Image Courtesy : webmd.com
"হাঁটুর ব্যথা"-- সম্পর্কিত একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা
🔸 ডাঃ এন. সি মন্ডল
➡️ মানব শরীরের কাঠামো পরিকাঠামো স্থাপত্যবিদ্যার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই কাঠামো আমাদের সমগ্র শরীরকে একটি বাড়ির মত সোজা করে ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই কাঠামোকে প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন দিকে ঘোরাতে ফেরাতে পারি যেটা মানুষের তৈরি বাড়ি পারে না। শরীরের এই কাঠামো দুটি পিলারের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। এই পিলার দুটি হচ্ছে আমাদের পা। প্রতিটি মেকানিক্যাল যন্ত্র বা মেশিন তা গাড়ি, সাইকেল, স্কুটার যাই হোক না কেন,ব্যবহার করতে করতে যত পুরাতন হয় তার মধ্যে দেখা দেয় ক্ষয়। এই ক্ষয় বাড়তে থাকে যদি আমরা ঐ সকল যন্ত্রের অপব্যবহার বা বেশি ব্যবহার করি। ঠিক সেইরকম ক্ষয় দেখা দেয় আমাদের হাঁটুর মধ্যে। হাঁটু যেহেতু শরীরের ভার বহন করে সেহেতু এমনিতেই হাঁটুর উপর চাপ বেশি পড়ে। শরীরের ওজন বইতে বইতে ও শরীরের ওজন বেশি হলে পেট,কোমর, হিপ ভারী হয়ে গেলে হাঁটুর জয়েন্ট বা সন্ধিস্থল এবং কার্টিলেজের ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকে এবং শুরু হয় হাঁটুর বেদনা দায়ক যন্ত্রণা এবং হাঁটুর বাত বা অষ্টিও আর্থারাইটিস এর সূত্রপাত। এই ক্ষয়ক্ষতি যতই বাড়তে থাকে ততই বেড়ে চলে হাঁটু নিয়ে চলাফেরা ওঠা-বসার কষ্ট। দেখা গেছে ৫০ জন স্থূলকায় মানুষ মোটা হতে শুরু করায় ৩ থেকে ৭ বছরের মধ্যে হাঁটুর অস্টিও আর্থারাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়। আর্থারাইটিস কথাটি এসেছে গ্রিক শব্দ "আর্থ্রোন " থেকে, যার অর্থ জয়েন্ট এবং 'আইটিস' - যার অর্থ প্রদাহ থেকে। অস্টিও মানে হাড়। সুতরাং অস্টিও আর্থারাইটিস কথাটির মানে হচ্ছে জয়েন্ট বা সন্ধিস্থলের হাড়ের প্রদাহ। এই রোগের সূত্রপাত হয় ৪৫ বছর বয়সের পর থেকে এবং ৫৫-৬০ বছর বয়সের পর এর প্রকোপ খুব বেশি দেখা দেয়। অতিরিক্ত পরিশ্রমে বিশেষ করে খেলোয়াড়দের মধ্যে এবং বারবার হাঁটুর আঘাতজনিত কারণে বর্তমানে কম বয়সীদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। ৫৫-৬০ বছর বয়স্ক হাঁটুর ব্যথা নিয়ে আসা মানুষের হাঁটুর এক্সরে করলে আমরা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে হাঁটুর ক্ষয়জনিত পরিবর্তন দেখতে পাই। এই প্রসঙ্গে হাটুর গঠন সম্বন্ধে একটু বলে নিই। হাঁটু হচ্ছে একটি জয়েন্ট বা সন্ধিস্থল যার তিনটি অংশ আছে। থাইবোন (ফিমার) লম্বা শিন বোন ( টিবিয়া) এর সাথে মিলিত হয়ে প্রধান হাঁটুর জয়েন্ট তৈরি করেছে। এই জয়েন্ট এর একটি ভিতরের এবং একটি বাইরের কক্ষ বা কম্পার্টমেন্ট রয়েছে। প্যাটেলা নামক একটি হাড় ফিমারের সাথে যুক্ত হয়ে একটি তৃতীয় জয়েন্ট তৈরি হয়েছে যাকে প্যাটেলাফিমোরাল জয়েন্ট বলা হয়। এই হাঁটুর জয়েন্ট কে ঘিরে রয়েছে জয়েন্ট ক্যাপসুল এবং লিগামেন্ট যা হাঁটু কে সুদৃঢ় করেছে। মেনিস্কাস হচ্ছে একটি মোটা কার্টিলেজ প্যাড যাকে আমরা সফট বোন নামে আখ্যা দিতে পারি, যেটি রয়েছে ফিমার বা টিবিয়া দিয়ে তৈরি জয়েন্ট এর মাঝে। এই মেনিসকাস জয়েন্টের মুভমেন্টকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। হাঁটুর জয়েন্টের চারিদিকে একটি তরল পদার্থ ভর্তি থলি থাকে যাকে বলা হয় বার্সা যা টেন্ডনকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে। প্যাটেলার নিচে একটি বড় টেন্ডন যেটা টিবিয়া নামক হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। থাই-এর বড় মাংসপেশি হাঁটুকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। থাই-এর সামনে আছে কোয়াড্রিসেপস মাসল যা হাঁটুর জয়েন্ট কে সোজা হতে সাহায্য করে। থাই-এর পিছনে আছে হ্যামস্ট্রিং মাসল যা হাঁটু কে ভাঁজ করতে সাহায্য করে। এই হাঁটুর জয়েন্টের চারিদিকে মসৃণ করার জন্য তাকে সাইনোভিয়াল মেমব্রেন যা থেকে তৈরি হয় এক ধরনের তরল পদার্থ যাকে বলা হয় সাইনোভিয়াল ফ্লুইড। সাইনোভিয়াল মেমব্রেন হচ্ছে জয়েন্ট ক্যাপসুল এর ভিতররের লাইনিং। হাঁটুর বাত বা অস্টিও আর্থারাইটিস এর প্রধান লক্ষণ হচ্ছে ব্যথা বা যন্ত্রণা,কারো অল্প কারো বেশি। হাঁটাচলা ও ওঠা বসা করতে, সিঁড়ি চড়তে,বাথরুম পায়খানা বসতে এই কষ্ট। ঠান্ডা বা আর্দ্র আবহাওয়ায় এই ব্যথা বাড়তে পারে। হাটুর যন্ত্রণার সাথে হাঁটু ফোলা ও হাঁটু শক্ত হতেও পারে। হাঁটুর ক্ষয় ছাড়াও কিছু কিছু খাদ্য এই রোগের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে জানা গেছে। ডিম, মাংস, বড় মাছ, ঘি, ভাজা খাবার বা চর্বিজাতীয় খাবার খেলে দেহের ওজন বৃদ্ধি পায় আবার পিউরিন জাতীয় খাদ্য যেমন ডিম, খাসির মাংস, মেটে, বড় মাছ, মাছের ডিম, পালংশাক, মদ, সিম, বিনস বেশি করে খেলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গিয়ে অস্টিও আর্থারাইটিসের ব্যথা বাড়তে পারে। যাকে আমরা বলি বিপাকীয় কারণ বা Metabolic Cause। আর্থারাইটিস যেহেতু এক ধরনের বাত বা ডিজেনারেটিভ আরথ্রোসিস, সেইহেতু অনেকের এই ধরনের রোগ বংশগত কারণেও হতে পারে। আমরা রোগের ইতিহাস নেবার সময় দেখেছি অনেকের মা,বাবা, দাদু,ঠাকুমার এই রোগ ছিল। সুতরাং সব ক্ষেত্রে না হলেও অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের কারণ বংশগত। আর্থারাইটিস মূলত বার্ধক্যজনিত রোগ তাই বয়স বৃদ্ধি কে এই রোগের একটি স্থায়ী কারণ বলা যেতে পারে।
অস্টিও আর্থারাইটিস ছাড়া আরো অন্য কারণে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে যেমন - (১) লিগামেন্টে আঘাত (Ligament Injury) - হাঁটুর লিগামেন্টে আঘাত বেশিরভাগ খেলোয়াড়দের মধ্যে দেখা যায়। এতে হাঁটু ব্যথা হয় এবং ফুলে যায়। (২) টেনডিনাইটিস Tendinitis) - টেনডিনাইটিস হচ্ছে টেনডন এর প্রদাহ। এটিও মূলত আঘাতজনিত। খেলাধুলার সময় আঘাত বিশেষ করে জাম্প করলে ( হাইজাম্প বা লংজাম্প) টেনডনে আঘাত লেগে এই রোগ হতে পারে। হাঁটুর টেনডিনাইটিস দেখা যায় হাঁটুর সামনে প্যাটেলার নিচে, প্যাটেলার টেনডনের মধ্যে - একে প্যাটেলার টেনডিনাইটিস বলা হয়। হাঁটুর পিছনদিকে পপলিটিয়াল টেনডন এর মধ্যে হলে একে বলা হয় পপলিটিয়াল টেনডিনাইটিস। (৩) গেঁটেবাত(Gout) - রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গেলে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে পিউরিন জাতীয় খাদ্য(যা পূর্বে উল্লেখ করেছি) বর্জন করতে হবে। (৪) মেনিসকাস ছিঁড়ে যাওয়া(Meniscus Tear) - মেনিসকাস যা হাঁটুর লিগামেন্ট কে ঘর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করে, তা ছিঁড়ে গেলে হাঁটুর ব্যথা ফোলা, দেখা দেয়। (৫) প্যাটেলা সরে যাওয়া (Dislocation of Patella) - আঘাতের ফলে প্যাটেলা স্থানচ্যুতি হলে বা প্যাটেলা ভেঙে গেলে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে। (৬) বার্সাইটিস (Bursitis) - আঘাতের ফলে বা বারবার হাঁটুর মধ্যে চাপ পড়ার পরে হাঁটুর বার্সার প্রদাহ দেখা দেয় যার কারণে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে। (৭) রিউমাটিক আর্থারাইটিস (Rheumatoid Arthiritis) - রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস হাড়ের অবক্ষয় জনিত বা আঘাত জনিত কারনে হয় না। এটি দেখা দেয় মূলত কব্জি,পা, হাতে সন্ধিস্থল ও আঙ্কেল জয়েন্ট কে এবং আস্তে আস্তে শরীরের সব জয়েন্ট এই রোগে আক্রান্ত হয়। সুতরাং এর প্রভাবেও হাঁটুর ব্যথা হতে পারে। এবার আসছি রোগ নির্ধারণ পদ্ধতি সম্বন্ধে আলোচনায়। হাঁটুর অস্টিও আর্থারাইটিস নির্ধারণের প্রধান হাতিয়ার হলো এক্সরে। হাঁটুর এক্সরে করা হয় দুটি কোণ থেকে। একটি Antero Posterior(AP) অপরটি Lateral (LAT) View। এই রোগে এক্স-রে তে আমরা দেখতে পাই সন্ধিস্থলের জায়গা বা Space কমে যাওয়া, হাঁটুর হাড়ে অস্টিওফাইটস বা হাড়ের গুঁড়ো জমা এবং হাঁটুর হাড়ের অবক্ষয়জনিত পরিবর্তন (Degenarative Changes)। হাঁটুর ব্যথার কারণ হিসাবে রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস বা গাউট দায়ী কিনা তা জানাও দরকার। এজন্য রক্তের R.A. Factor, Uric Acid পরীক্ষা করা দরকার। এই সঙ্গে রক্তশর্করা বা Blood Glucose পরীক্ষা করানোর পরামর্শও দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রয়োজনে আরও উন্নত রোগ নির্ধারণ পদ্ধতি যেমন সি.টি. স্ক্যান, এম.আর.আই স্ক্যান, আর্থ্রস্কপির সাহায্য নেওয়া হয়।সি.টি. স্ক্যান,এম.আর.আই সম্বন্ধে আপনারা অনেকেই জানেন। আর্থ্রস্কপি নামটা আপনাদের কাছে নতুন লাগতে পারে তাই এই সম্বন্ধে দু-চার কথা বলি। আর্থ্রোস্কোপিকে হাঁটুর যন্ত্রণা কারণ নির্ধারণের অত্যাধুনিক পরীক্ষা হিসাবে ধরা হয়। এই পদ্ধতিতে হাঁটুর সন্ধিস্থল বা জয়েন্টকে ছিদ্র করে পরীক্ষা করা হয়। আর্থ্রোস্কোপ একটি যন্ত্র যাতে লাগানো থাকে একটি ক্যামেরা। এই ক্যামেরার সাহায্যে হাঁটুর ভিতরে পরীক্ষা-নিরীক্ষণ করে রোগ নির্ণয় করা হয় এবং মাইক্রো সার্জারির সাহায্যে অপারেশন করা হয়। আজকাল আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি বেশ উন্নত এবং নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে।
Image Courtesy : webmd.com
হাঁটুর অস্টিও আর্থারাইটিস হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা একটি ক্রনিক অবস্থা। বেশিরভাগ রোগীরা প্রথমে ব্যথাকে সাধারণ মাংসপেশির ব্যথা ভুলে গুরুত্ব কম দিলেও পরে ব্যথায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে ডাক্তারবাবুর কাছে আসে। ডাক্তারবাবু হাঁটুর এক্সরে প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান, এম.আর.আই করিয়ে এই রোগ সম্বন্ধে নিশ্চিত হন। হাঁটুর অস্টিও আর্থারাইটিসে আধুনিক চিকিৎসায় তেমন কোনো ঔষধ নেই, যা আছে ব্যথা কমানোর ওষুধ বিভিন্ন বেদনা নিবারক জেল বা মলম এবং পরিপূরক হিসাবে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং প্রয়োজন হলে কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন। বর্তমানে এক ধরনের নতুন ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে যা কার্টিলেজ কে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। ব্যথা যদি অসহ্য হয় তাহলে ডাক্তার দেখিয়ে পরামর্শমতো ওষুধ খেয়ে ব্যাথা কমানোর ব্যবস্থা করা উচিত - নিজে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অনেক ক্ষেত্রে স্থায়ী উপশম হয় তবে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে আকুপাংচার, আকুপ্রেশার, চুম্বক চিকিৎসা বা ম্যাগনেটোথেরাপি( চুম্বকীয় আবেশ রক্ত চলাচল বাড়িয়ে ব্যথা থেকে উপশম দিতে পারে) ও ফিজিও থেরাপিতে ব্যথার কষ্ট লাঘব করে। গরম জলের সেঁক রক্তচলাচল বাড়িয়ে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া এবং ব্যথা থেকে উপশম দেয় এবং ঠান্ডা জলের সেঁক রক্ত চলাচলের শিরাকে সংকুচিত করে নার্ভ ইমপালস কে ব্লক করে জায়গাটাকে অসাড় করে ব্যথাকে সাময়িকভাবে আরাম দেয়। এই সমস্ত চিকিৎসায় কাজ না হলে এবং যেখানে হাঁটুর বিকৃতি খুব বেশী(Gross Change) এবং হাঁটু প্রায় বিকল হয়ে পড়লে তখন শল্য চিকিৎসার দরকার হতে পারে।
শল্যচিকিৎসা মানে হাঁটু পাল্টে দেওয়া যাকে আমরা ডাক্তারি ভাষায় বলি TKRS(Total Knee Replacement Surgery)। এই পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হাঁটু বাদ দিয়ে বিভিন্ন ধাতু যেমন স্টেনলেস স্টিল, ক্রোমিয়াম, কোবাল্ট, টিটানিয়াম এর সংমিশ্রণে এবং প্লাস্টিক ( এই প্লাস্টিক পদার্থ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয়রোধক পলি- এথিলিন) দিয়ে তৈরি কৃত্রিম হাঁটু (যাকে বলা হয় প্রসথেসিস) সংযোজন করা হয়। এই কৃত্রিম হাঁটু প্রতিস্থাপনে ব্যথা অনুভূত হয় না ও হাঁটু তার কার্যক্ষমতা ফিরে পায়। এর আয়ু গড়ে ১০-১২ বছর। কৃত্রিম হাঁটু লাগানোর পর যদি রোগী ভারী কাজ করে, দৌড়ঝাঁপ, ছোটাছুটি করে- এককথায় হাঁটুর যত্ন না নেয় তাহলে এক বছর পর থেকেই এই কৃত্রিম হাঁটু তার কার্যক্ষমতা হারাতে পারে। এই ব্যাপারে নিশ্চয়ই আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী অস্টিও আর্থারাইটিসে ক্ষতিগ্রস্ত হাঁটু পাল্টে কৃত্রিম হাঁটু সংযোজনের কথা মনে আছে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই অক্টোবর মুম্বাইয়ের ব্রিচক্যান্ডি হাসপাতালে নিউইয়র্ক-এর অর্থোপেডিক সার্জেন ডাঃ চিত্তরঞ্জন রানাওয়াত ৯০ মিনিট ধরে অপারেশন করে বাজপেয়ীর বাম হাঁটু এবং ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জুন ডান হাঁটু পাল্টে কৃত্রিম হাঁটু প্রতিস্থাপন করেন।
মেডিকেল অথবা সার্জিক্যাল যে ধরনের চিকিৎসায় হোক না কেন ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম অথবা যোগাসন প্রক্রিয়াগুলি এই রোগের চিকিৎসায় বিশেষ উপকারী।
অস্টিও আর্থারাইটিস রোগীদের হাঁটুর ব্যাথা ভালো রাখার কিছু পরামর্শ:-
১) মেঝেতে পা মুড়ে বসবেন না।
২) অনেকক্ষণ এক ভাবে দাঁড়িয়ে কাজ করবেন না। বিশেষ করে রান্না করার সময় মহিলারা রান্নাঘরে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে রান্না করেন। তাই রান্নাঘরে টুল রাখবেন। মাঝে মধ্যে বসবেন।
৩) হাঁটবেন কম।
৪)সিঁড়ি ওঠা কমাবেন।
৫)বাথরুম, পায়খানা বসার সময় কমোড ব্যবহার করবেন।
৬)শরীরের ওজন বাড়াবেন না। বিশেষ করে যারা স্থূলকায় তারা উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার যেমন চৰ্বি জাতীয় খাবার (তেল, ঘি, মাখন, ভাজাখাবার, খাসির মাংস, বড় পাকামাছ) এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার (ভাত, রুটি, আলু, চিনি, মিষ্টি) কম খেয়ে ওজন কমানোর দিকে নজর দেবেন।
৭)যারা বাইক, মোটর সাইকেল চালান তারা কিক করে স্টার্ট দেওয়ার পরিবর্তে সেলফ স্টার্টার ব্যবহার করুন। কারণ কিক করে স্টার্ট দেবার ফলে হাঁটুতে জার্ক লেগে ব্যাথা বাড়তে পারে।
৮)হাঁটুর ব্যাথা বেশী হলে হাঁটা চলার সময় বা দাঁড়িয়ে কাজ করার সময় প্রয়োজনে Knee Support (Knee Cap বা Knee Brace) নিতে পারেন। Knee Cap বা Brace কেনার সময় দেখবেন সেটা যেন Open Patella হয় অর্থাৎ Patellar কাছে গোল ফুটো থাকে। খুব টাইট যেন না হয় সেদিকটাও নজর রাখবেন।
৯)ইউরিক অ্যাসিড বেশী থাকলেও ব্যাথা বাড়তে পারে তাই উচ্চ প্রোটিন যুক্ত/পিউরিন জাতীয় খাবার যা আগেই উল্লেখ করেছি তা কম খাবেন।
সবশেষে বলব প্রতিদিন দৈনন্দিন কাজকর্ম করার সময় হাঁটু এবং কোমর এর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। নিজের সামান্য অসতর্কতার জন্য মেরুদন্ডে, কোমরে, হাঁটুতে আঘাত লাগতে পারে। শরীরের ওজন বাড়তে দেবেন না। আর প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম, যোগাসন এবং প্রাণায়াম করলে মেরুদন্ডের, কোমরের এবং হাঁটুর রোগকে সহজে এড়ানো যায়।