চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

বাংলার সংস্কৃতি জগতের নক্ষত্র পতন


 

বাংলার সংস্কৃতি জগতের নক্ষত্র পতন


জগন্নাথ ভৌমিক, বর্ধমান : বাংলার সংস্কৃতি জগতের নক্ষত্র পতন। চলে গেলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লোকসংগীত শিল্পী পূর্ণেন্দু দাস। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় বর্ধমানের বাসভবনে থাকাকালীন হঠাৎই বুকে ব্যথা অনুভব করেন, তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়,  দুর্ভাগ্য চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। একইসঙ্গে স্তব্ধ হয়ে গেল এক অধ্যায়। বর্ধমানের অফিসার্স কলোনিতে নিজবাস ভবনেই থাকতেন। উত্তরসূরি হিসেবে রেখে গেলেন এই সময়ের বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী একমাত্র কন্যা রাগেশ্রী দাস সহ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ও গুনমুগ্ধ মানুষজনকে।

পূর্ণেন্দু দাস গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকসঙ্গীতকে বাঁচিয়ে রাখতে নিরলস কাজ করে গেছেন। অসংখ্য লোকসংগীত এর মধ্যে ভাদু, টুসু, চটকা, মহিশাল, গাড়োয়াল, ভাওয়াইয়া, মুর্শিদা, গম্ভীরা, ভাটিয়ালি, বাউল, সারি, জারি, ঝুমুর, মনসা ভাসান, ভাওইয়া গান ছিল তাঁর চর্চার বিষয়। এইসব গানে বিভিন্ন জায়গার মানুষের জীবনযাত্রা, আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন। লোকসংগীতের মধ্যে রাগের বৈচিত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নানা গবেষণাও করেছেন। পূর্ণেন্দু দাস দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কলকাতা আকাশবাণীর নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। পূর্ণেন্দু বাবু দীর্ঘ সময় এনসিআরটি, এনসিসি, সিসিআরটি'র প্রশিক্ষক ও পরীক্ষক ছিলেন। প্রাচীন কলাকেন্দ্র চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর স্তরেরও পরীক্ষক ছিলেন। তিনি লোকসঙ্গীতের প্রসারে বাংলার বাইরে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা গিয়েছেন অনেকবার। কমিউনিটি সঙ্ প্রজেক্ট নিয়ে ভারতের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরেছেন বহুবার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোকরঞ্জন শাখায় কিছুদিন চাকরিও করেছেন। শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী'র লোকভারতীতে কয়েকবছর থাকার পর বর্ধমানে নিজেই গড়ে তোলেন 'লোকতীর্থ মিউজিক কলেজ'। এখান থেকে সংগীত শিক্ষার পাঠ নিয়ে অনেকেই আজ সুপ্রতিষ্ঠিত।

 অন্যান্য শিল্পীদের পাশাপাশি তার কন্যা রাগেশ্রী এই মুহূর্তে রাজ্যের প্রতিভাময়ী তরুণী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। দুটো স্কলারশিপ এবং জ্ঞানপ্রভা পুরস্কার সহ বহু নামিদামি পুরস্কারে রাগেশ্রীর ঝুলি পরিপূর্ণ।

পূর্ণেন্দু বাবু বলতেন প্রকৃত সাধনা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা না থাকলে প্রকৃত শিল্পী হওয়া যায় না। তাঁর মৃত্যুতে বর্ধমান তথা বাংলার সংগীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।