চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

শতবর্ষের আলোকে খোসবাগানে বোস বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো


 

শতবর্ষের আলোকে খোসবাগানে বোস বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো


🔸 জগন্নাথ ভৌমিক, বর্ধমান


 ➡️ শহর বর্ধমানের খোসবাগানে বোস বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোর এবছর একশো বছর পূর্তি। কিন্তু শতবর্ষের এই পুজোর প্রেক্ষাপটটা কি ? আর সেটা জানতেই হাজির হয়েছিলাম খোসবাগানের বোস বাড়িতে। পরিবারের উদয়চাঁদ বোস ও বিশ্বরঞ্জন বোসের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানা যায়, ১৯২১ সালে এই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিকুঞ্জবালা দেবী। এখানে বোস বাড়ির মেয়ে রূপেই পূজিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী। বর্তমান প্রজন্ম অর্থাৎ যারা এই পুজো এখন করছেন সেই বোস পরিবারের উদয়চাঁদ, বিশ্বরঞ্জন, হৃদয়রঞ্জন ও নিমাই বোস'দের প্রপিতামহ যোগীন্দ্র চন্দ্র বোসের স্ত্রী নিকুঞ্জবালা দেবীর কন্যা সন্তান না থাকায় আক্ষেপ ছিল। একদিন রাতে একটি ছোট মেয়ে রূপে দেবী জগদ্ধাত্রী স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন। সেই বছরই প্রতিমা গড়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেন। ৩ বছর পুজো করার পর তিনি দুরারোগ্য ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর যোগীন্দ্রবাবু মনস্থির করেন পুজো বন্ধ করে দেবেন।




 সেই সময় তাঁরই পুত্রবধূ প্রমথনাথ বোসের স্ত্রী দীনতারিনী বোস পুজোর দায়িত্ব নেন। প্রমথনাথবাবুরা ছিলেন দুই ভাই। আরেকজন মন্মথনাথ বোস। প্রমথনাথ বোসের তিনপুত্র। তারাপদ, শ্যামাপদ এবং বিমল কৃষ্ণ বোস। তাদের ছেলেমেয়েদের উদ্যোগেই পরম্পরায় সেই পুজো আজও হচ্ছে পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখেই। ১৯৯৭ সাল থেকে উদয়চাঁদ, বিশ্বরঞ্জন, হৃদয়রঞ্জন, নিমাই এবং চিত্ত বোসরা পুজোর দায়িত্ব নেন। চাকরী ও কাজের সূত্রে পরিবার বিচ্ছিন্ন হলেও খোসবাগানের বোস বাড়ির পুজো আজও একান্নবর্তী। যে যেখানেই থাকুকনা কেন, জগদ্ধাত্রী পুজোতে সকলে একসাথে মিলিত হবেই। এবং এই পুজোই হয়ে ওঠে পারিবারিক মিলন উৎসব। 





শহর বর্ধমানে খোসবাগানের বোস বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো হয় সম্পূর্ণ বৈষ্ণবমতে। পুজোর বিশেষত্ব শোভাযাত্রায় নিরঞ্জন। এবছর শতবর্ষ পূর্তিতে পুজো হওয়ার কথা ছিল মহাসমারোহে। কিন্তু করোনা আবহ সবকিছু ওলোট-পালোট করে দিল। উদয়চাঁদ বোস ও বিশ্বরঞ্জন বোস'রা বলেন, ২০২০ সাল অভিশপ্ত। করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও এবছর তাদের খুড়তুতো ভাই স্বপন বোস এবং বড়বৌদি রীতা বোস প্রয়াত হয়েছেন। ফলে কারো মন ভালো নেই। যাই হোক শতবর্ষ পূর্তির পুজো হবে কোনও রকম আরম্বর ছাড়াই, সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই। সাদামাটা পুজো হলেও আচার-বিধি সবই হবে যথাযথ নিয়ম মেনে। বোস বাড়ির পুজোয় সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো হয় একদিনেই। উপাচারে ফল, মিষ্টি সহ নানা সামগ্রীর সঙ্গে বাড়ির তৈরি নারকেল নাড়ু থাকবেই। পুজোর সামগ্রিক আয়োজনে বাড়ির মেয়েরাই আন্তরিকতার সঙ্গে সব কিছু করে থাকে। সোমা বোস, সুজাতা বোস, মিতা বোস'দের সঙ্গে কাবেরী, পিউ, পাপিয়া, ইন্দ্রানী'দের পাশাপাশি রাজশেখর, অনন্যা ও সুদেষ্ণা'রা সব কাজে হাত লাগায়। পুজোর সময় শুধু পরিবারের সদস্যদেরই ৭০ থেকে ৮০ টি পাত পড়ে প্রতিদিন। এরপর আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে বন্ধু-বান্ধব। সব মিলিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজো বোস পরিবারের এক অনন্য মিলন উৎসব। এক বছরের পুজো শেষ হওয়ার সঙ্গেই সবাই অপেক্ষা করে থাকে পরের বছরের জন্য। এভাবেই পরম্পরায় পঞ্চমপুরুষে চলছে বোস বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো।