চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

ভর দুপুরে দুষ্কৃতিদের গুলিতে তৃণমূলের যুব নেতা খুন


 

ভর দুপুরে দুষ্কৃতিদের গুলিতে তৃণমূলের যুব নেতা খুন


রাধামাধব মণ্ডল, আউশগ্রাম


মঙ্গলবার দুপুরে আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকার দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী যুবনেতা খুন হয়েছেন। অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতিরা গুলি করে গেঁড়াই থেকে ভাতকুণ্ডা ফেরার পথে জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়। পরে আহত যুবনেতাকে জামতাড়া ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনা হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত যুবনেতার নাম চঞ্চল বক্সী (৪১)। চিকিৎসকরা জানিয়েছে তাঁর দেহে তিনটি বুলেট এর ক্ষত পাওয়া গেছে। হাতে, বুকে ও পেটে। মঙ্গলবার অমরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গেঁড়াই গ্রামে দুপুরবেলা এক নিমন্ত্রিত বাড়িতে খেতে আসেন দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন যুব সভাপতি চঞ্চল বক্সী। বর্তমানে তাঁর বাবা দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল বক্সী। অমরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামবাটি মৌজার উলুগড়ির জঙ্গলে বাইক নিয়ে ফেরার পথে, আনুমানিক সময় দুপুর ২ টো ৩০ মিনিটে ঘটনাটি ঘটে বলে এলাকা থেকে জানতে পারা যায়। যে বাইকটি করে যুবনেতা ফিরছিলেন, সেই বাইকের পিছনে বসে ছিলেন তাঁর বাবা বর্তমান দেবশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল বক্সী। তিনি চোখে কম দেখেন এবং দীর্ঘ দিনের অসুস্থ, বুকে রয়েছে প্রেসমেকার। চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ায় তাঁর হাঁটু এবং কোমড়েও চোট লেগেছে।  

মৃত চঞ্চল বক্সীর বাড়িতে অসুস্থ বাবা শ্যামল বক্সী ছাড়াও ১৫ দিনের একটি পুত্র সন্তান ও স্ত্রী অনিন্দিতা বক্সী এবং অসুস্থ মা মমতা বক্সীও রয়েছেন। দীর্ঘ বারো বছর পর তাঁর পুত্র হয়েছে। দেবশালা গ্রামে চঞ্চল বক্সীর সহকর্মী তৃণমূলের মাধন বাগ্দী বলেন, "কোনো কিছু বুঝতে পারছি না। তবে চোরা স্রোতে কিছু হলে তা জানতে পারিনি। আমি দাদার সঙ্গে দীর্ঘ দিন রাজনীতি করছি। এমন ভালো মানুষ আগে দেখিনি।" 

 আউশগ্রামে  তৃণমূলের যুব নেতা খুনের ঘটনায় উত্তেজনা চরমে। জেলা পুলিশের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে। রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পূর্ব বর্ধমানের এসপি কামনাশিষ সেন। তিনি বলেন, 'তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এখুনি কিছু বলা যাবে না।'

এদিকে চঞ্চল বক্সি খুন হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গেঁড়াইয়ের অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ফিরছিলেন তারা। সে সময় আউশগ্রামের গেঁড়াইয়ের জঙ্গলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা বলে অভিযোগ। হাতে ও পীঠে, বুকে গুলি লাগে চঞ্চল বক্সির। সঙ্গে সঙ্গে বাইক নিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে বাবা ও ছেলে। ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছান দলীয় কর্মীরা। তারা উদ্ধার করে তড়িঘড়ি চিকিৎসার জন্য জামতাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

আউশগ্রামের জঙ্গল লাগোয়া ঘটনাস্থলের পিচ রাস্তার ধার থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি নতুন জামা, একটি সিক্স রাউন্ডের বন্দুক। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে কয়েকটি কার্তুজের থোকা।

এবিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, মৃত চঞ্চল বক্সীর বাবা শ্যামল বক্সী বলেন, "আমাদের অঞ্চলে কোনো বিরোধী নেই। আমাদের কোনো শত্রুও নেই। কেন এমন হল বলতে পারবো না।" 

ভাল্কী অঞ্চল সভাপতি অরূপ মির্ধা বলেন, "গেঁড়াই থেকে এক রাজনৈতিক কর্মসূচি সেরে খাওয়াদাওয়া করে ফিরছিলেন চঞ্চলদা ও তার বাবা প্রধান। ওখানে আমরা ৩২০০ ভোটে এবার জিতেছি। ওদের বরাবরই টার্গেট করে রেখেছিল, নকশাল ও বিজেপিরা।" 

যদিও আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষ বলেন," চঞ্চল বক্সী আমাদের পার্টির নেতা। গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রচুর ভোটে পার্টিকে জিতিয়েছে। তাই বিরোধীরাই প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়েই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রশাসন তদন্ত করছে। দোষীদের সাজা হবেই। " 

আউশগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার বলেন, "আমি বাইরে রয়েছি। আগামীকাল এলাকায় যাবো। আমাদের বলিষ্ঠ নেতা খুন হয়েছে। বিধানসভা ভোটে হেরেই বিরোধীরা এই কাজ করেছে। পুলিশ তদন্ত করছে। দোষীদের সাজা হবেই। " বুদবুদ থানা তদন্ত শুরু করেছে। এলাকায় আনা হয়েছে পুলিশ কুকুরও। কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও, তদন্তে পুলিশ যে অনেক দূর এগিয়েছে, সেটা তাদের শরীরি ভাষায় স্পষ্ট। এদিন জামতাড়াতে হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে মৃতদেহ। বুধবার ময়না তদন্তে পাঠানো হবে বলে জানায় বুদবুদ থানা।