রূপসা ও জামিরউদ্দিন এর চার হাতের মেলবন্ধন
🟣 জগন্নাথ ভৌমিক, বড়শুল
➡️ রূপসা ও জামিরউদ্দিন এর চার হাতের মেলবন্ধন ঘটলো বড়শুল কিশোর সংঘের উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায়। বর্ধমান দু'নম্বর ব্লকের বড়শুল অঞ্চলের কুমিরকোলা গ্রামের অত্যন্ত দুঃস্থ পরিবারের মেয়ে রূপসা। গণপরিবহনের কর্মচারী ছিলেন রূপসার বাবা সেখ হাসান। লকডাউনে কাজ হারিয়ে এখন খেতমজুরের কাজ করে কোনও রকমে সংসার চলে। শেখ হাসান এবং আনোয়ারা বেগমের বিবাহযোগ্য কন্যা-ই হলো রূপসা। ওর বাবা-মায়ের অনুরোধে মানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো বড়শুল কিশোর সংঘ। রূপসার পরিবারের পছন্দ করা পাত্র রায়না ১ ব্লকের বন্তীর গ্রামের কাসেম আলী শেখ ও খোদেজা বেগম শেখের পুত্র জামির উদ্দিন শেখ। চেন্নাইয়ে গয়না শিল্পের একজন দক্ষ কর্মী। উভয় পরিবারের সম্মতিতেই রবিবার এক অনুষ্ঠানে সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে রূপসা ও জামির উদ্দিনের মেলবন্ধন ঘটালো বড়শুল কিশোর সংঘ।
আনন্দঘন এই অনুষ্ঠানে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা বিধায়ক শম্পা ধাড়া, বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক, বর্ধমান দু'নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সুবর্ণা মজুমদার, বর্ধমান পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ডি-জোন দেবনাথ সাধুখাঁ, শক্তিগড় থানার অফিসার ইনচার্জ কুনাল বিশ্বাস, মাউন্ট ইউনাম পর্বত শৃঙ্গ বিজয়ী মেমারীর মহঃ নওয়াজ ওরফে রাজা, বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি অরুণ গোলদার, বড়শুল ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুস্মিতা সরেন, উপপ্রধান রমেশ সরকার, পাল্লা পল্লীমঙ্গল সমিতির সম্পাদক সন্দীপন সরকার, রোটারী ক্লাব অব এমিনিটি বর্ধমান এর সভাপতি কল্যাণ তা, সমাজসেবীর শীর্ষেন্দু সাধু সহ অন্যান্য অতিথিরা।
শুরুতেই বড়শুল কিশোর সংঘের সম্পাদক পার্থ ঘোষ উপস্থিত অতিথি সহ পাত্রপক্ষ এবং কন্যা পক্ষের সকলকে স্বাগত জানান। কেন এই উদ্যোগ সেই প্রেক্ষাপট ও সকলের সামনে তুলে ধরেন। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবাহের পূর্বে পাত্রী ও পাত্র'র থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানো হয়েছে। পাত্রী ও পাত্র'র থ্যালাসেমিয়া রক্তের পরীক্ষা বিপদমুক্ত ও সন্তোষজনক।
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক, বর্ধমান ২ ব্লকের বিডিও সুবর্ণা মজুমদার বড়শুল কিশোর সংঘের এরকম একটি মানবিক উদ্যোগের ভূয়ষী প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে নবদম্পতির ভবিষ্যৎ জীবন সুখময় হয়, সেই জন্য আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা জানান।
এদিনের মেলবন্ধন অনুষ্ঠান সমস্ত সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই আয়োজিত হয়। খুব সুন্দর ব্যবস্থাপনায় ৩০ জন বরযাত্রী সহ অতিথি ও কন্যা পক্ষের সকলকে আপ্যায়ন করা হয়। কফি টিফিন থেকে শুরু করে দুপুরে কব্জি ডুবিয়ে মাংস ভাত। দুপুরের মেনু কি ছিল নুন, লেবু, সাদাভাত, বেগুনি মুগের ডাল, পঞ্চ ব্যঞ্জন, পটল চিংড়ি, মুরগির মাংস, মাছ, পনির, চাটনি, পাপড়, সন্দেশ, আইসক্রিম, এবং পান মশলা। ক্যাটারিং এর ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্ত আয়োজন করেছে বড়শুল কিশোর সংঘ। এককথায় অনবদ্য। বড়শুল কিশোর সংঘের সভাপতি অমিত সিনহা, সম্পাদক পার্থ ঘোষ, প্রাক্তন সম্পাদক সৌমেন বিশ্বাস সহ সমস্ত সদস্য-সদস্যারা হাসিমুখে সমগ্র আয়োজন দেখভাল করেছেন। নানান কর্মসূচিতে কিশোর সংঘ এই মুহূর্তে পূর্ব বর্ধমান জেলায় একটি উল্লেখযোগ্য নাম।
করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষদের জন্য বিনামূল্যের হাট বসানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে খাদ্য সামগ্রী প্রদান, মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ, অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিষেবা, রক্তদান শিবির, বৃক্ষ রোপণ সহ বহু রকম সমাজসেবামূলক কাজ করে চলেছে। এছাড়া ভলিবল প্রতিযোগিতা ও মহিলা ফুটবল সহ আরো অন্যান্য সামাজিক ও মানবিক কর্মসূচির মাধ্যমে সারা বছরই জনসেবায় ব্যস্ত বড়শুল কিশোর সংঘের সদস্যরা।