চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

আবারও প্রকাশ্যে এলো ইউ আই টি'র বিরুদ্ধে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অনৈতিক কাজ



আবারও প্রকাশ্যে এলো ইউ আই টি'র বিরুদ্ধে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অনৈতিক কাজ


ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, সংবাদ প্রভাতী : ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা ইউ আই টি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বের ধন। অথচ বর্তমানে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও বিমাতৃ সূলভ আচরণে সেই মূল্যবান সম্পদ নিয়ে শুরু হয়েছে ছেলে খেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন রাজবাটি ক্যাম্পাসের অন্দরে কানপাতলে কানাঘুষো অনেক কথাই কানে আসছে। বিশ্বাস না হলেও ইউ আই টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানা কাজ কর্ম প্রকাশ্যে আসতেই বর্ধমানবাসীর বিদ্বজ্জনে ক্ষোভের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইউ আই টি নিয়ে ইতিপূর্বে বঞ্চনার অভিযোগে বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় উঠছে। এরই মাঝে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অনৈতিক কাজ সামনে এল যা আমাদের আগের রিপোর্টের ভিত আরো শক্ত করল। বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইউ-আই-টি'র অধ্যক্ষ প্রফেসর অভিজিৎ মিত্র গত ২৩ ডিসেম্বর ইউ আই টি ক্যাম্পাসের ভিতরে এক বছর আগে বিডিএ-র করা এক রাস্তা নিয়ে বিডিএ-র চেয়ারম্যান ডঃ রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে এক চিঠি দিয়েছেন যার প্রতি লাইনে জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিমাতৃসুলভ ব্যবহার।  



ইউ-আই-টি ক্যাম্পাসের উত্তর-পূর্ব দিকের জি টি রোড সংলগ্ন পাঁচিল দীর্ঘদিন ধরে ভগ্নদশায় পড়ে আছে যা অর্থাভাবে ইউ আই টি করে উঠতে পারে নি। সেই সুযোগে অনেক অস্থায়ী দোকান সেখানে গজিয়ে উঠেছে। এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে বারবার চিঠি দেওয়া সত্তেও তারা সেই পাঁচিল করে দিতে রাজি হন নি যেহেতু তাদের চোখে ইউ আই টি ‘সেলফ-ফিনান্সিং’ কলেজ। গত ২০১৮ সালে ইউ আই টি'র অধ্যক্ষ হিসেবে প্রফেসর অভিজিৎ মিত্র কাজে যোগ দেবার পর এই নিয়ে ডঃ রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে কয়েকবার অনুরোধ করেন। এবং এটাও বলেন যে জি টি রোড চওড়া হবার পর ইউ আই টি'র জি টি রোড সংলগ্ন প্রবেশপথ বিপদসঙ্কুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তখন বিডিএ-র চেয়ারম্যান হিসেবে বিধায়ক রবিরঞ্জনবাবু ঠিক করেন প্রথমে ইউ আই টি'র ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মিদের জন্য এক নিজস্ব রাস্তা বানিয়ে দেওয়া হবে, এবং পরবর্তীকালে জি টি রোড সংলগ্ন ঐ পাঁচিল ভালভাবে তুলে দেওয়া হবে। সেইমত তিনি তিরিশ লক্ষ টাকার আর্থিক মঞ্জুরি দেন। এবং রাস্তার জন্য যেহেতু আগেই বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এক নক্সা ছিল, বিডিএ-র সিভিল কন্ট্রাক্টর সেইমত ২০১৯-এর অক্টোবরে রাস্তার কাজ শুরু করেন। কিন্তু এই রাস্তার কাজ শুরু হতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার ও ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনীয়ার আপত্তি তোলেন। ডেকে পাঠানো হয় বিডিএ-র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ারকে। সেই মিটিংয়ে ইউ আই টি'র অধ্যক্ষকে জানানো হয় ইউ আই টি'র জন্য রাস্তা তৈরি করতে হলে ইউ আই টি'র বরাদ্দ জমির ভেতরেই করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির ভেতর দিয়ে করা যাবে না। ফলে রাস্তার কাজ বন্ধ রাখতে হয়। তখন বিডিএ-র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার জানিয়ে দেন যে বিডিএ-র নিয়ম অনুযায়ী কাজ শুরু করার পর বড়জোর সাত দিন তা বন্ধ রাখা যাবে। তারপর চালু না হলে বরাদ্দ টাকা আবার বিডিএ-তে ফেরৎ চলে যাবে। সেই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল ২০১৯-এর নভেম্বরে সিদ্ধান্ত নেয় যে ইউ আই টি'র বিকল্প রাস্তা তৈরি করতে হবে উত্তর-পূর্ব দিকের জিটি রোড সংলগ্ন পাঁচিলের ভিতর দিকে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনীয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সাত দিনের ভিতর বিডিএ-র কাছে এই নতুন পথের নক্সা দিয়ে দেবার। কিন্তু ইউনিভার্সিটি ইঞ্জিনীয়ার সেই দায়িত্ব সঠিক সময়ে পালন করেন নি। ফলে ইউ আই টি'র অধ্যক্ষ বাধ্য হয়ে বিডিএ-কে আবার এক চিঠি দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকের জিটি রোড সংলগ্ন পাঁচিলের ভিতর বরাবর গোলাপবাগ মোড় পর্যন্ত সেই রাস্তা তৈরির কাজ চালু করে দিতে অনুরোধ করেন যাতে আর্থিক অনুদান ফেরৎ চলে না যায়। এবং সেই অনুযায়ী বিডিএ-র কন্ট্রাক্টর ২০১৯-এর ডিসেম্বরে রাস্তার কাজ শেষ করে চলে যান। অস্থায়ীভাবে রাস্তা দিয়ে চলাচল শুরু হয়। ঠিক হয়, পরবর্ত্তীকালে আবার ফান্ড এলে রাস্তার মুখে গেট ও সিকিওরিটি রুম তৈরি করে দেওয়া হবে। কিন্তু এবছর সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ হঠাৎ দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউ আই টি'র উত্তর-পূর্ব পাঁচিল সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব সীমানায় ইউ আই টি অধ্যক্ষকে কিছু না জানিয়েই গোলাপবাগ মোড় থেকে এস বি আই এটিএম অব্ধি এক বিশাল পাঁচিল তুলতে শুরু করেছে। যা সম্পূর্ণরূপে আড়াল করে দেয় বিডিএ-র করা রাস্তা। এবং ঐ রাস্তার মুখে পাঁচিল উঠে যাওয়ায় সেই রাস্তা আর কোনভাবেই ইউ আই টি'র ছাত্রছাত্রী ও কর্মিরা ব্যবহার করতে পারবে না।


এই নিয়ে গত ১৬ অক্টোবর ইউ আই টি'র অধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এক অফিস নোট দেন এবং অনুরোধ করেন যে বিশ্ববিদ্যালয় যেন তাদের জন্য বিডিএ-র করা এই রাস্তা নিকটবর্ত্তী গেট পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন যাতে তা আবার ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু আজ অব্ধি উপাচার্যের তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অন্যায় কাজের প্রতিকার করে সঠিক ব্যবস্থা করে দেবার আশ্বাস সমেত কোন উত্তর আসে নি। তাই বাধ্য হয়ে ইউ আই টি'র অধ্যক্ষ এবার সুবিচার চাইলেন বিডিএ-র চেয়ারম্যান ডঃ রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। রাস্তা তৈরি হল অথচ বিশ্ববিদ্যালয় তা পাঁচিল তুলে আড়াল করে দিল, তাহলে ইউ আই টি'র ছাত্রছাত্রী ও কর্মিরা কিভাবে যাতায়াত করবেন ? তাদের কি জিটি রোড সংলগ্নগেট দিয়ে বিপদসঙ্কুল প্রবেশপথ দিয়েই যাতায়াত করতে হবে ?


ইউ-আই-টির অধ্যক্ষ এছাড়াও ২৩ ডিসেম্বর দেখা করেন বর্ধমানের জেলাশাসকের সঙ্গে এবং ইউ আই টি-কে সরকারি অর্থসাহায্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির অধীনে সম্পূর্ণভাবে নেওয়ার জন্য তার দপ্তরে এক বিশেষ অনুরোধপত্র দেন।



 এখন এই পাঁচিল পর্ব নিয়ে আমাদের তিনটে প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় টাকা দিচ্ছে না বলে বাইরে থেকে অর্থসাহায্য এনে ইউ আই টি'র অধ্যক্ষ যখন এই ইনস্টিটিউটকে মাথা তুলে দাঁড় করানোর জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ওনাকে সাহায্য করার বদলে বাধা কেন দেওয়া হচ্ছে ? তৈরি রাস্তার সামনে এভাবে হঠাৎ অন্যায়ভাবে পাঁচিল তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে সরকারি টাকার যেভাবে অপচয় করা হল, তার জন্য জবাবদিহি কে করবে এবং আদৌ কারো শাস্তি হবে কি ? এবং এইসব ঘটনা জানার পরেও সরকার কি চোখ বুজে থাকবে ?