সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাঁচতে চান? তাহলে আজই ছাড়ুন
🟣 বিশ্বরূপ দাস
➡️ ধূমপান করেন ? খুব ভালো কথা। গুটকা খৈনি ? ওহঃ তাও চলে বুঝি। বোম বোম তারক বোম ? সেটাও মাঝেমধ্যে হয় কি বলেন। এ তো গেল জলপথের গল্প, স্থল পথেও মাঝে মধ্যে যাতায়াত হয় বৈকি। আরে পুরুষ মানুষ হয়ে সিগারেট বিড়ি খাবেন না তাই কখনও হয়। নইলে বন্ধুমহলে স্ট্যাটাস থাকবে কেন। নির্ভেজাল ভালো ছেলে হয়ে প্রেমিকার কাছে নাড়ু গোপালীয় আদর খেতে কে না চায়। হ্যাঁ তাও অনেকেই করে বটে। তবে জীবনের প্রথম অভিসারে যাবার আগে আড়ালে আবডালে বিড়ি ফুঁকে এলাচ চেবাতে চেবাতে যাবার লোকও কম নেই। কিন্তু ধরা পড়ার ভয় তখন থাকে না। কারণ নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে উদয় হলেও গ্রহণ লাগতে তখন অনেক বাকি। তবুও আনন্দ যাবে কোথায়। সেই এক পলকে একটু দেখার সুখে বন্ধু মহলে চায়ের আসরে খোশ গল্পের সাথে মুখচিমনি থেকে চলতে থাকে ধোঁয়ার বিরামহীন উদগীরণ।
প্রথম যৌবনে সরস্বতী পূজার রাতে আমাদেরও এই বিষয়ে প্রথম হাতে খড়ি হয়। কিন্তু সেই হাতে খড়ি খুব একটা সুখকর ছিল না। একটা টানেতেই মাথা গরম, বমি বমি ভাব। তার ওপর কাশি আর কিছুতেই থামতে চায়। যদি বা তা কোনরকমে থামল কিন্তু মুখের গন্ধ যাবে কি করে ? ধরা পড়লে পিঠের চামড়া তার আস্ত থাকবে না। তাই ওস্তাদ বন্ধুদের কথায় লেবুর পাতা এবং পেয়ারা পাতা চিবিয়েও ঘরে ঢুকতাম। কিন্তু অভিজ্ঞ অভিভাবকদের নজর এড়াতে পারতাম না। সেদিন ধরা পড়ে গিয়ে যে অপমান এবং বেদম প্রহার খেয়েছি তা আজও সর্বাঙ্গে লেগে আছে।
এরপর বড় হয়ে কলেজ ও কর্ম জীবনে অনেকবার বিড়ি সিগারেট ধরা হলেও, ছাড়াও হলো। প্রেমিকা থেকে শুরু করে প্রিয়জনের কাছে বহুবার বহু প্রতিজ্ঞা করা হলো। বউও মাথায় হাত রেখে শপথ করালো। ছেলেপুলের দিব্যি করালো।কিন্তু কয়েক দিনের ইন্টারভেলের পর যে কে সেই।বাজার করতে গিয়ে পরিচিত বন্ধুদের সাথে দেখা হতেই সেই প্রতিশ্রুতি সব গুবলেট হয়ে গেল। দীর্ঘ অদর্শনে পর প্রেমিকাকে দেখলে যেমন মনের অবস্থা হয় এখানেও ঠিক সেই রকম মনের সুখে টান দেওয়া হল। আহা এই সুখ আনন্দ কি আর অন্য কিছুতে পাওয়া যায়।
কিন্তু একটা কথা আছে ওই ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না। তাই যে দিন ডাক্তার বাবু জানিয়ে দিল ধূমপান বন্ধ না করলে বাইপাস সার্জারির জন্য তৈরি হতে হবে নতুবা পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন সবাইকে টাটা জানাতে হবে তখন হুশ ফিরলো।
আসলে এসব গল্প শুধু আমার নয়, আমার মতো গড়পড়তা সব বাঙালি পুরুষদের। ভোগের পর ত্যাগের চেষ্টা। যারা এই ত্যাগটা তাড়াতাড়ি করতে পারেন তারা কিছুদিন সুখে থাকেন। বাকিদের কথা না বলাই ভালো। সর্দি, কাশি, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, হার্ট ব্লক, ফুসফুস ও ওরাল ক্যান্সারের রোগী হয়ে সারা জীবন নিদারুণ কষ্টের জীবনযাপন করেন। আর আপনার-আমার ক্ষণিক আরামের জন্য বাড়ির লোককেও তার ফল ভোগ করতে হয়। সব কিছু বিক্রি করেও তারা বাঁচাতে পারেন না আমার আপনার মতো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কে।
তাই আজ তামাক বর্জনের দিন ভাবতে হবে আমাদের। নিতে হবে কঠিন শপথ। আমার আপনার সামান্য একটি প্রচেষ্টা এই পৃথিবীকে যথার্থ অর্থেই শিশুর বাসযোগ্য করে যেতে পারে।
মনে রাখবেন:-
১) ধূমপান না করলেও প্রাকৃতিক নিয়মে আপনার পটি হবে এবং রাত্রে নির্বিঘ্নে ঘুম আসবে
২) ধুমপান বা নেশা করে কখনোই টেনশন কাটানো যায় না। টেনশন কাটাতে হলে প্রাণায়াম করুন, ব্যায়াম করুন, গল্পের বই পড়ুন। নয়তো একটু বেড়িয়ে আসুন
৩) ধূমপান বা নেশার পেছনে যে অর্থ ব্যয় করছেন সেই টাকাটি থাকলে আপনার পরিবারের চাল-ডালের অনেকখানি প্রয়োজন মিটে যাবে। নয়তো সেই অর্থ আপনি দরিদ্র নারায়ন সেবায় ব্যয় করতে পারেন।
৪) ধূমপান ছাড়ার পর আপনি কখনই ভাববেন না যে সারাদিনে আপনি কতবার ধূমপান করতেন।
৫) ধুমপান ছাড়তে হলে একেবারেই ছাড়ুন, একটা দুটো করে কমাতে কমাতে কখনোই ছাড়া যায় না। বরং তাতে আকর্ষণটা বড্ড বেশি বাড়ে। কোন উৎসব পার্বণে বন্ধুবান্ধব অফার করলেও তা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করুন। বলুন ডাক্তার নিষেধ করেছে।
৬) ধূমপান শুধু আপনার নয়, আপনার পরিবারেরও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। শতগুণে বাড়িয়ে দিতে পারে করোনার মতন মারণ রোগের প্রকোপ।
তাই সিগারেট বিড়ির পাতায় পাতায় মারণ রসের প্রলোভন থেকে মুক্তি পেতে আসুন আজ সবাই হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করি--
এই জীবনের কোন খেলায়
কোনদিনও আমি হারবো না
আজ থেকে আর একটা বিড়ি,
একটা সিগারেটও ছোঁব না।
---
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।