চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

একুশে নির্বাচনের প্রাক্কালে বৈশম্পায়ন ও জন্মেঞ্জয়ের কথকথা


 

একুশে নির্বাচনের প্রাক্কালে বৈশম্পায়ন ও জন্মেঞ্জয়ের কথকথা


🟣 বিশ্বরূপ দাস 


 ➡️ মহারাজ জন্মেঞ্জয়ের কথার প্রেক্ষিতে মহর্ষি বৈশম্পায়ন কহিলেন, "কলিযুগে খেলা হইবে বলিয়া একটি শব্দ আসিবে যাহা শুনিয়া লোক পুলকিত, আনন্দিত, ভীত, সন্ত্রস্থ, চিন্তিত, রোমাঞ্চিত, ঈর্ষিত, ধর্ষিত ও নেশাগ্রস্থ হইবেন । নেশার ঘোরে ভুলভাল বকিবেন। একে অপরকে শাষাইবেন। পূর্ব পুরুষের পিন্ডি চটকাইবেন। কেহ কেহ ঘর দোর ভুলিয়া রাস্তায় রাস্তায় ঝান্ডা লইয়া বনের মোষ তাড়াইয়া বেড়াইবেন। তাহার পর বিপিন বাবুর কারন সুধার মতো বিচিত্র রঙের জোয়ারে ভাসিবেন। ডুবিয়া ডুবিয়া জল খাইয়া এপার ওপার করিয়া পানি বদল করিবেন। পঞ্চমুখে বিভিন্ন নর দেবতা দেবীর বন্দনা গান গাহিয়া জয়ধ্বনি দিবেন। দেব দেবীরাও মন্দির মসজিদ গির্জা ত্যাগ করিয়া রথ, হুইল চেয়ার কিংবা বি এম ডাবলু তে বসিয়া জনগণের পূজা আদায়ের জন্য জলপাইগুড়ি থেকে জঙ্গলমহল, দাঁতন থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত তাহাদের গৃহে গৃহে ছুটিবেন। সেখানে পাত পাড়িয়া তাহাদের সাজানো নৈবেদ্য উদরাস্যাৎ করিবেন। প্রস্থানের পূর্বে দূরদর্শনের সামনে দর্শন দিয়া মুচকি হাসিয়া কতগুলি দার্শনিকসুলভ কথামৃত আওড়াইয়া উপবিষ্ট ভক্তবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবেন। সাথে সাথে তাহার (দেব দেবীর) নামে জয়ধ্বনি উঠিবে ।পুনঃ রথারোহন করিবার সময় পাদুকা হইতে বিভূতি ঝড়িয়া পড়িলে শিষ্যরা পরম ভক্তিতে তাহা শিরোধার্য করিয়া জীবন ধন্য করিবেন। ইহা লইয়া ভক্ত বৃন্দের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হইলে দেবতা প্রসন্নচিত্তে আশীর্বাদ করিয়া তাহাদের পদোন্নতি ঘোষণা করিবেন। তাঁহাদের আশীর্বাদে অর্ধ শিক্ষিত ডক্টরেট ডিগ্রি পাইবেন, অফিসার বাবু মর্জি মতো থানায় বদলি পাইয়া ভুঁড়ি বাগাইবেন। পরীক্ষা না দিয়াও শিক্ষার্থী পুলকিত চিত্তে চাকরির আনন্দ উপভোগ করিবেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হইলে পেট্রোল পাম্প ও মদের লাইসেন্স আপনার হস্তগত হইবে।নইলে নিদেন পক্ষে গৃহ, রাস্তা ও ব্রিজের টেন্ডার পাইয়া জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করিবেন। বৎসর ঘুরিতে না ঘুরিতে সেই গৃহ, রাস্তা ও সেতুর কোনও হদিস কেহ পাইবে না। তবুও জনগণ আপনার বন্দনা গান গাহিয়া বলিবেন, "দোষ কারো নয়তো মা "কিংবা তিনি নিজেই বলিবেন, "আমায় একটু জায়গা দাও মায়ের মন্দিরে বসি /আমি অনাহুত একজন অনেক দোষেতে দোষী /মায়ের মন্দিরে বসি "। অগত্যা তাইই আপনাকে করিতে হইবে। কারণ পূজারীর বড় কদর , তিনি না রহিলে যে কোনও দেবতার পূজা হইবে না। এই পূজা উপলক্ষ্যে জনতার ঢল নামিবে। বলিউড টলিউড থেকে শুরু করিয়া ক্রীড়াঙ্গন, নৃত্যাঙ্গন ও সংগীতাগণ হইতে মহাতারকারা ছুটিয়া আসিবেন। ভাতা, অনুদান ও প্রতিশ্রুতির বন্যায় আম জনতার ডুবিয়া মরিবার অবস্থা হইবে। বাড়ির আনাচে কানাচে ভূতের ও অভূতের পেয়াদারা আপনার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস ফেলিতে ফেলিতে বলিবে, "খাজনা দাও "। কখনও কখনও খাজনার চাইতে বাজনা বেশি হইবে । আপনি ভাবিয়া পাইবেন না, "খাজনা দিবো কিসে "। তখন শ্মশান হইতে মশান হইতে ঝোড়ো হাওয়া বলিয়া যাইবে, "ইজ্জত দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে"। তাঁহাদের ডাকে সাড়া না দিলে মাসিপিসির দল কৃষ্ণনাম শোনাইবে। 

নয়তো "খোকা ঘুমাইলো পাড়া জুড়াইলো " করিয়া ঘুম পাড়াইয়া রাখিবে। অন্যদিকে শিরোমণি চূড়ামণির দল একবাক্যে শিখা নাড়াইয়া হুঁশিয়ারী দিয়া বলিয়া যাইবেন, "বেহুঁশ যারা তাহারাই পবিত্র, হুঁশিয়ার যারা তাহারাই অশুচি। অতএব হুঁশিয়ার দের প্রতি উদাসীন থাকিও --প্রবুদ্ধিমিব সুপ্ত "। নয়তো ভূতের পেয়াদার মতো কেহ কেহ সোল্লাসে বলিয়া যাইবে "ঘানি এখনও অচল হয়নি "

শুনিয়া আপনার আত্মারাম খাঁচা ছাড়ার মতো অবস্থা হইবে। পাশ ফিরিয়া শুইয়া আপনি গভীর ঘুমে নিমগ্ন হইয়া স্বপ্ন দেখিবেন। দেখিবেন সারদা, নারদা, নোটবন্দি, টু-জী, বোফর্স, জি জা জি, নানুর, গড়বেতা, সাঁইবাড়ি, মরিচঝাঁপি, সিঙ্গুর, তাপসী মালিক, হাথরাশ, গুজরাত, পাঞ্জাব, কালো টাকা সুইস ব্যাঙ্ক, কয়লাকাণ্ডের মতো নানান কাণ্ড আপনাকে টা টা করিতে করিতে রঙ্গমঞ্চ হইতে বিদায় নিতেছে। আপনি চেষ্টা করিলেও তাহার নাগাল পাইতেছেন না‌। কেহই পাইবে  না । বুলবুলিতে বেবাক ধান খাইয়া যাইলেও ও কেহই দেখেননি। দেখিলেও ভাগ বাঁটোয়ারের লোভে চক্ষু বন্ধ করিয়া তাহারা ইষ্টনাম জপ করিতেছেন।নয়তো সীমান্তে আগুন লাগাইয়া তাহা নিভাইবার জন্য দমকল বাহিনীকে ডাকিয়া জনগণের দৃষ্টি ঘুরাইতেছেন। কয়েক প্রহর পর অবশ্য আপনার নিদ্রা ভঙ্গ হইবে। তখন গভীর পরিতৃপ্তির সঙ্গে ভাবিবেন এ সবই স্বপ্ন, বাস্তবে ইহার কোনও অস্তিত্ব নেই। এখানে সবাই সাধু, সতী,  সত্যবাদী ,  ন্যায়বাগিশ,  ধার্মিক শুধু আপনি আমি ছাড়া ।"

কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর মহারাজ জন্মেঞ্জয়ের প্রশ্নের উত্তরে মহর্ষি বৈশম্পায়ন আবার বলিবেন, "কলিযুগে শিক্ষা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামক কোনও বস্তু থাকিবে না। তাহা মানব অঙ্গের পিনা ও ককসিক্সের মতো নিষ্ক্রিয় হইয়া যাইবে। রাজনীতিই হইবে শিক্ষা লাভের আদর্শ প্রতিষ্ঠান ।এখান থেকেই লাভ করিতে হইবে সমস্ত বিষয়মুখী, সমাজমুখী, সমাজবিরোধী মুখী, প্রেম -রোমান্স- দাম্পত্য জীবনমুখী দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক

 বিদ্যা। মনে মনে জানিবেন ইহাই আপনাদের বিশ্বভারতী, প্রেসিডেন্সি, খড়গপুর, এইমস, কেমব্রিজ কিংবা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। যেন নবরত্নের পাঠশালা। কালিদাস, বরাহমিহির, খনা থেকে শুরু করিয়া চরক, শুশ্রুত, কৌটিল্য, দ্রোনাচার্য, বিদ্যাসাগর কে নেই এখানে । বলা যায় না অ্যারিস্টটল, গ্যালিলিও কিংবা নিউটনকেও এখানে পাইয়া যাইতে পারেন। ভয় নেই এখানকার গুরু মহাশয়রা বেত্র হস্তে নেত্র রাঙাইয়া শিক্ষা দান করেন না। সময়ে সময়ে শুধু সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো "খেলা হইবে", "টুম্পা সোনা 'কিংবা 'জয় সিরাম' বলিয়া ধ্বনি দিয়া থাকেন। সেই মহাধ্বনি মন প্রাণ দিয়া উচ্চারণ করিবার সাথে সাথে জীব সেবার নিমিত্ত তাহাদের প্রণামী বাক্সে সামান্য কিছু পরমার্থ দান করিলেই হইলো । ব্যস আপনি শিক্ষিত। তখন ব্যাসের মতো যতখুশি মহাভারত লিখুন, না হয় মোনালিসার মতো ছবি আঁকুন, নতুবা কোলিয়ারি হইতে কালো হীরা ভাঙা চোরা পথে আমদানি করিয়া রাঙা পথে অন্যত্র পাঠিয়ে দিন কেহই দেখিবে না। দেখিবেন মা লক্ষ্মী সদয় হইয়া আপনার চৌকাঠে আসিয়া হাজির হইয়াছে। তাহাকে বরণ করিয়া লইতে পারিলেই হইলো। শুধু তাহাই নহে ইচ্ছা করিলে সেই বিদ্যার বলে আপনি অনায়াসে মহাকাশ ভ্রমণ করিয়া মঙ্গলগ্রহে সফল অভিযান করিতে পারিবেন। চন্দ্রের বুকে ল্যান্ডিঙে নীল আমস্ট্রঙের প্রবলেম হইলেও আপনার কোনও অসুবিধা হইবে না। কারণ গুরুমুখী বিদ্যায় আপনি তো তখন রীতিমতো স্ট্রং। ইচ্ছা করিলে চাঁদের মাটিতে ফসল ফলাইয়া তাহা বঙ্গের কৃষকদের বিতরণ করিয়া ভোটের বৈতরণি পার হইতে পারিবেন। আই এ এস, আইপিএস-দের খৈনি প্রস্তুত করিয়া দিতে বলিবেন। সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকদের গৃহের জল তোলা থেকে শুরু করিয়া রাজারহাটে বাজার হাট করিয়া দিবার নির্দেশ দিতে পারিবেন । জেলা শিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের আপনার জয়ধ্বজা বহিবার নির্দেশ দিতে পারিবেন। মোদ্দা কথা হইলো আপনার ধী শক্তির নিকট তাবড় তাবড় আই পি এস, আই এ এস, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বহু ভাষাবিদ, চিত্র শিল্পী, গায়ক, নায়ক পরাস্ত হইবে। বিঃ দ্রঃ এই শিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক। তবে চিৎকার করিয়া পাড়া মাতাইবার মতো সুকন্ঠ থাকা আবশ্যক। তার সাথে দু'চার বছর ভূতের বেগার খাটার মানসিকতা থাকা চাই। নিদেনপক্ষে সব্যসাচীর মতো দুই হস্তে সামান্য কয়েকটি মেশিনপত্র চালাইবার অভিজ্ঞতা থাকিলেও চলিবে। ব্যস তাহা হইলে আপনার জ্ঞান অর্জন আটকায় কাহার সাধ্য।

ইহার মধ্যে শুনিতে পাইবেন কাহারা যেন সোনার বাংলা গড়িবার জন্য অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করিতেছেন। তাহার জন্য চলিতেছে জার্সি বদল ।কেহ কেহ সেই যজ্ঞে জল ঢালিয়া দিয়া যুদ্ধে জয়লাভের জন্য ঝাঁসির রানীর মতো "নানান প্রকল্প, সাথী হাতি আর দুয়ারে দরকারের মতো বিভিন্ন ব্রহ্মাস্ত্র লইয়া রাজ্যের নানান প্রান্তে ছুটিয়া চলিতেছেন। এই ক্রীড়ায় কে জিতবে আর কে হারিবে তাহা জানিবার জন্য আপনি অবশ্যই গৃহবন্দি প্রেমিকার মতো ছটফট করিবেন। অপেক্ষা আপনার ব্যর্থ হইবে না। মহাভারতীয় যুদ্ধ যতদিন না শেষ হইতেছে ততদিন কেষ্ট ঠাকুর, অর্জুন, দুর্যোধন, কর্ণ আর শকুনিদের প্রেমলীলা কীর্তন দেখিয়া চিত্ত পরিতৃপ্তি করিতে পারেন। নতুবা সর্বহারাদের, "টুম্পা সোনা/ একটা হাম্পি দে না'র মতো গান শুনিয়া 'হাতে হাত 'রাখিয়া 'সাব্বাস' 'আব্বাস 'বলিয়া সেক্যুলারটির আনন্দ উপভোগ করিতে পারেন। এরই মধ্যে আপনি শুনিতে পাইবেন কাহারা যেন চিৎকার করিয়া বলিতেছে 'তারা'নয় 'পাড়া'নয় ফুল ফুটিবে, ফুল ফুটিবে ।কিন্তু সেটা বনফুল না স্থলফুল না জলফুল তাহা সঠিক বুঝিতে পারিবেন না। কারণ কাল টা তো ভালো নয়। ভরা গ্রীষ্ম। তাই রুদ্র কালবৈশাখির ঝড়ে প্রশান্ত মহাসাগর ও তোলাপাড় হবার আশঙ্কা থেকেই যায়। সেখানে কারও কোনও মমতা কাজে লাগিবে না। তবু নীড়ে, তীরে ও কাননের মাঝে ফুল ফোটাইবার জন্য আকাশ হইতে যেমন হেভিওয়েট শিশির পড়িবে, তেমনি প্রশান্ত মহাসাগর হইতে জল আনিয়া কোনও কিশোর মালী পরম মমতায় তাহার মূলে জল সিঞ্চন করিবেন, অপরদিকেদক্ষিণ হস্তে কাস্তে ধরিয়া সাব্বাস মালিও মাঠে মাঠে ছুটিয়া কানন পরিচর্চা করিবার চেষ্টা করিবেন। ইহার পর এক অদ্ভুত মায়াজাল সৃষ্টি হইবে। সেই মায়াজালে পি সি সরকারের ম্যাজিকের মতো কেউ মঞ্চ হইতে ভ্যানিস হইয়া যাইবে। তাহার পর ভক্ত বৃন্দ রূপ ম্যাজিসিয়ানদের জাদুদন্ডের স্পর্শ অংকে কিংবা পঙ্কে নব কুসুমের জন্ম হইবে। কিন্তু কী সেই কুসুম তাহা এখন না জানিলেও চলিবে। তবে ফুল ফোটার পর তাহাকে বরণ করিয়া নেবার জন্য শুরু হইবে আরও এক মহায়ণ। তখন বাপি বাড়ি যা বলিয়া এক পক্ষ ছক্কা মারিয়া বোলারদের গ্যালারির বাইরে ফেলিবে। তখন কোনও গুগলিতে আর কাজ হইবে না। আপনি তাহা দেখিয়া পুলকিত চিত্তে বিষ্ণুদেবতার মতো পরম সুখে নিদ্রা যাইতে পারেন। নতুবা ভীষ্মের শরশয্যার মতো যন্ত্রনা দগ্ধ হৃদয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকিবেন। নয়তো কোনও ফকির দরবেশ বাউলের মতো হাতে একতারা নিয়ে জীবনের দোতারা বাজাতে বাজাতে বলবেন, "মন রে কৃষিকাজ জানো না /এমন মানব জমিন রইলো পতিত /আবাদ করলে ফলতো সোনা /মনরে কৃষিকাজ জানো না "।