সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর
জীবনাবসান
ডিজিটাল ডেস্ক রিপোর্ট, সংবাদ প্রভাতী : কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় - এর জীবনাবসান। ৬ অক্টোবর তাঁর শরীরে করোনা ধরা পড়ার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনা কে জয় করে বাড়ি ফিরে আসার পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে বেলভিউ নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। আজ দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক শোকবার্তায় বলেছেন, বাংলার তথা ভারতের চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তী নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাংলার সকল মানুষের হয়ে আমি আমাদের গভীর মর্মবেদনা প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। যে প্রতিভাবান মানুষদের জন্য বিশ্বের দরবারে আমরা প্রতিনিধিত্ব পেয়েছি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন।
জগৎবরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের চোদ্দটি ছবি সহ তিনি দু'শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলি হল অপুর সংসার, চারুলতা, অভিযান, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণশত্রু, গণদেবতা, ঝিন্দের বন্দী, তিন ভুবনের পারে, ক্ষুধিত পাষাণ, কোনি ইত্যাদি।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একাধারে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র ও মঞ্চাভিনেতা, পাশাপাশি অসামান্য বাচিক শিল্পী, কবি, লেখক, নাট্যকার এবং নাট্যনির্দেশক।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে সারা জীবনের অবদানের জন্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, ২০১৫ সালে টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (হল অফ ফেম) ও ২০১৭ সালে 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মানে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি তাঁর অসামান্য অভিনয়ের জন্য পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি টেগোর রত্ন অ্যাওয়ার্ড সহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ফ্রান্স সরকার শ্রীচট্টোপাধ্যায়কে ২০১৮ সালে তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মান- 'লিজিয়ন দ্য অনার'- এ ভূষিত করে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোকবার্তায় আরও বলেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ও প্রীতির সম্পর্ক ছিল। আমাদের আমন্ত্রণে তিনি বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার গ্রহণ করতে নজরুল মঞ্চে যেমন আমাদের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আবার পাশাপাশি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকেছেন। তাঁর সসম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ, আন্তরিক ব্যবহারে তিনি সকল সময়ে আমাদের চিত্ত স্পর্শ করেছেন।
তাঁর মৃত্যু বাংলার জনজীবনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করল।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার-পরিজন ও অসংখ্য অনুরাগীর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি ।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে শুরু করে সাহিত্য-সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষজন শোকস্তব্ধ। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার সংস্কৃতি জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। 'সংবাদ প্রভাতী' পরিবারের পক্ষ থেকেও আমরা বিশেষ শোকজ্ঞাপন করার সঙ্গে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।