপ অসংখ্য নতুন লেখক লেখিকা। জীবনের অশান্ত ঝড়ে বড্ড অকালে থেমে গেল কাঞ্চন কলম। পৃথিবীর কাছে দায়হীন চিরকুমার সমাজসেবী সেই মানুষটির অসমাপ্ত কাজগুলো কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে আমাদের। তথা কাঞ্চন বাবুর  হাতে গড়া নয়া প্রজন্ম এবং বসুন্ধরাকে যারা ভালবাসেন সেইসব লেখক লেখিকাদের। এছাড়াও তার এই নাতিদীর্ঘ জীবনে তিনি রেখে গেছেন বেশ কয়েকজন যোগ্য উত্তরসূরি কে। আগামী দিনে তারাই বইয়ে নিয়ে যাবেন তার সোনার তরী। গাইবেন জাগরনের গান।

মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং সেই কর্ম করতে করতেই তিনি চলে গেলেন অমৃতলোকে। তার এই অমৃত যাত্রাপথে  অন্তরের শ্রদ্ধা, ভক্তি আর ভালোবাসার ফুল ছিটিয়ে বলি

" তুমি বারে বারে এস ধরা মাঝে

স্মৃতি তোমারে বিরাজে হৃদি মাঝে। "

                                       লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

                                                          ছবি : সংগৃহীত