চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ আনলেন ইউ আই টি'র অধ্যক্ষ


 

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ আনলেন ইউ আই টি'র অধ্যক্ষ 


ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, সংবাদ প্রভাতী : ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা ইউ আই টি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি কি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে ? কিন্তু হঠাৎ করে কেন এমন আশঙ্কা। আসলে গত কয়েক বছরে ইউ আই টি'র প্রতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি তেমনই আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। ১৬ ডিসেম্বর ইউ আই টি'র অধ্যক্ষ প্রফেসর অভিজিৎ মিত্র'র বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে লেখা চিঠির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাহলে কি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি নিজেদের অধীনে রাখতে চাইছে না, নাকি অন্য কিছু।


বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এক চাঞ্চল্যকর বঞ্চনার অভিযোগ এনেছেন ইউ আই টি'র অধ্যক্ষ প্রফেসর অভিজিৎ মিত্র। ১৯৯৮ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন একজিকিউটিভ কাউন্সিল ফ্যাকাল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির অধীনে গোলাপবাগে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা ইউ আই টি খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন একজিকিউটিভ কাউন্সিল আবার সিদ্ধান্ত নেয় ইউ-আই-টি'র অন্তর্গত প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সাহায্যে চলবে এবং সরকারী নিয়ম মেনে চলবে। ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ইউ আই টি'র অন্তর্গত ছ’টি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত স্বাধীন বিভাগের তকমা দেওয়া হয়। এবং ২০১২ সাল অব্ধি ইউ-আই-টিতে যত ছাত্র-ছাত্রী ম্যানেজমেন্ট কোটায় ভর্তি হয়েছে, সেই সমস্ত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা করা আছে, যার তৎকালীন অর্থমূল্য ছিল ১০ কোটি টাকার বেশি।


কিন্তু এখন যখন ইউ আই টি'র আর্থিক মন্দা চলছে, তখন সাহায্য করার বদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান একজিকিউটিভ কাউন্সিল ইউ আই টি'র থেকে মুখ সম্পূর্ণ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে। বারবার বলা সত্বেও তারা ইউ আই টি'র আর্থিক দায়ভার নিতে অস্বীকার করছে, ২০০০ সালে অঙ্গিকারবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এখন বিশ্ববিদ্যালয় ইউ আই টির অন্তর্গত কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে না, এমনকি গুণগত উৎকর্ষ বাড়ানোর জন্য যা যা করা উচিৎ, যেমন ইউ আই টি-তে পি এইচ ডি কোর্স চালু করা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটাও ইউ আই টি'র জন্য অনুমোদন দিতে রাজী হচ্ছে না। উল্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত থেকে ইউ আই টি'কে ছেড়ে দেবার জন্য এক কমিটি তৈরি করা হয়েছে যেখানে এমন লোকেদের রাখা হয়েছে যাদের সঙ্গে ইউ আই টি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সম্পর্ক নেই। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় আরো সাতটি স্নাতকোত্তর বিষয় ও তার জন্য ৫৬ জন শিক্ষক নিয়োগ করার জন্য রাজ্য সরকারের থেকে আর্থিক অনুমোদন এনেছে, যার মধ্যে ফিজিক্স বিভাগে ‘ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ কোর্সে ৭ জন শিক্ষক নিয়োগের অনুমতিও নেওয়া হয়েছে। অথচ এই দীর্ঘ দু’দশক জুড়ে ইউ আই টি'র ৫২ টি শিক্ষক পদে আর্থিক অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে কখনো রাজ্য সরকারের কাছে তদ্বির বা সুপারিশ করা হয়নি। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এটা ভালভাবেই জানা আছে যে ইউ আই টিতে ‘ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, দু-রকম কোর্সই আছে। এর থেকে বোঝা যায় যে বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে ইউ আই টি'র প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে, যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানটি আর লাভজনক নয়।


এইরকম চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে ইউ-আই-টির অধ্যক্ষ প্রফেসর অভিজিৎ মিত্র গত ১৬ ডিসেম্বর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর নিমাই চন্দ্র সাহাকে এক চিঠি দিয়েছেন। তার প্রতিলিপি দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসক ও বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়কের দপ্তরে। যদিও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও আমরা ফোনে ইউ আই টি'র অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। 


সংবাদ প্রভাতীর তরফ থেকে আমরা আন্তরিকভাবে এটাই চাই যে সরকার বা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এবং ২১ বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠান ইউ আই টি, যা বর্ধমান শহরের একমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং যেখান থেকে এযাবৎ অন্তত ৫০০০ ছাত্র-ছাত্রী পাস করে দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, তা যেন খুব শিগগির সরকারি আর্থিক আনুকূল্য লাভ করে এবং তার শিক্ষক পদগুলিও যেন সরকারি আর্থিক অনুমোদন পায়। বেসরকারি হাতে চলে গেলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মুকুট থেকে একটি মূল্যবান পালক খসে পড়বে।