ক্ষুদে বিজ্ঞানীর আবিষ্কারে আলোড়ন
অতনু হাজরা, জামালপুর : খুঁদে বিজ্ঞানীর আবিষ্কারে আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড অতিমারি পরিস্থিতিতে এই আবিষ্কার সময়োপযোগী। পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের বেত্রাগর গ্রামের দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র দেবর্ষি দে। প্রত্যন্ত গ্রামে থাকলেও ছোট থেকেই তার বিজ্ঞানের বিষয়ে বেশ ঝোঁক ছিল। নিজের প্রচেষ্টায় সে নানা জিনিস তৈরি করে। যে গুলি বেশ আকর্ষণীয়। সে স্থানীয় সেলিমাবাদ হাই স্কুলের ছাত্র। বিগত বছরে ব্লক স্তরে বিজ্ঞান মেলায় সে প্রথম স্থান লাভ করে। এরপরে সে জেলা ও রাজ্যস্তরে অংশ নেয়। ওর বিষয় ছিল "টেকনোলজি ফর এ বেটার লাইফ" এই বিষয়টিকে সামনে রেখে সে 'স্মার্ট হোম' এই সম্পর্কিত চারটি জিনিস তৈরি করে। এ হেন সেই ছেলে আবার আবিষ্কার করে ফেললো একটি সুন্দর 'মাস্ক'। যা ফ্রন্ট লাইন করোনা যোদ্ধাদের দারুন কাজে লাগবে। সাধারণত দেখতে পাওয়া যায় সাধারণ মানুষের মাস্ক পড়ার একটা অনীহা কাজ করে কারণ অনেকেই মাস্ক পরে হাঁপিয়ে যান।বা যে সমস্ত ডাক্তারবাবু ও নার্সরা করোনা ওয়ার্ডে কাজ করেন তাঁদের বেশিরভাগ সময়ই পিপিই কিট ও মাস্ক পরে থাকতে হয়। তাঁদের জন্য দারুন কার্যকরী হবে এই মাস্ক। এর বিশেষত্ব হলো মাস্কের ভিতর একদম ফ্রেশ অক্সিজেন সরবরাহ করবে যার ফলে কোনো রকম অসুবিধা হবে না মাস্ক পরে থাকতে। তার তৈরি ডিভাইসে রয়েছে ৫টি এয়ার সাকার। যার মধ্যে রয়েছে ৬টি ০.১-০.৩ মাইক্রোনের এয়ার ফিল্টার। যা ১০০% বাতাসকে বিশুদ্ধ করে। ডিভাইসের ভিতরে থাকা এয়ার ফিল্টার জোর করে পাইপের মাধ্যমে মাস্কের ভিতরে পাঠিয়ে দেয়। ছোট্ট এই ডিভাইসটির ওজন ৪০৫ গ্রাম যা সহজেই পকেটের মধ্যে নিয়ে ব্যবহার করা যাবে।
এরইমধ্যে সে এই ডিভাইস সহ মাস্ক নিয়ে জামালপুরের বিধায়ক অলক কুমার মাঝি, বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ঋত্বিক ঘোষ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খানের কাছে হাতে কলমে কিভাবে এই মাস্ক কাজ করবে তা দেখিয়েছে। বিধায়ক অলক কুমার মাঝি বলেন, খুবই ভালো একটি জিনিস দেবর্ষি আবিষ্কার করেছে যা এই করোনা পরিস্থিতিতে যথেষ্ট কার্যকরী হবে। তিনি নিশ্চিত বিষয়টি জেলা ও রাজ্যস্তরে জানাবেন যাতে দেবর্ষির এই আবিষ্কার স্বীকৃতি পায়। তবে সবটাই নির্ভর করবে বিশেষজ্ঞদের উপর। বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, তিনি তাঁর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন বিষয়টি। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ঋত্বিক ঘোষ জানান তিনি পুরো বিষয়টি জেলা মুখের স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানাবেন এবং সেখানে গিয়ে যাতে দেবর্ষি হাতে কলমে তার আবিষ্কার দেখানোর সুযোগ পায় সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান জানান যেহেতু তাঁর ব্লকের ছেলে দেবর্ষি তাই তিনি বিডিও ও বিধায়কের সাথে কথা বলে যাতে দ্রুত কিছু করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা করবেন। ইতিমধ্যেই দেবর্ষি তার আবিষ্কারের সমস্ত পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করে ফাইল আকারে বিধায়ক ও ব্লক স্বাস্থ্য অধিকারিককে জমা দিয়েছে। এখন সে এই আশায় রয়েছে তার এই আবিষ্কার কখন স্বীকৃতি পায়। তার বাবা ব্রজেন্দ্রোনাথ দে যিনি নিজেও একজন শিক্ষক। তিনি জানান, ছোট থেকেই নানা জিনিস তৈরির বিষয়ে ঝোঁক ছিল দেবর্ষির। তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভোলানাথ কর্মকার জানান দেবর্ষি খুবই ভালো ছেলে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞান মেলায় রাজ্যস্তর পর্যন্ত যেতে পেরেছে। তাই ওর আবিষ্কার যদি স্বীকৃতী পায় তাহলে তিনি খুবই খুশি হবেন বলে জানান। এখন দেখার, স্বীকৃতি পায় কিনা এই খুঁদে বিজ্ঞানীর আবিষ্কার।