চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

ঘুড়ি ওড়ানোর সেই দিনগুলো


 

ঘুড়ি ওড়ানোর সেই দিনগুলো


🟣 অপূর্ব দাস


➡️ ছোট বেলায় অনেক বন্ধুকে ঘুড়ি ওড়াতে দেখেছি। তারা সবাই যে ভালো ঘুড়ির প্যাঁচ লড়তে পারতো তা অবশ্য নয়।  কয়েক জন বন্ধুকে বাসু'দার কাছে ঘুড়ির প্যাঁচ লড়া শিখতে দেখেছি। বাসুদেব ওরফে বাস'দা ভালো ফুটবল খেলতেন। ঘুড়ি ওড়ানোতেও তিনি ছিলেন পারদর্শী। ফুটবল খেলা থেকে এক সময় বাসু'দা অবসর নেন। তারপরে ঘুডি ওড়ানো থেকেও অবসর নেন তিনি। নিজে আর ঘুড়ি না ওড়ালেও অন্যদের ঘুড়ি উড়িয়ে প্যাঁচ লড়া শেখাতেন বাসু দা। তখন তিনি কোচ হিসেবে আমাদের পাড়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।  ঘুরির প্যাঁচ লড়ার কোচ বাস' দার কাছে প্যাঁচ লড়ার কৌশল শিখেছে নুটু এবং অন্যরা।

           ঘুড়ি ওড়ানোকে মজার খেলা হিসেবে ধরা হয়। তাই বলা যায়, ভ্যাবলা দা, গনেশ দা ছিলো ঘুড়ি ওড়ানোর ভালো খেলোয়াড়। ঘুড়ির প্যাঁচ লড়ার সময় গনেশ দা খুব জোরে সুতো টানতে পারতো। নিজের একটা ঘুড়ি দিয়ে অন্যদের দুই তিনটে ঘুড়ি কেটে দিতো গনেশ দা। একতাইয়া বা দেরতাইয়া নয়। ভ্যাবলা দা দোতাইয়া আর তিনতাইয়া ঘুড়ি ওড়াতো। বর্ধমানে অন্যদের থেকে নানুর ঘুড়ির দাম ছিলো বেশি। নানু দা দোতাইয়া ও তিনতাইয়া ঘুড়ি বানাতো। ভ্যাবলা দা নানুর ঘুড়ি কিনতো। হিরু দা আর ওর ভাই ঘুড়ি লপ্টাতে পারতো। কেটে উড়ে যাওয়া ঘুড়ি নিজের ঘুড়ি দিয়ে লপ্টে নামিয়ে আনতে পারতো হিরু দা আর খোকন। ঘুড়ি ওড়ানোয় ওদের  কুশলি খেলোয়াড় বলা যায়। 

    শীতকালে আকাশে নানা রংয়ের ঘুড়ি উড়তো। টুকাই, সৌরভ, পল্লব, গনেশ'দা, ভ্যাবলা'দা বাড়ির ছাদ থেকে ঘুড়ি ওড়াতো। শুধু ঘুড়ি ওড়ালেইতো হবে না। ঘুড়ি উড়িয়ে অন্য ঘুড়ির সঙ্গে প্যাঁচ লড়ে সেই ঘুড়ি কেটে  চিৎকার 'ভো কা টা'। তবেইতো আনন্দ। 

          অন্য ঘুড়ি কাটার জন্য চাই ভালো মাঞ্জা সুতো। গনেশ দা, ভ্যাবলা দা'রা নিজেরা মাঞ্জা সুতো বানাতো। মাঞ্জা সুতো বানানোয় বেশ তোরজোড় ছিলো। মিহি কাঁচের গুরো লাগতো মাঞ্জা সুতো তৈরী করতে। হামালদিস্তায় কাঁচ গুরো করা হতো। এরপরে লেই বানিয়ে তার সঙ্গে রংমিশিয়ে সুতোয় মাঞ্জা করা হতো। রোদের মধ্যে লাটাইয়ে মাঞ্জা সুতো গোটান হতো। দু'রকম লাটাই দেখেছি বলে মনে পড়ছে। চরকা লাটাই ও পাখি লাটাই। ঘুড়িতো অনেক রকম। লাল, সাদা, নীল, সবুজ  রংয়ের ঘুড়ি।  তিলকধারী, বগগা, পেটকাটি প্রভৃতি  ঘুড়ির নাম। মহানায়িকা ও মহানায়ক ঘুড়ি দেখেছি। ঘুড়ি কেনা আর মাঞ্জা সুতো বানানোয় টাকা লাগতো। সেই টাকা ঘুড়ি প্রেমি বন্ধুরা কীভাবে ম্যানেজ  করত সেটা আমার জানা নেই। ঘুড়ি ওড়ানোয় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থাকে। ঘুড়ি ওড়াবার সময় রেলিং বিহীন  ছাদ থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘুড়ি ধরার জন্য ছোট ছেলেদের বেহুস ভাবে রাস্তায় ছুটে যাওয়াতেও বিপদ থাকে। 

        পৌষ সংক্রান্তির দিন ও তার আগের দিন আকাশে অনেক ঘুড়ি উড়তে দেখা যেত। কম বয়সে বন্ধুদের মধ্যে অনেকে ছিল ক্রিকেটপ্রেমি ও ফুটবলপ্রেমি। বেশ কয়েক জন ছিল ঘুড়িপ্রেমি। বন্ধু তপু, রাখু, নুটু ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতো। তপু, রাখুকে কোন দিন ঘুড়ি ওড়ানোয় আগ্রহ দেখিনি। নুটুর ছিলো ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতি খুব ঝোক। ভ্রাতৃসম পল্লব, সৌরভ ঘুড়ি ওড়ানোয় পারদর্শী। ওরা বেশ ভালো ক্রিকেট খেলতো। 

         পৌষ সংক্রান্তির দিন বর্ধমানে ঘুড়ির মেলা। বড় বড় বাড়ির ছাদে ঘুড়ি লাটাই নিয়ে বন্ধুরা হাজির হতো। সেখান থেকে কয়েক জন মিলে ঘুড়ি ওড়ানো হতো। হাওয়ায় ঘুড়ি ওড়ে। হাওয়া কম থাকলে ঘুড়ি ওড়ানোয় অসূবিধা। হাওয়ার বেগ বেশি থাকলে ঘুড়ি আয়ত্তে রেখে ওড়ানোয় সমস্যা। ঠিক মতো হাওয়া থাকলে পৌষ সংক্রান্তির দিন ও তার আগের দিন অনেক ঘুড়ি উড়তো। ওই দিন ঘুড়ি ওড়ানোর মজার সঙ্গে যোগ হতো পিঠে পুলি খাওয়ার আনন্দ। পৌষ সংক্রান্তিতে সবার বাড়িতে মা-কাকিমা'দের বানানো নানা রকম পিঠে পুলির স্বাদই আলাদা। মেজ পিসি বানাতো দুধ পিঠে আর মায়ের হাতের পাটিসাপটা ছিলো অসাধারণ।