চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

রাঢ় বাংলার গবেষক নীরদবরন সরকার এর জীবনাবসান


 

রাঢ় বাংলার গবেষক নীরদবরন সরকার এর জীবনাবসান


জগন্নাথ ভৌমিক, বর্ধমান : রাঢ় বাংলার গবেষক নীরদবরণ সরকারের জীবনাবসান হলো। শুক্রবার বিকেলে বর্ধমান শহরের কোটালহাটে নিজের বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছে ৮৩ বছর। নীরদবরণ সরকার বর্ধমানের ইতিহাস রচনায় আত্মদানের সঙ্গে বর্ধমান বিষয়ক প্রায় ৩০ টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। জীবনে বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। বর্ধমানের লোকসংস্কৃতির গবেষক, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক নীরদবরণ সরকার যিনি নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন প্রদত্ত সাহিত্য পুরস্কার শীলাদেবী বেলার স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০০১ সালে কলকাতা বাংলা একাডেমিতে লোক ও নারী সংস্কৃতির উপর গবেষণার ক্ষেত্রে (পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ) পদ্মা গঙ্গা পুরস্কার লাভ করেন।  ১৯৩৮ সালের ৩১ শে অক্টোবর বর্ধমান শহরের কোটালহাটে নীরদবরণ সরকার জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যের সাম্মানিক স্নাতক কর্মজীবনে শিক্ষকতা সহ নানান কাজে ঘুরেছেন রাঢ়বঙ্গের বিস্তীর্ণ প্রান্তর। তারপর টানা ৩৬ বছর বর্ধমান এমবিসি ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজিতে সুপারিনটেনডেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর পুরো সময় আত্মনিয়োগ করেন লোকসংস্কৃতির গবেষণায়। তিনি সবসময়ই বলতেন সুপ্রাচীন বঙ্গদেশের ঐতিহ্যমন্ডিত রাঢ় অঞ্চল নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। এই রাঢ় বঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শহর বর্ধমান। বর্ধমান রাজকাহিনী দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মানুষও জানেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই বেড়ানোর নেশা ছিল, তিনি রাঢ়বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ঘোরার সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করতেন। পরবর্তী সময়ে সেই তথ্যপঞ্জিই নীরদবরণ সরকারকে লোকসংস্কৃতির গবেষণায় উৎসাহিত করেছে। তিনি বলতেন তাঁর সহধর্মিণী সুজাতার সাহচর্য তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। শুধু এপার বাংলা নয় বাংলাদেশেও তার কাজকর্ম যথেষ্ট খ্যাতি পেয়েছে। বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনিসও নীরদবাবুর গবেষণা গ্রন্থের প্রশংসা করেছেন।




 নীরদবরণ সরকারের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলির মধ্যে 'বর্ধমান রাজ ইতিবৃত্ত' ত্রিভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই গ্রন্থে মোগল সম্রাট আকবর থেকে ব্রিটিশ শাসক লর্ড মাউন্টব্যাটেন পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ বছরের ইতিহাস বিস্তারিতভাবে পরিস্ফুট হয়েছে। এছাড়াও 'নগর বর্ধমানের দেবদেবী', ' বিস্তৃত রাঢ়ের বিলুপ্তকথন', 'আপন অন্তর্লোকে রাঢ়ের প্রাসঙ্গিকতা', 'রাঢ় বাংলার সংস্কৃতির ধারা' প্রভৃতি গ্রন্থ গুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাঢ়বঙ্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মাতাকে নিয়েও নানা আঙ্গিকে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। সাহিত্য বিনোদ পুরস্কারে ভূষিত নীরদবরণ সরকার শুধু একজন লোকসংস্কৃতির গবেষকই নন সংগীত, চিকিৎসাবিদ্যা এবং আরো নানাবিধ সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। মুক্ত মনের মানুষ নীরদ বাবু তার অমায়িক স্বভাবের জন্য সকলের কাছেই প্রিয়ভাজন ছিলেন। তিনি বলতেন, 'আমার সঙ্গীত চর্চা, আমার স্বপ্ন এই রাঢ় বাংলার সু নিবিড় ছায়ায় ছায়ায় ঢেকে থাক। আমি চাই না কোনও হ্যাগিওগ্রাফিক ভাবনায় প্রকাশ হোক আমার পরিচয়। 




বর্ধমান সর্বমঙ্গলামাতা মন্দির ট্রাস্টের সম্পাদক আইনজীবী সঞ্জয় ঘোষ এর কথায় নীরদবরন সরকারের মৃত্যুতে বর্ধমানের সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী সুজাতা, পুত্র ব্যাংক অফিসার পার্থ সরকার সহ পুত্রবধূ নাতি-নাতনি ও অসংখ্য গুনমুগ্ধ মানুষজনকে। এদিনই বর্ধমানের নির্মল ঝিল শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।