চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

করোনা কেড়ে নিল সিপিআইএমের জাঁদরেল নেতাকে



করোনা কেড়ে নিল সিপিআইএমের জাঁদরেল নেতাকে 


ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, সংবাদ প্রভাতী : করোনা আক্রান্ত হয়ে সিপিআই(এম) নেতা আব্দার রাজ্জাক মণ্ডল প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। ২৫ নভেম্বর দুর্গাপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে রাত ১০টা ২০ মিনিটে প্রয়াত হন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরেই কিডনি ও সুগারের রোগে ভুগছিলেন। তাঁর এই আকস্মিক প্রয়াণে সিপিআইএমের নেতা-কর্মীরা গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। 
 আব্দার রাজ্জাক মণ্ডল অবিভক্ত বর্ধমান জেলার ও বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার সিপিআইএম পার্টির জেলা সম্পাদকণ্ডলীর সদস্য ছিলেন । তিনি কৃষক ফ্রন্টের রাজ্যের অগ্রণী নেতৃত্ব ছিলেন। গত শতকের ছয় ও সাতের দশকে সন্ত্রাসের আবহে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বামপন্থার প্রতি আকৃষ্ট হন। দেশের স্বাধীনতা লাভের আগেই ৫ জুলাই,১৯৪৭ সালে পারাজে তাঁর জন্ম। রামগোপালপুর স্কুলে তিনি পড়াশুনা করেন। পরে গুসকরা কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে আইনেও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। সাধারণভাবে ধনী কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তৎকালীন কৃষক আন্দোলন ও গণ আন্দোলনের প্রবাহে তিনি কলেজে ছাত্র ফেডারেশনের কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন। ১৯৬৯-১৯৭০ সালে গুসকরা কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের বর্ধমান জেলা সম্পাদক হন । ১৯৬৯ সালেই তিনি সিপিআইএম পার্টি সদস্যপদ অর্জন করেছিলেন। বামফ্রন্ট সরকার আসার পর তিনি কয়েক বছর বর্ধমান কোর্টে ‌আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু এই পেশায় নিজেকে নিয়োজিত না করে তিনি পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হিসাবে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি পার্টির লোকাল কমিটির সম্পাদক, ১৯৯৫ সালে বুদবুদ-গলসীর জোনাল কমিটির সম্পাদক এবং জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি পার্টির সাংগঠনিক কাজের সাথে কৃষকদের মধ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। ক্রমান্বয়ে অবিভক্ত বর্ধমান জেলার কৃষক ফ্রন্টের তিনি স্বাভাবিক নেতায় পরিণত হন। ২০০৬ সালে তিনি জেলা কৃষক সভার সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি প্রাদেশিক কৃষক সভার সহ-সভাপতি ও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সি কে সি-র সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালে পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় কৃষক ফ্রন্ট ছাড়াও তিনি সমবায় আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার প্রশ্নে অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। জেলায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিকাশে বাম ঐক্য সুদৃঢ় রাখতে বামফ্রন্টের বিভিন্ন শরিক দলগুলির সঙ্গে তাঁর নিবিড় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

  বর্তমান এই অস্বাভাবিক ও জটিল পরিস্থিতির সময় আব্দার রাজ্জাক মণ্ডলের মৃত্যু সিপিআইএম পার্টির জেলায় গণআন্দোলনের ক্ষেত্রে এক অপূরনীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন দলের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির নেতৃত্ব। গভীর শ্রদ্ধার সাথে প্রয়াত আব্দার রাজ্জাক মণ্ডলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্র, কন্যাসহ পরিবারের সকল সদস্য এবং শুভানুধ্যায়ীদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছে সিপিআইএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটি।
 তাঁর জীবনাবসানে দলের জেলা দপ্তরে ও তাঁর গ্রামের বাড়িতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কোভিড প্রটোকল মেনে তাঁর মরদেহে সিপিআইএম পার্টির রক্ত পতাকা দেওয়া হয় ও মাল্যদান করা হয়। শ্রদ্ধা জানান দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষ, আভাস রায়চৌধুরী, রাজ্য কমিটির সদস্য ও জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক, প্রাক্তন জেলা সম্পাদক ও রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদার, রাজ্য কমিটির সদস্য সৈয়দ হোসেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গণেশ চৌধুরী, তাপস সরকার,অপূর্ব চ্যাটার্জী এবং জেলা কমিটির সদস্য সাইদুল হক, কমল সরকার, দীপঙ্কর দে, সুপর্ণা ব্যানার্জী ও বিভিন্ন গণফ্রন্টের নেতৃত্ব।