চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

‘‘স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য কিছু না জানা তথ্য"


 

‘‘স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য কিছু না জানা তথ্য"



            🟣   ডাঃ এন. সি মন্ডল 


   ➡️   সারা বছর ধরে লেগে থাকা বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ এবং জটিল রোগব্যাধি থেকে কিভাবে আমরা মুক্তি পেতে পারি এবং সুস্থ থাকার কিছু না জানা তথ্য যা থেকে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হতে পারেন তাই নিয়ে এই আলোচনা। ঘরের খুব ছোটখাটো পরিচিত জিনিস থেকে ঘরোয়া সাধারণ অসুখ-বিসুখ যেমন পেটের অসুখ, সর্দি -জ্বর বেশী হয় অর্থাৎ এইসব পরিচিত নিত্য ব্যবহার্য জিনিসে জমে থাকা ঘরোয়া জীবাণু থেকে এগুলি হয়। এইসব জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পেতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল ভালো করে হাত ধোয়া, বিশেষ করে প্রতিবার বাথরুমের পর, খাবার আগে এবং বাইরে থেকে ফেরার পর। হাতের নখের ভিতর জমে থাকা ময়লা এবং আংটি ও আঙ্গুলের ফাঁকের মধ্যে জমে থাকা ময়লার মাধ্যমেও জীবাণুরা শরীরে প্রবেশ করতে পারে ---- তাই এই ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সাবান ও বেশী জল দিয়ে আঙ্গুলের ফাঁকগুলি ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। আজকাল হাতে লম্বা নখ রাখা একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইটাকে আমরা চিকিৎসকরা ফ্যাশন না বলে বলব একটি অস্বাস্থ্যকর বদ অভ্যাস। এই লম্বা নখের নীচে জমে থাকা ময়লায় নানা ধরণের রোগ-জীবাণু বাসা বাঁধে। শৌচক্রিয়ার সময় মলে উপস্থিত ই-কোলাই জীবাণু, জিয়ার্ডিয়া সিষ্ট, অ্যামিবিক সিষ্ট, কেঁচো ক্রিমির ডিম এই লম্বা নখে জমে থাকা ময়লার মাধ্যমে পেটে ঢুকে পেটের মধ্যে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ ঘটাতে পারে। শুধু নিজেই নয়, আবার এই হাত দিয়ে খাবার সরবরাহ করার সময় অথবা আঙ্গুল ডোবানো জলের মাধ্যমেও এইসব রোগ-জীবাণু অন্যজনের পেটেও চলে যেতে পারে। ঘরের যে সব জায়গা এবং ব্যবহার্য জিনিস-গুলিকে আমরা খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপদ ভাবি সেইগুলিই হচ্ছে বেশী অস্বাস্থ্যকর, যেমন রান্নাঘরে ব্যবহৃত তোয়ালে বা কাপড়, দরজার হাতল, রান্নাঘরের স্ল্যাব, বাথরুমের বিভিন্ন কোণা, কেটলি বা প্যানের হাতল, কলের মাথা, ফ্রিজের ভিতরের অংশ এবং হ্যান্ডেল। দেখা গেছে যে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রিজের ভিতরের ৭০ শতাংশ অংশই অস্বাস্থ্যকর এবং এর থেকে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা বেশী। ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং কোন জিনিসের মধ্যে ভিজে ভিজে ভাব থাকলেই জীবাণুদের বাড়বাড়ন্ত বেশী এবং এই পরিবেশে জীবাণুরা ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে। যেখানে ফ্রিজ সারাদিনে বারবার খোলা হয় এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং এর দাপট- এই অবস্থায় ফ্রিজে রাখা খাদ্যবস্তু সম্পূর্ণ নিরাপদ হতে পারে না। জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়। বাজার থেকে কেনা শাকসবজি ভালো করে ধুয়ে ফ্রিজে রাখা উচিত। রান্না করা খাবার এবং কাঁচা সবজি আলাদা আলাদা ট্রেতে রাখতে হবে। রান্না করা খাবার খোলা না রেখে ঢাকা দেওয়া কৌটোর মধ্যে রাখলে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে।

      প্লাস্টিক বোতলে যে জল খান–সেটা নিরাপদ তো? প্লাস্টিক বোতলে থাকে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ। সাধারণত দু'ধরণের প্লাস্টিক দিয়ে এই বোতল তৈরী হয়। একটি পলিইথিনিল টেরেথ্যালেট যাকে আমরা PET বোতল বলেই জানি এবং অন্যটি হল একটি পলিকার্বন যা বিসফেনল এ (বি.পি.এ) দিয়ে তৈরী। Pet বোতল অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হলেও বিসফেনল শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। পলিকার্বন দিয়ে তৈরী বোতলে জল রাখলে বিসফেনল এ নামক ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ জলে মিশে যায় সহজেই। এই বিসফেনল এর প্রভাবে প্রস্টেট, জরায়ু, ব্রেষ্ট, ফুসফুস ক্যানসার, বন্ধাত্ব, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস এর সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। প্লাষ্টিক থেকে নির্গত এই বিসফেনল এ খাবারের সাথে শরীরে প্রবেশ করে ইনসুলিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, এর ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন বহু মানুষ। এন্ডোক্রাইন সোসাইটির ইন্টারন্যাশানাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই ধরণের গবেষণামূলক তথ্য।

        বাজারে বিক্রিত মিনারেল ওয়াটার, ঠাণ্ডা পানীয় বা ফলের রসের বোতলগুলি একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া উচিত কারণ এই ধরণের বোতলগুলি বারবার ব্যবহারের জন্য নয়। বারবার ব্যবহারে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত খাঁজযুক্ত বোতল এবং টোল খাওয়া বোতল ব্যবহার না করাই উচিত কারণ এই টোল খাওয়া অংশ এবং খাঁজের মধ্যেই ছত্রাক জাতীয় জীবাণুরা আশ্রয় নেয় যা জলের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। হোটেল বা রেস্টুরেন্টে যে প্লাষ্টিকের কৌটোতে খাবার ভরে দেওয়া হয়, সেই প্লাষ্টিকের কোটো একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া উচিত। অথচ আমরা অনেকেই এই প্লাষ্টিক কৌটোর ক্ষতিকারক দিক না জেনেই বারবার ব্যবহার করি। প্লাষ্টিকের বোতল বিশেষ করে ভালো কোম্পানীর PET বোতল নিয়মিত পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত করা দরকার কারণ অপরিষ্কার বোতল থেকেই নানা ধরণের রোগজীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

          টাকায় যে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু থাকে সেই ব্যাপারে আমরা সচেতন নই- হয়ত না জানার জন্যই। পুরানো ধুলো জমে কালচে হয়ে যাওয়া টাকায় থাকে প্রচুর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। মাছ, মাংস, সব্জি বাজারের নোটে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেশী থাকে। কোনও ছোঁয়াচে অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে থাকা নোটের মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে। এবার এও দেখা যায় টাকা গোনার সময় অনেকে জিভের লালা আঙ্গুলে লাগিয়ে টাকা গোনে, এতে অতি সহজেই নোটে থাকা জীবাণুরা সরাসরি দেহে প্রবেশ করতে পারে। রাস্তাঘাটে খাবার কিনে খাওয়ার ক্ষেত্রে একই বিপদের আশঙ্কা থাকে। কারণ যে খাবার বিক্রি করছে সে সেই হাতেই টাকা নিচ্ছে এবং সেই একই হাতে খাবার সরবরাহ করছে, ফলে টাকার মধ্যে লেগে থাকা জীবাণুরা খাবারের মাধ্যমে শরীরে ঢুকছে। ফলে অতি সহজেই হতে পারে খাদ্যে বিষক্রিয়া। হাতে কোন কাটাছেঁড়া থাকলে তার মাধ্যমেই নোটের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে। রাস্তা-ঘাটে খাওয়ার সময় এবং টাকা লেনদেন করার সময় কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করলেই এই জীবাণু সংক্রমণ থেকে কিছুটা দূরে থাকা যায়। মানুষের শরীরে এই সকল জীবাণুরা প্রবেশ করলেই যে কেউ রোগে আক্রান্ত হবে কিনা সেটা নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির শারীরিক পরিস্থিতি, প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং জীবাণুর জিনগত বৈশিষ্ট্যের উপর।

    আজকাল মহিলাদের মধ্যে ওষ্ঠরজনী বা লিপস্টিক ব্যবহারের প্রচলন খুব বেশী। এমনকি মায়েরা তাঁদের ছোট কন্যা সন্তানদের ঠোঁটেও লাগিয়ে দিচ্ছে লাল, গোলাপি বা অন্য কোন রংয়ের লিপস্টিক যার মধ্যে বেশীরভাগই হচ্ছে অনুমোদিত বিষ রং। ল্যাবরেটেরীতে লিপস্টিকের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, এর মধ্যে আছে ৫০ শতাংশের বেশী লেড বা সীসা। সীসা নামক ধাতুটি এক ধরণের বিষ যা মানুষের বুদ্ধি, মস্তিষ্কের বিকাশ, শেখার ক্ষমতা ও দক্ষতা কমিয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন খুব কম পরিমাণের সীসাও শরীরের বিপদ বাড়িয়ে দেয়। লিপস্টিকে ইচ্ছাকৃত ভাবে সীসা না মেশালেও অনেক রঙ আছে যার মধ্যে থাকে সীসা তা যত নামী কোম্পানীই হোক। সুতরাং ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানোর আগে এবং সীসার বিষক্রিয়তার কথা চিন্তা করে- একটু ভাবুন।

        সেলফোন বা মোবাইল এখন নতুন প্রজন্মের প্রত্যেকেরই হাতে শোভাবর্ধন করছে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কাছে মোবাইল ফোন এক নতুন দিশা। মোবাইল ছাড়া যেন জীবন অচল। এই সেলফোন বা মোবাইল ফোনের অনেক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আমাদের হয়ত অজানা। সেলফোন বা মোবাইল ফোন রেডিও ওয়েভ বা তরঙ্গ দ্বারা চালিত হয়, যে তরঙ্গ বিকিরিত হয় মোবাইল টাওয়ার বা অ্যান্টেনা থেকে। এই টাওয়ার থেকে বিকিরিত তরঙ্গের প্রভাব শরীরের ওপর ভীষণভাবে পড়ে, ফলে নার্ভের রোগ, টিউমার, ক্যানসার, হৃদরোগ, বন্ধাত্ব, কান, ব্রেন এবং নিদ্রাহীনতার মত রোগ দেখা দিতে পারে। কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে এই ক্ষতিকারক বিকিরিত রেডিও তরঙ্গের কিছুটা প্রভাব কাটিয়ে উঠা যায়। যেমন বিছানা বা বালিশের পাশে মোবাইল না রাখা কারণ এই সময় ফোনে কথা না বললে আমরা ভাবি মোবাইল কাজ করছে না ফলে বিকিরণ হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। মোবাইলে ফোন না করলেও প্রতি ৩০-৪০ সেকেন্ডে একবার একটি করে রেডিও ওয়েভ বা তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে টাওয়ার বা অ্যান্টেনা থেকে মোবাইলে। তাই রাত্রে মোবাইল ফোন বিছানা থেকে দূরে রাখাই ভালো। মোবাইলে অ্যালার্ম দেওয়া থাকলে ফোন এরোপ্লেন মোড বা ফ্লাইট মোডে রাখা উচিত। সারাদিন মোবাইল নিয়ে ঘুরলে বা অফিসে থাকলে ফোন পকেটে না রেখে সঙ্গে থাকা ব্যাগ বা অফিসের টেবিল-এ রাখা উচিত। সারাদিনে ফোন পকেটে রাখা ঠিক নয় এতে শরীরে রেডিও ওয়েভ বিকিরণ বেশী হয়। মোবাইল ফোন এবং শরীরের মধ্যে দূরত্ব ৫.৮ ইঞ্চি বা ১৫ সেন্টিমিটার থাকা দরকার। কানে ফোন লাগিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলা ঠিক নয় কারণ এতে ফোন গরম হয়ে যায় এবং এর ফলে কানের নার্ভ ব্রেনসেল, কানের পাশে নরম কোষকলার ক্ষতি হয়। বেশী সময় কথা বললে ইয়ার ফোন লাগানো উচিত।

                               Image courtesy :                                                             http://hitechmindsolutions.com