চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

নয়াপ্রজন্ম বসুন্ধরায়

নয়া প্রজন্ম পত্রিকার কর্ণধার কাঞ্চন সরকারের সাথে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ফটো গ্যালারি পরিদর্শন করছেন।
 

নয়াপ্রজন্ম বসুন্ধরায়


🟣 বিশ্বরূপ দাস 


 ➡️ যে কোনো দেশের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিচ্ছবি হলো সংবাদপত্র। শুধু সমকালীন জীবনের ঘটনাচক্র নয়, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসারে যেসব পত্র পত্রিকার অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে তাদের মধ্যে বীরভূমের "নয়াপ্রজন্ম "পত্রিকা অন্যতমদের মধ্যে একটি। শুধু যুগোপযোগী নবচেতনার বার্তাদূত হিসাবে নয় বলিষ্ঠ, নির্ভীক, তথ্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের দিক দিয়ে এই পত্রিকাটি বিগত তিরিশ বছর ধরে গোটা রাজ্যে বিশেষভাবে পরিচিত।


একদিকে জেলার সংবাদ পরিবেশন অন্যদিকে উঠতি ও প্রতিষ্ঠিত কবি লেখকদের সাথে জনগণের পরিচিতি করিয়ে নেবার দুর্বার স্বপ্ন বুকে নিয়ে সিউড়ির চির তরুণ কাঞ্চন সরকারের হাত ধরে ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি বুধবার নয়াপ্রজন্ম পথ চলতে শুরু করে। তখন বীরভূমের নিজস্ব সংবাদপত্র বলতে তেমন কিছু ছিল না। শহর কলকাতা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রে জেলার খবর সেভাবে প্রকাশিত হতো না। উপেক্ষিত থেকে যেত বীরভূমের শিল্প সংস্কৃতি থেকে শুরু করে জেলার নানান সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।সেই অভাব পূরণ করার জন্য কাঞ্চনবাবু ১৬ হাজার টাকায় একটা ফ্ল্যাটবেট ডিমাই মেশিন কিনে খুড়তুতো দাদা রবীন্দ্রনাথ সরকার আর দাতা প্রেসের দুই কর্মী আনোয়ার হোসেন ও মনোতোষ বিশ্বাস কে সাথী করে এই মহান কাজে ব্রতী হন।

সেজন্য প্রথমে তারা সিউড়ি টিকাপাড়ায় একটি গলিতে মুক্তি মুখার্জীর স্ত্রী সীমা মুখার্জীর বাড়ি ভাড়া নেন। সেখানেই শুরু হয় তাদের স্বপ্নের অভিসার। সনাতন সৌ এবং তীর্থকুমার পৈতন্ডির মতো একঝাঁক নিষ্ঠাবান তরুণ সাংবাদিক তার সেই অভিসারের সহযাত্রী হন। অন্তরের দুর্বার ইচ্ছা আর নিষ্ঠা থাকলে যেকোনো অসাধ্য সাধন হয় তা 

নয়াপ্রজন্ম বারেবারে প্রমাণ করেছে। নিজের জীবন বিপন্ন করেও এখানকার স্বেচ্ছাসেবী সাংবাদিকরা জেলার আনাচে কানাচে প্রতিনিয়ত জমা হওয়া অজস্র সংবাদ অত্যন্ত দায়িত্ব সহকারে পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের ঘরে ঘরে। তাদের দৃষ্টিতে এবং ক্ষেত্র সমীক্ষায় ধরা পড়েছে বীরভূমের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, লোকাচার এবং কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া নানা অজানা ইতিহাস।


তবে এই পত্রিকা প্রকাশের আগে পত্রিকার কর্ণধার সম্পাদক কাঞ্চন সরকার চেয়েছিলেন পত্রিকাটি সম্বন্ধে জেলার সাধারণ মানুষের একটা ধারণা তৈরি হোক। তাই তাদের পত্রিকার মোটো ছিল "জেলাকে চিনুন, জেলাকে জানুন"। মূলতঃ সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চারপাতার একটা প্রচার সংখ্যা বের করেন। তারপর সেই বছরেই ১১ ডিসেম্বর বের হয় দ্বিতীয় প্রচার সংখ্যা বা প্রস্তুতি সংখ্যা। জন্মলগ্নে এই পত্রিকাটি ছিল চারপাতার।ছাপা হতো সাদা কালোয় লেটার প্রেসে। তারপর ১৯৯৭ সালে টিকাপাড়া ছেড়ে সিউড়ি মেন রোডে রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক কল্যাণ সেনের বাড়ির ছাদে অফিস স্থানান্তরিত হলে পত্রিকাটিরও কলেবরের পরিবর্তন হয়। চারপাতা থেকে ধীরে ধীরে সাবালকের মতো সে আট ও পরে বারো পাতার হয়ে ওঠে। ১৯৯৮ সালে আগস্ট মাসে প্রথম কম্পিউটারাইজড সংস্করণ শুরু হলে প্রচার ও প্রসারে নয়া প্রজন্ম জেলা ও মফস্বলের সব রেকর্ড কে পিছনে ফেলে দুর্বার গতিতে এগোতে থাকে। নয়াপ্রজন্মের অশ্বমেধের ঘোড়া বহুপথ অতিক্রম করে ১৬ পাতার চলমান ইতিহাসে এসে পৌঁছেছে। পৌঁছেছে শুধু নয় তার প্রতিটি পদক্ষেপে রেখেছে বৈচিত্র্যের স্বাক্ষর। প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি প্রথম দিকে নয়াপ্রজন্ম ছিল সাপ্তাহিক। পরে নানা কারণে তার পাক্ষিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়।যা এখনও সগৌরবে একইভাবে চলছে। পত্রিকাটির সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বীরভূমের এক গুণমুগ্ধ পাঠক ও কবি অসিকার রহমান জানাচ্ছেন, "নয়াপ্রজন্ম বীরভূমের সম্পদ।পত্রিকাটি আছে বলেই গ্রাম গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা নানা ইতিহাস, লোকসংষ্কৃতি থেকে শুরু করে সমাজ ও সভ্যতার খুঁটিনাটি তথ্য সাধারণ মানুষ জানতে পারছে।"


নয়াপ্রজন্ম বীরভূমের গর্ব, অহংকার এবং ঐশ্বর্যের প্রতীক সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর সারা গায়ে লেগে আছে লালমাটির গৈরিক রং। আছে পল্লীপ্রান্তরের সৌরভ, সুগন্ধ। তাই বীরভূমের সামাজিক, ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, শিল্প, শিক্ষা, বিজ্ঞানচর্চা, ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি প্রাধান্য পাবে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এগুলোর পাশাপাশি নয়াপ্রজন্ম সারাবছর বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিশেষ সংখ্যা বের করে থাকে। সে পুরভোট হোক আর বিধানসভা, লোকসভা কিংবা পঞ্চায়েত ভোট হোক নয়াপ্রজন্ম তার ফলাফল থেকে শুরু করে কারা কীরকম কাজ করেছে, কারা কেন পিছিয়ে পড়বে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেমন জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। তেমনি লোকসভার স্পিকার বীরভূমের কৃতী সন্তান সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, কবি কবিরুল ইসলাম, লিয়াকত আলী এবং বিশিষ্ট ছড়াকার আশানন্দন চট্টরাজের মতো বরেণ্য বীরভূমীদের নিয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে।একটা সময়ে এই পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে কিছু এক্সক্লুসিভ খবর প্রকাশ হতো। বিশ্বভারতীর দুর্নীতি থেকে শুরু করে প্রাইমারিতে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির খবর এই পত্রিকা প্রথম প্রকাশ্যে আনে।এছাড়াও কয়লা মাফিয়া রাজের পিছনে রাজনৈতিক যোগসাজস কিংবা বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডে এন.আই.এ তদন্ত করতে আসার মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রথম প্রকাশ করার দাবিদার নয়াপ্রজন্মের প্রাপ্য।

নয়াপ্রজন্ম কখনও কারও তাঁবেদারি করেনি। সত্য ঘটনা প্রকাশের জন্য নানা সময় তাকে শাসক এবং প্রশাসনের বিরাগ ভাজন হতে হয়েছে। হয়েছে নানা কোর্ট কেস, মামলা। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকার কিংবা বিবাদীপক্ষ কোনও মামলায় জয়ী হতে পারেনি। জয় হয়েছে সত্যের এবং মানবতার।


নয়া প্রজন্মের লিটল ম্যাগাজিন মেলায় কবি অরুণ চক্রবর্তীর সাথে সম্পাদক অজয় দাস।

এই পত্রিকার বর্তমান সম্পাদক অজয় দাস জানান, "সংবাদ সংগ্রহ এবং প্রকাশের জন্য তাদের সাংবাদিকদের দেওয়া হয়েছে অবাধ স্বাধনীতা। বলা হয়েছে তারা যদি পত্রিকার সম্পাদকের নামে কোনও সত্য অভিযোগ পায় তাও ছাপা হবে এই পত্রিকায়। "তাঁর এই বক্তব্য থেকে সহজেই অনুমান করা যায় সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নয়া প্রজন্ম কতখানি সাচ্চা এবং নির্ভীক। অজয়বাবুর সাথে কথা বলে জানা গেল বর্তমানে যারা রাজ্যের বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্রে সাংবাদিক হিসাবে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন তাদের অনেকেরই হাতেখড়ি এই নয়াপ্রজন্ম পত্রিকায়। এদের মধ্যে রয়েছেন আনন্দবাজার পত্রিকার অরুণ মুখোপাধ্যায়, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় (ইনি আগে বর্তমান পত্রিকায় ছিলেন), প্রতিদিন পত্রিকার নন্দন দত্ত, টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সোমেশ্বর বড়ালের মতো এক ঝাঁক নিষ্ঠাবান সাংবাদিক। তিনি আরও জানাচ্ছেন এই পত্রিকার হাত ধরেই লোকসংস্কৃতির গবেষক ডক্টর আদিত্য মুখোপাধ্যায় যেমন ডি. লিট পেয়েছেন তেমনি শিক্ষিকা বর্ণালী রুজ পেয়েছেন শিক্ষারত্ন পুরস্কার। এছাড়াও সমরেশ মন্ডল, কবিরুল ইসলাম, অতনু বর্মন, বিজয় দাস এবং নাসিম এ আলমের মতো কত শত কবি, লেখক, শিল্পী, নাট্যকার তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পেয়েছেন। বলতে দ্বিধা নেই বীরভূমের উঠতি লেখক-লেখিকাদের বড় হয়ে ওঠার অন্যতম দিশারী হলো এই পত্রিকা। এই প্রসঙ্গে ডক্টর আদিত্য মুখোপাধ্যায় জানান, "এখনও পর্যন্ত বীরভূমের শ্রেষ্ঠ কাগজ নয়াপ্রজন্ম। যে শুধু স্থানীয় সংবাদ পরিবেশনই করে না। বীরভূমের সাংস্কৃতিক জগতের স্বপ্ন পূরণ করে। বীরভূমের অসংখ্য লেখক লেখিকাদের সাহিত্য চর্চার সুযোগ করে দেয়। শুধু তাই নয় তার হাত ধরে জন্ম নেওয়া বসুন্ধরা এইমুহূর্তে সারা পশ্চিবঙ্গের মধ্যে অন্যতম একটি বিরল সাংস্কৃতিক মঞ্চ। আমি তার জন্য গর্ববোধ করি"।


নয়াপ্রজন্মের উদ্যোগে ২০১৮ সালে সিউড়িতে যে লিটল ম্যাগাজিন মেলা হয় সেই মেলায় সুধীর দত্ত, অরুণ চক্রবর্তী, রণজিৎ দাস, মৃদুল দাশগুপ্ত, কালীকৃষ্ণ গুহ, পবিত্র মুখোপাধ্যায়, শক্তিনাথ ঝা, পুলকেন্দু সিংহ এবং গৌতম ঘোষ দস্তিদারের মতো শতাধিক কবি লেখক গবেষকদের আগমনে যেন চাঁদের হাট বসেছিল।এই বছরেই সাঁইথিয়া পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে এই পত্রিকা শিক্ষক দিবসের দিনে গোটা জেলার শিক্ষক শিক্ষিকাদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে তাদের সম্মানিত করেন। গত বছর ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ২০১৯ সালে তারা একইভাবে সিউড়ি পুরসভার সাথে যৌথভাবে এলাকার সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাকে সংবর্ধনা দেন। 


উদ্যমী, উৎসাহী, সৃষ্টিশীল, সংস্কৃতি মনস্ক মানুষদের চিন্তা ভাবনা কোনও একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। কাঞ্চন সরকার তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি চেয়েছিলেন দূষণের ভারে জর্জরিত পৃথিবী আবার সবুজ হোক। এ পৃথিবী হোক শিশুর বাসযোগ্য। কচি কাঁচারা নিজের মতো করে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাক। শত ফুলে বিকশিত হোক আগামীর ভবিষ্যৎ। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তিনি ৯৮-৯৯ সালে শুরু করেছিলেন নৃত্য-গীত-আবৃত্তির প্রশিক্ষন কেন্দ্র "সবুজের অভিযান"।নয়া প্রজন্মের আহবান শিশুদের বেড়ে ওঠার এবং আধমরা দের ঘা মেরে বাঁচাবার সেই পবিত্র সবুজ অঙ্গনে পা রেখেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, লোক সভার স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, ইতিহাসবিদ প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র, শিশু সাহিত্যিক পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, ম্যান ইন ইন্ডিয়া পত্রিকার সম্পাদক রেবতীমোহন সরকার, খড়গপুর আইআইটির ডিরেক্টর অমিতাভ ঘোষ থেকে শুরু করে সাহিত্যিক অম্লান দত্ত এবং বিজ্ঞানী আনন্দমোহন চক্রবর্তীর মতো অসংখ্য গুণীজন।



 সেখানে সব পেয়েছির দেশে কচি কাঁচারা যেখানে আনন্দে মেতে উঠতো সেই প্রাঙ্গনেই শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার জন্য একটি অত্যাধুনিক প্রেক্ষাগৃহ গড়ে তোলার ইচ্ছা ছিল পত্রিকার কর্ণধার সম্পাদক কাঞ্চন বাবুর। সেই ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে তিনি জেলা এবং জেলার বাইরে বিভিন্ন মানুষ এবং সংগঠনের কাছে আবেদন জানান। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে সমাজের সব শ্রেণির মানুষ। এগিয়ে আসে জেলা পরিষদ সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান। তাদেরই অর্থানুকূল্যে তিনি ২০১৫ সালে বর্তমান বসুন্ধরা প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছরে এই প্রেক্ষাগৃহের কাজ প্রায় শেষের পথে। আর কিছুদিনের মধ্যেই হবে এর শুভ দ্বারোদঘাটন। বসুন্ধরা খুলে দেওয়া হবে সর্ব সাধারণের জন্য। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, বৈভব, বৈচিত্র্য আর নজরকাড়া ব্যবস্থাবনায় এই প্রেক্ষাগৃহটি রাজ্যের যে কোনও প্রেক্ষাগৃহকে যে টেক্কা দেবে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কি নেই এখানে। বসুন্ধরায় প্রবেশ করলেই আপনি দেখতে পাবেন ৩০০ আসন বিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহ 'বসুন্ধরা'। রয়েছে 'বর্ণপরিচয়' নামাঙ্কিত ১০০ আসনের আলোচনা কক্ষ। রয়েছে তিনটি আর্ট গ্যালারি, ফটো গ্যালারি, দুটি ক্যাফেটেরিয়া এবং দুটি ভি.আই. পি গেস্টরুম সহ ৪০ শয্যার অতিথিনিবাস। এছাড়াও রয়েছে দুটি সাজঘর যার প্রত্যেকটি ঘরে ১২ জনের মেক আপ করার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে যাতে ৮ জন করে পুরুষ ও মহিলা শিল্পী একসাথে বিশ্রাম নিতে পারেন তার ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রেক্ষগৃহে দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য রয়েছে ৩ টি ফ্রি প্যাসেজ জোন, ধ্যানকক্ষ, ১৪ টি শৌচাগার, ৩২ টি ফায়ার এক্সটেনগুইসার। প্রেক্ষাগৃহ এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা ও নজরদারির জন্য রয়েছে ১৬ টি সিসিটিভি ক্যামেরা। রয়েছে স্মোকিং এলার্ম, পর্যাপ্ত পানীয় জল, দুটি সাধারণ পাঠাগার, জেলার গ্রন্থ সংগ্রহের প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে ৩ টি স্টল। রয়েছে আধুনিক বিদ্যুৎ বন্টন ও আলো শব্দ প্রক্ষেপনের ব্যবস্থা, ৪ টি প্রবেশ পথ ও বাইরে বেরোবার সিঁড়ি ছাড়া এবং লিফটের ব্যবস্থা।অতিথি আপ্যায়নের জন্য যেমন রয়েছে ২টি পৃথক আপ্যায়ন কক্ষ তেমনি বরণীয় ও স্মরণীয় মানুষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেবার জন্য "পুষ্পাঞ্জলি"নামে একটি পৃথক পরিসর তৈরি করা হয়েছে। মূল মঞ্চে সিনেমার পর্দা ছাড়াও রয়েছে স্বনিয়ন্ত্রিত ৩ টি পর্দা, থ্রি টায়ার স্টেজ ক্রাফট, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, লাইট ও প্রজেক্টের সহ রিমোট সিস্টেম কন্ট্রোলরুম। এই প্রসঙ্গে বীরভূমের কৃতি সন্তান মিরাক্কেল খ্যাত অতনু বর্মন জানান, "এককালে বীরভূমের স্বপ্ন ছিল এক ছাদের তলায় পুরো সাংস্কৃতিক কর্ম কান্ড থাকবে। যেটা সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল সেই অসাধ্য সাধন করেছেন কাঞ্চন বাবু। নানাজনের নানা বিদ্রুপ, কটূক্তি উপেক্ষা করে, পাহাড়প্রমাণ বাধা পেরিয়ে সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় অদম্য মানসিক জোরে তিনি রূপকথার রাজপুত্রের মতো সেই অসাধ্য সাধন করেছেন। বীরভূমবাসীকে এনে দিয়েছেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ"। বীরভূমের আর এক প্রথিতযশা কবি সমরেশ মন্ডল জানান, 

"নয়াপ্রজন্ম এবং বসুন্ধরার মতো বিশ্বমঞ্চকে কাঞ্চন নিজের সংসার মনে করেছে। তাই জাগতিক জীবনে নিজের সংসার গড়ার ইচ্ছাকে অবহেলায় উপেক্ষা করেছে। ও যা কাজ করেছে তা এক কথায় অনবদ্য, অসাধারণ। কোনও প্রশংসায় ওর পক্ষে যথেষ্ঠ নয়। এরকম কাজের ছেলে, লড়াকু ছেলে ,সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্ন ছেলে পেলে আমি একটা নয় একশ একুশজনকে পালন করতে রাজি আছি"।

                                                     ছবি : এ্যালবাম থেকে।