Scrooling

হাঁপানি ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় ভুগছেন ? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ অয়ন শিকদার আগামী ২৫ আগস্ট বর্ধমানে আসছেন। নাম লেখাতে যোগাযোগ 9734548484 অথবা 9434360442 # টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট ২০২৪ : ভারতের বিশ্ব রেকর্ড, প্রথম থেকে শেষ সব ম্যাচে ভারতের জয় # কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আউসগ্রামের বিউটি বেগম # নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে শপথ নিলেন ডঃ সুকান্ত মজুমদার ও শান্তনু ঠাকুর # আঠারো তম লোকসভা ভোটের ফলাফল : মোট আসন ৫৪৩টি। NDA - 292, INDIA - 234, Others : 17 # পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফলাফল : তৃণমূল কংগ্রেস - ২৯, বিজেপি - ১২, কংগ্রেস - ১

"সাহেব বাবুমশাই "

 



"সাহেব বাবুমশাই " 


 🟣 বিশ্বরূপ দাস 


➡️ ক্ষমতার দম্ভ আর বিশেষ কোনও সংঘের প্রতি দায়বদ্ধতা মানুষকে কখনও কখনও এমন হৃদয়হীন এবং অমানুষ করে তোলে তখন ন্যায়, আদর্শ, কর্তব্য এবং দায়িত্ব সে বেমালুম ভুলে যায়।তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ আমাদের দেশের কর্ণধার "সাহেব বাবু মশায়"। কথায় আছে "রণে হেরে গোদা বলে বীর"। তাঁর হয়েছে এখন সেই অবস্থা। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে বঙ্গ বিজয় অধরা থেকে গেল বলে তিনি এখন রাগে ফুঁসছেন। তাই ভোট পরবর্তী সময়ে নিজেকে বীর প্রমাণ করার জন্য মুখে যতই যৌথ ভাবে কাজ করার কথা বলুন না কেন মমতা ব্যানার্জীকে কেমন করে জব্দ করা যায় এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের সারদা নারদায় ফাঁসিয়ে চিরকালের মতো শ্রীঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় তাই হয়েছে তার একমাত্র চিন্তা। তাই কখনও সি বি আই, কখনও সেন্ট্রাল ফোর্স, কখনও জাতীয় নিরাপত্তা আইনের রক্তচক্ষু দেখিয়ে রাজ্যের উপর কেন্দ্রীয় আধিপত্য জারি করতে চাইছেন। কিন্তু সে গুড়ে যে বালি সেকথা মমতাদির লড়াকু মানসিকতা দেখে বিলক্ষণ বুঝলেও হাল ছাড়বার পাত্র তিনি নন। হারের জ্বালা এখনও সারা গায়ে যে দগদগ করছে। তাই ভোট পেরোতে না পেরোতে রাজ্য শাসনে খবরদারি করতে হিংসা দেখার অজুহাতে একদিকে যেমন পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় দল তেমনি অন্যদিকে রাজ্যপালকে দিয়ে অহরহঃ রাজধর্ম পালনের কৈফিয়ত তলব করছেন নির্লজ্জের মতো। তাতে লাভ কতটা হবে তা ভবিষ্যতই বলবে। কিন্তু তিনি নিজেই দিনকে দিন দেশবাসীর কাছে কতটা হাস্যস্পদ উলঙ্গ রাজার মতো হয়ে যাচ্ছেন একটু চোখ রাখলেই দেখা যায়।


ভারবর্ষের কোনও প্রধানমন্ত্রী এর আগে দেশের অতিমারী বা জরুরী অবস্থায় দেশবাসীর কথা না ভেবে নিজের আত্মসুখের কথা ভেবেছেন বলে জানা নেই। কিন্তু আমাদের এই "সাহেব বাবু মশাই"

সব পারেন। শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাসাদপোম বাসভবন বানাবার জন্য "অত্যাবশ্যকীয় প্রকল্পে" সরকারি শিলমোহর দিয়েছেন । অক্সিজেন, ভ্যাকসিন, কর্ম সংস্থান, খাদ্য এবং চিকিৎসার অভাবে দেশের মানুষ মরে মরুক ক্ষতি নেই, কিন্তু সেন্ট্রাল ভিষ্টা প্রকল্পে নিজের মনোরঞ্জনের জন্য নতুন সংসদ ভবন, দিল্লির রাজপথ, এসপিজি ভবন, কেন্দ্রীয় সচিবালয় এবং নিজ বাসভবনকে নতুন করে ভেঙে তো হবে। সেক্ষেত্রে টাকার অসুবিধে হবে না। লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন ! কিন্তু দেশের মানুষকে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেবার অর্থ তার নাকি নেই ! যেটুকু ছিল সেটুকু দেশের মানুষকে না দিয়ে বিদেশে বিক্রি করে আন্তর্জাতিক মহলে মহান হবার চেষ্টা করেছেন। এই চালাকি তার ধরা পরে গেছে।

জানা যাচ্ছে, শুধু নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ করতেই খরচ হবে ৯৭১ কোটি টাকা। অথচ এই টাকাতে অন্তত ৭০০ টির ও বেশি অক্সিজেন প্ল্যান্ট করা যেতো। ২০ থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া যেত। অথচ সেক্ষেত্রে তিনি নির্বিকার। বরং সুচতুর ভাবে সেই দায়িত্ব তিনি ঠেলে দিয়েছেন রাজ্যের কোর্টে। দেশবাসীকে ত্যাগের কথা বলে নিজেই দায়িত্বজ্ঞানহীন উলঙ্গ রাজার মতো ভোগ সুখের রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করছেন প্রতিনিয়ত। দামি দামি পোশাক পরছেন। ভোট প্রচারে দৈনিক ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেট প্লেনে পশ্চিমবঙ্গে ডেলি প্যাসেঞ্জারী করে সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দামি দামি হোটেল বুক করে পার্টির মিটিং করেছেন।কখনও যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাফাল কিনে রাজকীয় উৎসবের আয়োজন করেছেন। সেইসব জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজনে না খেতে পাওয়া, রোগগ্রস্থ কত মানুষের মৃত্যু হাহাকার যে ঢাকা পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। নির্বাচনটা আট দফার পরিবর্তে দু তিন দফায় করলে আজকে রাজ্যের মানুষকে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রধানমন্ত্রী ভারতবর্ষের ইতিহাসে বিরল। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা মনে করেন এইসব উলঙ্গ রাজাদের অঙ্গুলিহেলনে দেশের বুকে শীতলকুছির মতো ঘটনা ঘটে। কুম্ভ মেলায় করোনার ভয়াবহতার সংবাদ প্রকাশ্যে আনায় প্রজ্ঞা মিশ্রর মতো নির্ভিক সাংবাদিককে খুন হতে হয়। কুর্সি খোওয়াতে হয় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে। এন আর সির ফাঁদে ফেলে দেশবাসীকে বিদেশী বানাবার চক্রান্ত করা হয়। কৃষি আইন প্রয়োগ করে দেশের সবুজ বিপ্লবের কারিগরদের পেটে লাথি মারবার ব্যবস্থা করা হয়। হয় নোটবন্দি। তারপর কখনও কালো টাকা প্রত্যাবর্তন নয়তো সার্জিকাল স্ট্রাইকের কথা বলে মানুষের সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে তার দিকে নজর ঘোরাবার সুন্দর আয়োজন করা হয়। কিন্তু দুর্নীতি কখনও চাপা থাকে না। পাপ কখনও বাপ্ কেও ছাড়ে না। তাই ভাঁওতা দিয়ে আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশের জনগণের মন পাওয়া যায় না। জনগণ ব্যালটে তার জবাব দেবেই।


ভাবতে অবাক লাগে দেশের মানুষ যখন মরতে বসেছে, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যখন বলছে দেশের বুকে ঘনিয়ে এসেছে জাতীয় বিপর্যয়, তখন দেশের কর্ণধার কী করে চুপ করে বসে থাকতে পারেন।দেশের উন্নয়নে এবং জনগণের কল্যাণে তার সদর্থক ভূমিকা দেখার জন্য গোটা দেশ তাকিয়ে ছিল। কিন্তু "অস্বচ্ছতা, অব্যবস্থা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অগণতান্ত্রিকতা, নীতিপঙ্গুত্ব, বিশেষজ্ঞদের সাহায্য লইতে অনীহা" (আনন্দ বাজার পত্রিকা/ সম্পাদকীয় ১১/৫/২০২১ ) যার স্বভাব ধর্ম তার কাছ থেকে "আচ্ছে দিন" এর প্রত্যাশা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কি !

                                                লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক