চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দু'শো বছর পূর্তিতে কাব্যিক শ্রদ্ধাঞ্জলি



ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দু'শো বছর পূর্তিতে কাব্যিক শ্রদ্ধাঞ্জলি


কবিতার মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন 🔸 শ্যামলবরণ সাহা (চিত্রকর ও কবি), 🔸 বিশ্বরূপ দাস (শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক),  🔸অন্তরা দাঁ (শিক্ষিকা ও বাচিক শিল্পী), 🔸 রাধামাধব মন্ডল (গবেষক ও সাংবাদিক) এবং 🔸 অতনু হাজরা (শিক্ষক ও সাংবাদিক)। 🔸 স্কেচ : জয়েন্দ্র ভৌমিক (পঞ্চম শ্রেণী, বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল)




রক্ত মাংসের ঈশ্বর

শ্যামলবরণ সাহা

আপনার দু'শো বছর .......
অথচ আমাদের কেউ কেউ এখনো বয়স লুকায়,
বেশিদিন চাকরি করবে বলে।

চারপাশ দেখে শুনে আমাদের মনে হচ্ছে --
পরস্পর পিঠ চুলকানোর চেয়ে
'মহৎশিল্প' আর কিছু নেই

আমাদের ঘরের উঠোনে রজনীগন্ধা, শ্বেত করবী
বনের বিধবা মেয়ে হয়ে
হাত - পা ছড়িয়ে কাঁদছে .....

সরস্বতী আজ নিজেই ধর্ষিতা,
কামপোকা নির্লজ্জের মতো উড়ে বেড়াচ্ছে --
শিক্ষা নিকেতনে,
গুরুগ্রাসে জব্দ গ্রাম থেকে পড়তে আসা মেয়েটি !

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আপনি আমাদের --
রক্ত মাংসের ঈশ্বর !
আপনার পায়ের ধুলো নিয়ে বারুদ,
আর শিড়দাঁড়া দিয়ে
আমাদের বন্দুকের নল বানানোর কথা ছিল।

দু'শো বছরের গনগনে সূর্য
আমাদের দেখে লজ্জা পাচ্ছে,
আজ মেঘলা আকাশের নীচে
অন্ধকারের ছোট ভাই জন্মদিনের মালা নিয়ে
ছুটে আসছে ....
আজ যে ভাই
কাল সে ভাইরাস হয়ে যাচ্ছে ! .....


বিদ্যাসাগর

বিশ্বরূপ দাস

পাহাড় টলানো ঢেউ দেখেছেন কেউ?
দেখেছেন শান্ত সুন্দর নক্ষত্রের আলো?
শব্দগুলো হাতের মুঠোয় বজ্র কঠিন
যেন পাঞ্চজন্য শঙ্খ।
বেদনার মুহূর্তগুলো নিবিড় আসন্নতায়
পড়েনি ঘুমিয়ে।
বদলে যায়নি মমত্বের ইতিহাস।
বাংলার ঘাসে বসে শোনা যায়
সিংহ শিশুর ব্রজবিলাস।


চারপাশে শকুনের দল
ছিঁড়ে খায় বিধবার প্রাণ
কখনও পড়ন্ত রোদের আলোয়
মোড়লে মোড়লে লেখে 
বাল বিবাহের আলাপন।
অসহ্য যন্ত্রণায় শরীরের পাকে পাকে
জেগে ওঠে সমুদ্র গর্জন।
তারই প্রবল স্রোতে
ভেঙে যায় জাহান্নামের দর্পণ।

বিদ্যা তো অনেকেই ধরে
মানুষ হয় কজন ?
সাগর সেঁচে মুক্ত দিলেন যিনি
পাঠশালায় করালেন বর্ণ পরিচয়
তিনিই মানুষ, তিনিই দেবতা
তিনিই বিদ্যাসাগর।


সে পুরুষ নারীবাদী

অন্তরা দাঁ

যখন ল্যাপটপ আর কিন্ডলে 
ঘুরতে-ফিরতে মন খুলে 
ঘাড় গুঁজে খুব উদাসীন, বসন্তদিন 

নেটফ্লিক্সের রঙিন মুভি 
কেপরি-টপে বং-জেনারেশনের কন্যে 
হোঁচট খাচ্ছে ফেমিনিজমের চৌকাঠে 

শতাব্দী-প্রাচীন বঙ্গে তখন 
সন্ধে নামে! 
কালিমতী তার বিষাদ-কাজল মুছে 
আঙুলের সিঁদূরটুকু ছুঁইয়েছিল 
এলোখোঁপার চুলে 
আজকের আনন্দবাজারে পাত্রপাত্রী'র 
বিজ্ঞাপনের ঘটে লেগে আছে তা! 

বীরসিংহে'র নারীবাদী সেই পুরুষের জন্য
আভূমি প্রণাম রাখলাম 

কি-বোর্ডে, ই-বুকে যতই আঙুল খেলুক মেয়ে
বর্ণপরিচয় আমাদের আধার-কার্ড।


বর্ণপরিচয়

রাধামাধব মণ্ডল

এখনও সন্ধ্যেবেলার ঝকঝকে আলোয়,
শিশুপাঠ্যে, তোমার অক্ষরের স্বপ্নে
 আগামীর জয় হয়।

#

স্বপ্নের আলোয়, বোনা হয় দিনের রোদ,
পথেরকাঁটা, আরও অনেক আগামীতে পৌঁছাতে
সাহসের উজ্জ্বল আলোয়, তোমার নাম!

#

তোমার মাথা, বুদ্ধির রূপ তুলে ধরে,
আজও বহুজাতিক মিছিলের শুরু ও শেষে
তোমার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।

#

বীরসিংহের এই সিংহশাবককে 
আজও শ্রদ্ধায় রাখে দেশ;
তোমারই নিজস্বী গুণে, তোমাকেই খুঁজি বার বার।

#

এসো একবাংলার সকাল শুরু করি, 
বর্ণপরিচয় দিয়ে।


বিদ্যাসাগর

অতনু হাজরা

বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর বীরসিংহের বীর
জন্ম থেকে আমৃত্যু উচ্চ তোমার শির।

বর্ণ পরিচয় করালে মোদের তোমার 'বর্ণপরিচয়' এ
বোধের উদয় হলো মোদের তোমার 'বোধোদয়' এ।

সকল বঙ্গবাসী তাদের শিক্ষাগুরু তুমি
তোমায় জন্ম দিয়ে ধন্য মোদের বঙ্গভূমি।

শাস্ত্র পড়ে বিধান দিলে বিবাহ বিধবার
আইন হলো তারপরেতেই ঘুচলো হাহাকার।

তুমিই প্রথম বুঝেছিলে নারীশিক্ষা দরকার
তোমার মতেই মত দিল সেই সেদিন ব্রিটিশ সরকার।

সারা বাংলায় খুললে তুমি মেয়েদেরই স্কুল
নারী জাগরণ ঘটবেই যে বুঝতে করোনি ভুল।

তোমায় ধরেই বাঙালি যে স্বাবলম্বী হলো
সব বাঙালি প্রণাম করে বিদ্যাসাগর বলো।

                           *****