চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

কোভিশিল্ড কি আদৌ মানবশরীরে চুম্বক ক্রিয়ার জন্য দায়ী ?


 

কোভিশিল্ড কি আদৌ মানবশরীরে চুম্বক ক্রিয়ার জন্য দায়ী ?


ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, সংবাদ প্রভাতী : গত প্রায় চার-পাঁচ দিন কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দেবার পর অনেক মানুষের শরীরে চুম্বকের প্রভাব এবং সেই প্রভাব ভ্যাকসিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কিনা, সেই নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া ও চ্যানেলে তোলপাড় চলছে। আমাদের কাছেও বর্ধমানের বিভিন্ন ব্যক্তি কিছু ছবি পাঠিয়েছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে তাদের শরীরে কয়েন, ছুরি, কাঁচি, খুন্তি, হাতা ইত্যাদি আটকে আছে। এবং তারা দাবী করেছেন, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেবার কিছুদিন পর থেকেই হঠাৎ এই রকম প্রভাব তাদের শরীরে দেখা যাচ্ছে। যদিও আমরা এই দাবীর সত্যতা যাচাই করিনি, তবুও পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এই রকম কিছু ছবি আমরা এখানে তুলে দিলাম।



এই বিষয়ে আমরা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য যোগাযোগ করেছিলাম বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যক্ষ ডঃ অভিজিৎ মিত্রের সঙ্গে, যিনি ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একজন বিশেষজ্ঞ এবং ভারতের দুটি বৈজ্ঞানিক সংস্থার ফেলো। তিনি বলেন, ‘আমাদের রক্তে তিন ধরনের কোষ বা কণিকা থাকে, যার ভেতর লোহিত রক্তকণিকা বা আরো ভালভাবে বললে তার অন্তর্গত হিমোগ্লোবিন শরীরের সমস্ত কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেবার কাজ করে। এই হিমোগ্লোবিন হচ্ছে এক মেটালোপ্রোটিন যার ভেতর থাকে অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র লোহা এবং এরা প্রতি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। তার মানে আমাদের মাথা থেকে পা অব্ধি রক্তের ভেতর রয়েছে লোহা। এবং লোহা মূলত চৌম্বকক্রিয়ার জন্য দায়ী হয়। কিন্তু রক্তে লোহার এই উপস্থিতির জন্য আজ অব্ধি মানবশরীরে কোন চৌম্বক ক্ষেত্র পাওয়া যায় নি। এই নিয়ে বহুবার এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে, তবুও পাওয়া যায় নি। এবং মানুষের শরীরে চুম্বক-প্রভাব এই প্রথম নয়, বিগত অনেক বছর ধরে বিভিন্ন দেশের অনেকেই এই রকম দাবী করেছেন। যদিও তার কোন বৈজ্ঞানিক মূল নেই। অনেক ক্ষেত্রে যেটা দেখা গেছে, সেটা হল কারো কারো শরীরে বেশি ঘাম জমে ও বেশি চটচটে হয় – ফলে তাদের দেহে ঘামের কারনে কয়েন বা অন্যান্য হাল্কা জিনিষ আটকে যায়। এরা যদি স্নান করে শুকনো গায়ে পাউডার মেখে আবার এই কয়েন বা অন্যান্য জিনিষ গায়ে রাখেন, দেখবেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর সেগুলো আটকাবে না। এবং আমি অন্তত কুড়ি জনকে জানি যারা জুন মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তায় ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদের ভেতর বড়জোর দু’জন এই রকম চুম্বক-প্রভাবের কথা জানিয়েছেন। সুতরাং একে কখনোই ভ্যাকসিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বলা যায় না। আতঙ্কিত হবার কোন কারন নেই। 



তবে আমি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এটাই আবেদন করব যে যারা যারা এই রকম চুম্বক-প্রভাবের কথা বলছেন, তাদের শরীর একবার পরীক্ষা করে দেখতে। কারন ভাইরাস ও ভ্যাকসিন, দুটোই নতুন। যেহেতু আমাদের দেশে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল সেভাবে ব্যাপকহারে হয় নি, সুতরাং এইসব ঘটনাগুলো পুরোপুরি অবজ্ঞা না করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে নেওয়াই ভাল’।