চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি ও প্রাণী পালন উৎসব


 

খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি ও প্রাণী পালন উৎসব 


জগন্নাথ ভৌমিক, বিদ্যানগর : বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ২১ তম বর্ষ খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি ও প্রাণী পালন উৎসব শুরু হয়েছে।  রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় এবং রাজ্যের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে ২১ বছর ধরে এই উৎসব আয়োজিত হচ্ছে। আজ পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কোবলা বাঁশদহ বিল চাঁদের বিল এলাকায় উৎসবের উদ্বোধন করেন চিত্রাভিনেত্রী তথা বিধায়িকা জুন মালিয়া। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহ সভাধিপতি দেবু টুডু, মৎস্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ড.তাপস পারিয়া, অতিরিক্ত জেলা শাসক সুপ্রিয় অধিকারী, বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী, তপন চ্যাটার্জী, নিশীথ কুমার মালিক, মানগোবিন্দ অধিকারী, নবীন চন্দ্র বাগ, নেপাল ঘড়ুই, পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন, ভারতের জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার বিদেশ বসু, উৎসব কমিটির সভাপতি বিভাস বিশ্বাস, সম্পাদক তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক, পূর্বস্থলি ১ ব্লকের বিডিও দেবব্রত জানা, শিল্পপতি সুশীল মিত্র,  জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ডঃ দেবাশিস নাগ, মেহেবুব মন্ডল, মহঃ ইসমাইল, মিঠু মাঝি সহ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা। এদিনের অনুষ্ঠানে শাপলা ফুল দিয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। 

উলেখ্য এলাকার উন্নয়নের কান্ডারী তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, একসময় এই জলাশয় দুরাবস্থায় পড়ে ছিল। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টায় এবং সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় বাঁশদহ বড় কোবলা, বিদ্যানগর এখন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সংস্কারের পর ভাগীরথী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত এই পাঁচ কিলোমিটার জলাশয় এখন পূর্ণাঙ্গ আকার পেয়েছে।  আগামীদিনে ইকো টুরিরিজম গড়ার চিন্তাভাবনা চলছে। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া চুনো মাছ, আবার পাওয়া যাচ্ছে। এই বিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষদের অনেকেই রুটি রুজির পথ খুঁজে পেয়েছেন। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ আরও জানান, বিলের জলে গজিয়ে ওঠা কচুরিপানা থেকে জৈব সার তৈরির পাশাপাশি কচুরিপানা থেকে হস্তশিল্পের সামগ্রী তৈরির প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। ইতিমধ্যেই এলাকার ছেলে এবিষয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে এসেছে।

এদিন উদ্বোধকের ভাষণে চিত্রাভিনেত্রী জুন মালিয়া খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি ও প্রাণী পালন উৎসবের ভূয়ষী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, "অনেক উৎসব দেখেছি। এই উৎসব একেবারে অন্যরকম। এরকম একটা উৎসব হতে পারে না এলে বুঝতেই পারতাম না। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এর প্রতি অকৃত্রিম ধন্যবাদ জানান।" জুন মালিয়া আরও বলেন, কার্যত তিনি যেচেই আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে আমন্ত্রণ নিয়েছেন। 

উৎসবে অতিথি অভ্যাগতদের  আপ্যায়নের জন্য ছিল হরেক রকম ব্যবস্থা। সকালে শীতের মিঠেকড়া রোদে দাঁড়িয়ে ভাপা পিঠে, পুলি পিঠে, পাটিসাপটা পরে লাল চা। সমগ্র অনুষ্ঠানের আমেজের সঙ্গে এক অন্যভূতি।

 মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনে ১৭ রকমের চূনো মাছের সঙ্গে অন্যান্য মাছ সহ ২১ রকমের মাছের পদ। পোড়া মাটির গ্লাসে জল, পোড়া মাটির থালার উপর কলাপাতায়  বাঁশকাঠি চালের ভাত, পোড়া বেগুনের ভর্তা, ধনেপাতা বাটা, সোনা মুগের ডাল, আলু ফুলকপির তরকারি, মাছ ভাজা, মাছের ঝাল, মাছের কালিয়া, টমেটোর চাটনি, নলেনগুড়ের পায়েশ। সব মিলিয়ে তৃপ্তির মধ্যাহ্নভোজন। 

অন্যদিকে গ্রামবাসীরা জানান,এই উৎসবকে ঘিরে দূরদূরান্ত থেকে মেলায় ও পিকনিক করতে আত্মীয় স্বজন ও অন্য জেলা থেকেও মানুষরা আসেন এখানে। আছে নৌকা বিহারের ব্যবস্থা।