চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন


 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন 


🟣 বিশ্বরূপ দাস 


 ➡️ আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাবার একটা বিশেষ দিন। সেই রীতি মেনেই জগতের সমস্ত নারীকে জানাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা। মনে রাখতে হবে নারীই হলো পুরুষের হ্লাদিনী শক্তি, জীবনের প্রথম পথ প্রদর্শক এবং বেড়ে ওঠার আধার। নারীই প্রেরণা দাত্রী, ভালোবাসার অনন্ত পথিক, প্রথম শিক্ষাগুরু। আমাদের জৈবিক কামনা বাসনা পরিতৃপ্তির অন্যতম মাধ্যম। নারী না থাকলে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত সৃষ্টি অধরা থেকে যেত। জীবের অস্তিত্ব বলতে কিছুই থাকতো না। পাওয়া যেত না নিবিড় শান্তি এবং নিশ্চিত আশ্রয়। তাই কোনও বিশেষ দিন নয় সারাবছর প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্ত সম্মান তাদের প্রাপ্য।

মনে রাখতে হবে নারীরা কারও দাস নয়, কারও কেনা গোলাম নয় এবং শুধু সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র নয়। একটু ভালোবাসা, একটু সম্মান পেলে তারাও এই পৃথিবীর মহান কর্মযজ্ঞে নিজেদের উজাড় করে দিতে পারে। তাই বোধহয় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছিলেন , "এই পৃথিবীতে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর অর্ধেক তার সৃজিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর"। নারী শক্তির অপার মহিমার কথা স্মরণ করে বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ বলেছিলেন "পাঁচ'শ পুরুষের দ্বারা ভারতবর্ষকে জয় করতে পঞ্চাশ বছর লাগতে পারে, কিন্তু পাঁচ'শ নারী দ্বারা তা কয়েক সপ্তাহেই সম্ভব।"

বিবেকানন্দ জানতেন "এ দেশের যত আইনকানুন, যত ভালোবাসা ,যত স্মৃতি সব মেয়েদের দাবিয়ে রাখার জন্য হয়েছে"। জানতেন, "পুরুষেরা নারীদের ভাগ্য গঠনের ভার গ্রহণ করাতেই নারী জাতির যত অনিষ্ট হয়েছে"। তাই তিনি বলতেন, "জগতের কল্যাণ স্ত্রী জাতির অভ্যুদয় না হলে সম্ভাবনা নেই। এক পক্ষে পক্ষীর উত্থান সম্ভব নয়"।

সত্যিই তাই। দেশের প্রকৃত উন্নতি করার জন্য নারীদের পুরুষ তান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পরাধীনতার খাঁচা থেকে মুক্ত করে আনতে হবে।দিতে হবে শিক্ষা, স্বাধীনতা এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।তবে হ্যাঁ দিন বদলেছে, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের মানসিকতার বদল হচ্ছে। তাই আজকের নারী আর আগের মতো গৃহকোন বন্দিনী নয়। মাঠে - ঘাটে, বন্দরে, জলে -স্থলে -অন্তরীক্ষে তারা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ছাপ রাখছেন। গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পাড়ি দিচ্ছে নারী। তাদেরই অসামান্য অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে বিশ্ব সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প, বিজ্ঞান, কৃষি। কিন্তু এতকিছু সত্বেও কন্যা ভ্রূণ হত্যা আটকানো যাচ্ছে না। আটকানো যাচ্ছে না ধর্ষণ। এমন কোন দিন নেই যে নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে না। পণ প্রথাও চলছে রমরমিয়ে। তাদের দিয়ে জোর করে করানো হচ্ছে দেহ ব্যবসা। একবিংশ শতাব্দির বুকে দাঁড়িয়ে একথা স্মরণ করতেই আমাদের লজ্জা হচ্ছে। ভাবুন সুশীল সমাজ। ভাবুন যুব সম্প্রদায়। ভাবুন দেশের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তাদের হাত দিয়েই শুরু হোক নারী জাতির নব জাগরণ। বিবেকানন্দ , বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো মনীষীরা যে আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে ছিলেন সেটা বয়ে নিয়ে চলুক এই প্রজন্মের তরুণ যুব সম্প্রদায়।স্বার্থক হোক তাদের স্বপ্ন ।

 হ্যাঁ আজ নারী দিবস। কত সভা , কত প্রতিশ্রুতি , কত মিছিল, কত গান হবে॥ কিন্তু রাত পোহাতে না পোহাতেই হয়তো গর্জে উঠবে তোমার আমার হাতের চাবুক ! পৃথিবীর অরণ্যে আবার কাল থেকেই হয়তো শুরু হবে শকুন্তলা কাহিনী ! হয়তো গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এসে তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে খুবলে খাবে সদ্য ফোটা পলাশের কুঁড়ি !হয়তো কলাপী পেখম মেলার আগেই তার রঙ্গিন ডানা গুলো ভেঙ্গে দেবে দুরন্ত কালবৈশাখী ! শনিতেই শুরু হবে অমঙ্গলের রাহুগ্রাস ! স্মার্ট ফোন, দূরবীন, ফাটা জিনস , মদের বোতল আর অব্যর্থ সমনোলীন তিলতিল করে হরণ করবে তোমার সতীত্ব। অব্যক্ত যন্ত্রণায় আর বুকফাটা কান্নায় তুমি তখন হলুদ ঘাস হয়ে যাবে। তোমার বিবর্ণ বৃক্ষে একটি সবুজ পাতাও আর ভয়ে চোখ মিলবে না। তোমার গা থেকে মুছে যাবে জলঙ্গির ঢেউ, কলমির গন্ধ ! খইয়ের ধান পড়ে থাকবে সোজনবোদীয়ার ঘাটে ! তোমার ধারাপাত, কথা-কাহিনী ইঁটভাটায় পাবে শিক্ষার অধিকার ! তারপর দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে তোমার ভবঘুরে বাবা মা সর্বস্ব বিকিয়ে তোমাকে পাঠাবে অজ্ঞাতবাসে চির আনন্দনিকেতনে ! এর পর হয়তো কোনোও এক ভিনদেশী নাবিক দারুচিনি দ্বীপের স্বপ্নদেখিয়ে নিয়ে যাবে তোমাকে কোনোও এক পদ্মাপারের আফ্রিকায় ! তারপর ...............সীতা, সাবিত্রী, জনা, প্রমীলা থেকে শুরু করে অন্নদাদি রাজলক্ষ্মী, মা আনন্দময়ী, চারুলতা, আরতি, বুলা, আশা, লতা, সুচিত্রা, প্রতিভা এবং মমতারা অভয় দিয়ে যাবে তোমাকে। বলবে ওঠো। চোখের জল মুছে নাও। কোমর বাঁধ। হাতে তুলে নাও লক্ষ্মীবাইয়ের তরবারী, গলায় বাঁধো সাতসুরের গিটার, মিছিলে মেলাও হাজার পা। জনারন্যে বলে ওঠো - '' অনেক তো হয়েছে শোষণ দুঃশাসন, এবার তোমায় করি শাষণ ''। উরু ভঙ্গ করে মরুতেই হবে নতুন মেরুকরণ। সেই সুদিনের আশায় হে নারী তোমার কাছে নতজানু হয়ে বলি, ''বাজাও নারী , বাজাও মা /বাজাও তোমার শঙ্খ /সেই সুরেতেই বেজে উঠুক /জাতির বিজয় ডঙ্ক/বাজাও মা তোমার হাতের শঙ্খ ॥