চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

সত্যজিৎ রায় এর বিমলা চলে গেলেন না ফেরার দেশে

 



সত্যজিৎ রায় এর বিমলা চলে গেলেন না ফেরার দেশে


 🟣 রাধামাধব মণ্ডল


 ➡️ ফের বাংলার সংস্কৃতি জগতে আরও এক ইন্দ্রপতন। বর্ষণমুখর একটি বিষণ্ণ দিন। আলো হারানোর। এমনই সময় কাটছে আমাদের। আপনজনদের হারিয়ে কেমন যেন এক উত্তাপহীন উত্তরের অপেক্ষক হয়ে বেলা কাটছে আমাদের। একে একে নিভছে দেউড়ির সমস্ত আলো। এবার প্রয়াত হলেন বেলাশেষের কিংবদন্তি অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত।
গত বছর নভেম্বরে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন আর এক জীবন্ত কিংবদন্তী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আর তাঁর চলে যাওয়ার ৭ মাসের মধ্যেই চলে গেলেন তাঁর শেষবেলার অনস্ক্রিন ঘরণী অভিনেত্রী স্বাতীলেখা। ছবির বিশ্বনাথ এতদিন বোধহয় ভীষণ একা হয়ে পড়েছিলেন, শূন্যপুরের পথে। এবার তাঁর সঙ্গী আরতি-কে ফিরে পেলেন, এক বর্ষণশীল দিনে। থিয়েটারে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু। তারপর জীবন জুড়ে বাড়িয়েছেন আলো। বাংলা সিনেমার উঠানামাতে তাঁকেও থাকতে হয়েছে দূরে, বহুদিন। ফিরেও শেষবেলায় বাজীমাৎ করেছেন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। চিকিৎসাও চলছিল কয়েক বছর ধরে। কয়েক মাস আগেও তাঁকে একবার হাসপাতালে ভরতি করাতে হয়েছিল, পরিবারকে। তবে সেবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি।



বুধবার দুপুরে হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সত্যজিৎ রায়ের "ঘরে বাইরে"র বিমলা।
প্রয়াত হলেন বাংলা মঞ্চ তথা চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (Swatilekha Sengupta)। গত মাসেই একাত্তর পূর্ণ করেছিলেন এই অভিনেত্রী। বুধবার ১৬ জুন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল মেডিকায়, বেলা ২ টো ৪৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর জামাই সপ্তর্ষি মৌলিক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই ভুগছিলেন অভিনেত্রী। আগের মাসের ২২ তারিখ থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। একটা স্ট্রোকও হয়েছিল মাঝে। কিডনিজনিত সমস্যাও ছিল, বেশ কয়েক বছর ধরে। আজ সকাল থেকে সিআরটি প্রোটিন আবারও বেড়ে যায়। সেখান থেকেই আবার একটা অ্যাটাক হয় তাঁর। তবে এবার আর শেষরক্ষা হল না।



প্রথম ১৯৮৪ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক পর্দায় সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) ‘ঘরে বাইরে’-তে দেখা গিয়েছিল অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে (Swatilekha Sengupta)। এরপর বহু বছর বাংলা ছবির দর্শক তাঁকে পর্দায় দেখতে পাননি। কিন্তু মঞ্চে দাপিয়ে অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি। নান্দীকার নাট্য গোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনিই। পরবর্তীকালে প্রযোজক-পরিচালক নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের 'বেলাশেষে' ছবিতে ফের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে দেখা যায় তাঁকে। তারপরই আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে, বাংলা ও বাঙালির মন জয় করেন ফের শেষবেলায়।
স্ক্রিনের শুরুতে যে অভিনেতার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন অভিনেতা স্বাতীলেখা, শেষ ছবিটিও তাঁর সঙ্গেই অভিনয় করে গেলেন। পরিচালক নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি বেলাশুরু-তে এক সঙ্গে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র এবং স্বাতীলেখা। কিন্তু ছবিটি এখনও মুক্তির অপেক্ষায়।
ছবিটি মুক্তি পেলে শেষ বারের মতো এই অবিস্মরণীয় জুটিকে দেখতে পাবেন দর্শকরা। কিন্তু দর্শকদের অভিব্যক্তি আর দেখা হয়ে উঠবে না তাঁদের। স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ধর্মযুদ্ধ, বেলাশেষে, বরফ ইত্যাদি।
তিনি সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, ওয়েস্ট বেঙ্গল থিয়েটার জার্নালিস্টস' অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড সহ বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।



মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক শোক বার্তায় বলেন, "বিশিষ্ট অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি।" সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, "তাঁর প্রয়াণে অভিনয় জগতে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হল।
আমি স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের স্বামী রুদ্রপ্রসাদ ও কন্যা সোহিনী সেনগুপ্ত সহ তাঁর অগণিত অনুরাগী ও আত্মীয়স্বজনকে আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।"