চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

"বিষ চলে যাক বিশে ভালো কাটুক একুশে"


 

"বিষ চলে যাক বিশে

ভালো কাটুক একুশে"


🟣 বিশ্বরূপ দাস


 ➡️ বর্ষশেষ। নতুন বছর কে স্বাগত জানাতে তৈরি নেটিজনেরা। পাড়ায় পাড়ায় সেই উন্মাদনা না থাকলেও রয়েছে ছোটখাটো নানা অনুষ্ঠান, খানা পিনা। আসছে নতুন বছর। তাকে বরণ করে নিতে হবে। বিশে হোক বিষক্ষয়। আসুক নতুন একুশ।সেই প্রত্যাশাকে সামনে রেখে নতুন বছরকে বরণ করে নেবার জন্য রাত জাগবে আবাল বৃদ্ধ বনিতা।গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, পার্ক, সি-বিচ, ক্যাথিড্রাল, শপিং মল থেকে শুরু করে পাহাড়ের আনাচে কানাচে মানুষ থিক থিক করছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষ্মী থাকার জন্য। আর হবেই না কেন দীর্ঘ লক ডাউনের পর কমবেশি সবাই পেয়েছে একটু স্বাধীনতা। তাই ছুটির দিনে পকেটে স্যানিটাইজার, মাস্ক কিংবা ফেসশিল্ড নিয়ে কচি কাঁচারাও বাবা মায়েদের হাত ধরে বেরিয়েছে।তাছাড়া প্রকৃতির সাথে প্রেমালাপ করার লোভ বাঙালি সামলাবে কি করে। হোটেলগুলোতেও তিল ধারণের জায়গা নেই। শহরের কাফে, বার, রেস্টুরেন্টেও একই অবস্থা। খুশি উপচে পড়ছে দোকানদারদের। তার উপর এ বছর বেশ জমিয়ে শীত পড়েছে। তাই শিক কাবাবের সাথে ওল্ড মগের বোতলে চুমুক দিতে দিতে বর্ষবরণ টা নেহাত মন্দ হবে না। তার সাথে যদি একটু নাচা গানার ব্যবস্থা থাকে তাহলে তো কথায় নেই। একেবারে জমে ক্ষীর। অবশ্য এর মাঝে কিছু প্রাচীনপন্থী আছেন যারা এইসব কাবাব, ওল্ড মগের নামশুনে নাক সিঁটকাবেন। তাদের জন্য না হয় ঝালমুড়ি কিংবা কফি, পকোড়া থাক। থাক সেই মান্ধাতার আমলে হুঁকো। না হয় শিবের প্রসাদ। যার পাতায় পাতায় রস।


এইসব উন্মাদনা দেখলে বা হৈ হুল্লোড় শুনলে আপনার মনে হবে না করোনা বলে কখনও কোনও অতিমারী আমাদের দেশে এসেছিল বা আছে। মনে হবে লক্ষ লক্ষ মানুষের উন্মাদনার মাঝে লক্ষ বছর আগে চাপা পড়ে গেছে সেই মারণ ভাইরাস ! মনে হবে কোনও এক অদৃশ্য শক্তি তাকে কাঁঠাল ফেরা করে ফেরে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। সেটাই হোক। লক্ষ লক্ষ কর্মহীন মানুষের আন্দোলিত বাহুতে আবার শিল্পে, কৃষিতে, কলকারখানায় আসুক জোয়ার। নববধূর ম্লান মুখ ফের হাসি খুশিতে ভরে উঠুক। পরিয়ায়ীরা ফিরে যাক তাদের কর্মস্থানে। মৃত্যুর দুয়ারে পড়ুক কাঁটা।দেশের যমুনারা তাদের ভাইয়ের কপালে এঁকে দিক ভালোবাসার অমর ফোঁটা। আর আক্ষেপ নয়, হতাশা নয়, ক্রন্দন নয়। কোমর বেঁধে হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।

"এ তুফান ভারী 

দিতে হবে পারি

নিতে হবে তরী পার "।


এ তরী জীবন তরী। নানা রূপে রসে রঙে ভরে তুলবার জন্য আমাদের কত না প্রয়াস। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। অনেকেরই "সবদিন হয় না বাজার"।"হেসে খেলে কষ্ট করে "তাদের দিন কেটে যায় "সাধারণ ভাত কাপড়ে"।তাই তাদের কাছে নতুন বছর আর বিগত বছরের মধ্যে কোনও ফারাক নেই। তারা জানে বছরের পর বছর এলেও তাদের ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন হবে না। আমফনে তাদের ঘর উড়ে গেলে কিংবা বন্যায় শস্য ক্ষেত ভেসে গেলেও তারা পুনর্বাসন পেয়েও পাবে না। সেই টাকা যাবে নেতা মন্ত্রীর ঘরে। তাই ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে তারা লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে না।সেই কারণে মাইক বাজিয়ে, পাড়া জাগিয়ে তারা বর্ষবরণ করে না। বরং সেই টাকায় তারা শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা করে।


নতুন বছর আসছে ঠিকই। তার কাছে প্রত্যাশাও আমাদের অনেক। কিন্তু যে বছর গেল তা বিগত কয়েক শতাব্দীতে এমনটি ঘটিয়েছে বলে মনে হয় না। ধনে প্রাণে শেষ করে দিয়ে গেল। বছরের শুরু থেকে শেষ এই বিশ তার বিষ নিঃশ্বাসে জগৎ ও জীবনকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। একদিকে করোনা ভাইরাস অন্যদিকে ইন্দ-চীন সংঘর্ষ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন CAA এর জন্য দেশজুড়ে বিক্ষোভ, যোগীর উত্তরপ্রদেশে ধর্ষিতা দলিত তরুণী হাথরাসের নির্মমভাবে জিভ কেটে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া, রাম মন্দিরে ভূমি পূজা সহ বাবরি ধ্বংসের মামলায় লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরোলিমোহন যোশী এবং উমা ভারতীর মতো ৩২ জন নেতা মন্ত্রীর বেনজির বেকসুর খালাস, অভিনেতা সুশান্ত সিংহের অকালমৃত্যু, আমফন ঘূর্ণিঝড় এবং কৃষি আইনের প্রতিবাদে দিল্লির রাজপথে কৃষকদের লাগাতর বিক্ষোভ দেশের বুকে পিঠে পেরেক ঠুকে যেন দগদগে ঘা করে দিয়ে গেল। সেই ক্ষত কিভাবে আমরা সারাবো সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।


তবে নতুন বছর এলেই পুরাতন কে আমরা ভুলতে চাই। পিঠে পুলি পার্বনের উৎসবে, নলেন গুড়ের মন মাতানো গন্ধে আর বনভোজনের আনন্দে পুরাতনের গ্লানি ভেসে যাক। পার্কে পার্কে কচি কাঁচাদের ভিড়ে আনন্দ মুখরিত হোক শহর থেকে পল্লীপ্রান্তর। রং বেরঙের শীত পোশাকে যুবক যুবতী মেতে উঠুক নতুন জীবন অভিসারে।আমাদের যেন বলতে না হয়,

"হে মহারাজ, মহাপ্রভু

নতুন বছর আসলো তবু

নেইকো ঘরে খুদের গুঁড়ো নেইকো কড়ি

কেমন করে তোমায় রাজা তোয়াজ করি"


বরং তার বদলে কবি শরদিন্দু কর্মকারের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে করে-

"পুরাতন আজ সব ধুয়ে যাক

যা ছিল ধরার পঙ্ক

নব নব সুরে এই ধরাতলে

বাজুক বিজয় শঙ্খ"