চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

নেতাজীর ১২৫ তম জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য


 

নেতাজীর ১২৫ তম জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য



 🟣 বিশ্বরূপ দাস



➡️ ভারতবর্ষের ক্ষণজন্মা বীর মহানায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মদিন আজ। শুধু আজ নয় জন্মের ১ লক্ষ ২৫ হাজার তম বর্ষ পরেও তিনি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক থাকবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মান যারা তাদের কর্ম ও ধর্মের মধ্য দিয়ে সভ্যতার ইতিহাসে রেখে যান ব্যতিক্রমী কৃতিত্বের স্বাক্ষর। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তাদেরই একজন।


 রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই কিংবদন্তী নায়ক ঘরে না ফিরলেও তাকে নিয়ে জনমানসে কৌতূহল আর উন্মাদনার শেষ নেই। ভারতবর্ষের মানুষ আজও জানতে চায় সত্যিই কী তাইহকু বিমান দুর্ঘটনায় তিনি এই মর্ত্য পৃথিবীর বুক থেকে চিরবিদায় নিয়েছিলেন। না নিজের মস্তিষ্ক প্রসূত এই বিমান দুর্ঘটনার পরিকল্পনা করে তিনি নিজেকে স্বার্থান্বেষী ভারতীয় রাজনীতি থেকে চিরতরে বহুদূরে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। যদি তাই হয় তাহলে কেন এই সন্ন্যাস ? ফৈজাবাদে গুমগুমি বাবার আড়ালে মানুষটি কী সত্যিই নেতাজী ? নানা প্রশ্ন মাথা চাড়া দেয় আজও তামাম দেশবাসীর মনের কন্দরে।উত্তর খুঁজবো আমরা।

আমাদের বিশ্বাস নেতাজী তাইহকু বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি। জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রক্ষিত চিতা ভস্মের ডি. এন. এ পরীক্ষা হলে সত্যাসত্য প্রমাণ হয়ে যাবে। স্বাধীনতার পরে দেশে কত সরকার এলো গেল। কিন্তু কোনও সরকারকেই (কেন্দ্র) সদর্থক ভূমিকা নিতে দেখা গেল না। এমনকি ফৈজাবাদে গুমগুমি বাবার নেপথ্যে কে ছিলেন তারও সি বি আই তদন্ত করলেন না কেউ।বরং কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেখানকার দলিল দস্তাবেজে চেপে দেওয়া হলো। বন্ধ হয়ে গেল নেতাজী সংক্রান্ত ফাইল। রাশিয়া এবং জাপান থেকে কেন আজও নেতাজী সংক্রান্ত ফাইলগুলো এদেশে নিয়ে আসা হলো না ?সরকারের এই অনীহার কারণ কী ? চলুন একটু পর্যালোচনা করা যাক।

1) নেতাজী অন্তর্ধান রহস্য জনসমক্ষে এলে দেশের উচ্চপদস্থ প্রবল পরাক্রমশালী নেতাদের ব্রিটিশ যোগ এবং ক্ষমতা ভোগ করার জন্য দেশভাগের ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে এসে যাবে। তাই তারা এ ব্যাপারে বছরের পর বছর মুখে কুলুপ এঁটে থেকেছেন।কোনও উচ্চ বাচ্য করেননি।

2) স্বাধীনতার পর কোনও কারণে নেতাজীর সন্ধান পাওয়া গেলে তাকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য গোটা দেশ উত্তাল হয়ে উঠবে সেকথা হাড়ে হাড়ে জানতেন জহরলাল থেকে জয়প্রকাশ নারায়ণ, ইন্দিরা গান্ধী থেকে অটল বিহারী বাজপেয়ী। কিন্তু তারা সেটা চাননি। কারণ ক্ষমতা বড় বালাই।

3) জাপানের রেনকোজি মন্দিরের চিতাভস্ম কিংবা গুমগুমি বাবার সত্যাসত্য প্রকাশ্যে এলে কেন্দ্রীয় সরকারের অপদাৰ্থতা আবার প্রকাশ্যে এসে যাবে এবং তার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়তে বাধ্য। তাই এক অনির্দেশিত অঙ্গুলি হেলনে তা হিমঘরে চলে গেছে।

4) নেতাজী ছিলেন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মধ্যবিত্ত এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থে আপোষহীন বিপ্লবী ভাবধারার প্রতিনিধি।তাই এহেন মানুষটি যদি জাতীয় রাজনীতির সর্বোচ্চ স্তরে চলে আসে তাহলে ক্ষমতাসীন কোটিপতি দেশনেতাদের সুখের মসনদ তাসের ঘরের মতো যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়বে তা তারা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন। তাই ইচ্ছা করেই নেতাজী সংক্রান্ত তথ্য তারা চেপে রেখেছেন।যতদিন এই ধরণের স্বার্থপ্রণোদিত বুর্জোয়া সরকার দেশের কর্ণধার থাকবে ততদিন নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য অধরা থেকে যাবে এ আর নতুন কথা কি।

এখন আর একটা প্রশ্ন জাগে মনে। এত কৃচ্ছ সাধন, এত বৈপ্লবিক আন্দোলন এবং অক্লান্ত যুদ্ধের পর তিনি কেন অন্তর্ধান করলেন ? 

ইচ্ছা করলেই তিনি তো দেশের যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদ পেতে পারতেন।পারতেন মানুষের ভালোবাসার আবির গায়ে মেখে জীবনের শেষ দিনগুলো বসন্ত উৎসবের মতো কাটাতে। হ্যাঁ পারতেন। সত্যিই পারতেন। কিন্তু ইচ্ছা করেই তিনি তা করেননি। আসলে তিনি সমকালে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের দেওয়াল লিখন পড়তে পেরেছিলেন। তিনি দেখতে পেয়েছিলেন পুঁজি আর পুঁজের আবর্জনায় দেশ যাচ্ছে ভরে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সংস্কৃতির যে উচ্চ আধারটা তেত্রিশ কোটি জনগণকে একসূত্রে বেঁধেছিল তা বিভেদের বিষ বাষ্পে হারিয়ে যাচ্ছে। শকুন হায়নার মতো দেশটাকে লুঠেপুটে খাবার জন্য ভেকধারী জননেতারা গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে জোট বাঁধছে।দেশের কথা, সাধারণ মানুষের কথা ভাববার লোক নেই। সেই সব মেকি দেশভক্তরা পারলে একহাতে তাকে ব্রিটিশপ্রভুর কাছে তুলে দিয়ে উপহারের ডালি নেবে অন্যহাতে। নেতাজী সেটা চাননি। তার পবিত্র অঙ্গ ব্রিটিশ পশুর স্পর্শে কলঙ্কিত হোক সেটা তার কাম্য ছিল না। তিনি মরে যাবেন সেও ভালো কিন্তু স্বাধনীতার পর ব্রিটিশদের হাতে নির্যাতনের স্বীকার হবেন না এই ছিল তার অন্যতম প্রতিজ্ঞা। তাছাড়া তিনি দ্বিধাবিভক্ত স্বাধনীতা তথা ধর্মের নামে দ্বিখন্ডিত দেশ কখনই দেখতে চাননি।তাই নীরবে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

তাঁর সেই ভাবনাকে আমরা স্যালুট জানাই। তিনি যেখানেই থাকুন সুখে থাকুন। আনন্দে থাকুন।শান্তিতে থাকুন।

তাঁর অমর দেশপ্রেমের মন্ত্রে আবার নতুন করে এক সাচ্চা ভারতীয় জাতির জন্ম হোক। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভেদ বৈষম্য মুছে যাক। গড়ে উঠুক এক জাতি এক প্রাণ এই শুভ কামনা রইলো।

জয়হিন্দ। বন্দে মাতরম।