চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

'ঘরে ঘরে শেফ' অভিনব প্রতিযোগিতায় ইচ্ছে গ্রুপের নজির


 

'ঘরে ঘরে শেফ' অভিনব প্রতিযোগিতায় ইচ্ছে গ্রুপের নজির


অতনু হাজরা, জামালপুর : পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'ইচ্ছে'। যারা সারা বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পরিবেশের উপর এবং সমাজের নানা কাজ করে থাকে। এই সংস্থা গড়ে উঠেছে জামালপুরেরই একজন শিক্ষক প্রসেনজিৎ ঘোষ এর নেতৃত্বে। যিনি কানাই দা নামেই বেশি পরিচিত। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বেশির ভাগই স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়ে। তার সাথে আছেন সমাজের কিছু প্রতিষ্ঠিত মানুষ। স্থানীয় প্রশাসনও এগিয়ে এসেছে তাঁদের কাজে সহযোগিতার জন্য। জামালপুর জুড়ে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে জামালপুরকে প্লাস্টিক মুক্ত করার জন্য, চলে সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ। তারা ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচি করেচলেছে। এরই সাথে পুকুর পরিষ্কার, কোনো পশু বা বন্য প্রাণী অসুবিধায় পড়লে তাকে দ্রুত উদ্ধার করা। এছাড়াও তারা 'অন্নপূর্ণা' নামে একটি প্রকল্প চালায় যাতে ব্লকের ৭ জন এমন মানুষ যারা ঠিকমত খাবার জোগাড় করতে পারে না বা ভিক্ষা করে, তাদের বাড়িতে প্রতিদিন দু'বেলা রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া, আবার কখনোবা শীতে উপযুক্ত পোশাক না থাকা অসহায় মানুষদের বাড়িতে গিয়ে কম্বল পৌঁছে দেওয়া। এসবই তাদের ধারাবাহিক কার্যক্রম।



   সেই ইচ্ছা গ্রুপেরই একজন সদস্য সৌরভ ঘোষ লকডাউন সময়ে একটি অভিনব চিন্তা করে, বাড়ীর মহিলারা লকডাউন পরিস্থিতিতে একদম ঘরবন্দি। তাদের জন্য একটি অনলাইন রন্ধন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায় কিনা এই প্রস্তাব দেয় সে ইচ্ছে গ্রুপকে। আর তারপরই লকডাউন সময়ে মাসাধিককাল ব্যাপি অনলাইনে চলে 'ঘরে ঘরে শেফ' প্রতিযোগিতা। মহিলাদের জন্য হলেও পুরুষরাও অংশ গ্রহন করতে পেরেছিলেন। পুরো বিষয়টি দেখভাল করা বা সঞ্চালনা করে গ্রুপেরই সদস্যা মানসি বেরা। আজ সেই 'ঘরে ঘরে শেফ' রান্না প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় ১২ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে জামালপুরের রায় পাড়া মাঠে। এই অনুষ্ঠান একদমই নতুন জামালপুরবাসীর কাছে। স্বভাবতই অনুষ্ঠান ঘিরে সাধারণ মানুষের কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনে প্রচুর সংখ্যক মানুষ ভিড় জমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইচ্ছে গ্রুপের সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ (যাঁর কথা আগেই বলা হয়েছে), সহ সভাপতি অনিমেষ দত্ত যিনিও একজন স্বনামধন্য শিক্ষক, সম্পাদক সায়ন্ত ঘোষ, যুগ্ম সম্পাদক সৌভিক ঘোষ সহ সকল সদস্য সদস্যারা। প্রসেনজিৎ ঘোষ ও অনিমেষ দত্ত জানান, মূলত অন্নপূর্ণা প্রকল্প চালাতে গিয়েই এটি তাদের মাথায় আসে বাড়ির মহিলাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসার জন্যই আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তাঁরা। বিচারক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার জি এস ম্যারিয়টের শেফ মইনুল হাসান মল্লিক। তিনি ইচ্ছের আজকের প্রোগ্রামের ভূয়সী প্রশংসা করেন।




  পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান জানান, ইচ্ছে গ্রুপের কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি পরিচিত, এর আগেও তাদের প্রোগ্রামে এসেছেন তিনি। এই ধরণের ব্যতিক্রমি অনুষ্ঠানের জন্য তিনি ইচ্ছে গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান। তার সাথে প্রতিযোগী ১২ জনকেও অভিনন্দন জানান। ইচ্ছে গ্রুপ তাদের কাজ করার সুবিধার্থে পঞ্চায়েত সমিতির কাছে একটি মোটর ভ্যানের জন্য আবেদন করেছিল। আজকের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তিনি সেই মোটর ভ্যান দেবার প্রত্রিশুতি দেন। আজকের প্রতিযোগিতায় প্রথম হন কালনার মধুছন্দা ঘোষ। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিযোগীদের একটি মেমেন্টো, একটি গ্রোসারি কিট, একটি প্লাস্টিকের পরিবর্ত ডিস্পোজাল ক্যারির প্যাকেট এবং একটি বিশেষ স্মারক।প্ৰতিযোগিতার প্রথম স্থানাধিকারীনিকে আলাদা করে একটি বিশেষ মেমেন্টো ও একটি ইন্ডাকশন দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জামালপুরের রায়পাড়ার মানুষরা মঞ্চের পিছনেই পাড়াগত ভাবে পিকনিক করেন। তাঁরা সকলেই খুব খুশি এই ধরণের প্রোগ্রাম হওয়ার জন্য।