চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

মেধাবী ছাত্রী পয়সার অভাবে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন ভুলে, মাঠে ধান নিরেন করতে যাচ্ছে

 

আলোয় আঁধার

মেধাবী ছাত্রী পয়সার অভাবে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন ভুলে, মাঠে ধান নিরেন করতে যাচ্ছে


নিজস্ব সংবাদদাতা, আউশগ্রাম : পড়াশোনা আর হবে না। এবার তাকে ক্ষেতের কাজ করেই খেতে হবে। বিভিন্ন মানুষের কাছে ঘুরে হতাশ আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের অমরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মেধাবী উচ্চ মাধ্যমিক উর্তীর্ণ ছাত্রী সঙ্গীতা মাঝি। দশ বছর বয়সে হঠাৎই রোগে বাবার মৃত্যু হলে, মা বন্দনা মাঝি তার দুই নাবালিকা কন্যাকে নিয়ে চলে আসতে হয় পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার মাদারবাটি গ্রামের শ্বশুরঘর থেকে আউশগ্রামের অমরপুরের বিষ্ণুপুরে বাপের ভিটেতে। তারপরই অপরের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকা হতদরিদ্র পরিবারটির। সঙ্গীতা ১০ বছর বয়সে মামার বাড়িতে এসেছে। বাবা মারা যায় কঠিন রোগে, বাবারও তেমন অবস্থা ভালো ছিল না। একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যায় বাবা বামাচরণ মাঝি। তারপর থেকেই মা বন্দনা মাঝিকে নিয়ে মামার বাড়িতে এসে উঠেছে তারা। দুর্গাপুরে স্কুলের এক শিক্ষিকা নবনীতা সাহার বাড়িতে মাস মাইনের কাজ করে সঙ্গীতার মা। দুটি মেয়ে বন্দনার। বাপের বাড়ি থেকে দ্বিতীয় বার সংসার করে দেবার কথা বললেও তা করেনি বন্দনা, শুধু মেয়েদের মুখ চেয়ে। গত তিন বছর আগে মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে আর একটি মেয়ে পিয়া মাঝির বিয়ে দিয়েছে, স্থানীয় পূর্বচটি গ্রামে। তারপর থেকেই বন্দনা মাঝি ছোট মেধাবী মেয়ে সঙ্গীতা মাঝিকে একমাত্র ভাই রাজকুমার আঁকুড়ের কাছে রেখে, সে দুর্গাপুরে গেছে পরিচারিকার কাজে।

 


মামা রাজকুমারের অবস্থাও ভালো নয়। দিনআনা দিনখাওয়া অবস্থা। তার উপরে বৃদ্ধ বাবা ভৈরব ও মা শীতলা আঁকুড়ের দায়িত্ব তার উপর। মেধাবী সঙ্গীতার মামা রাজকুমার কাঠের কাজ করে। সেই অল্প কটা টাকায় তাদের, নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর জোগাড়। মামাই বহুকষ্ট করে মেধাবী ভাগ্নি সঙ্গিতা মাঝিকে এতদিন পড়িয়েছে স্থানীয় গেঁড়াই উচ্চ মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে। বর্তমানে ভাগ্নিকে ভর্তি করার সঙ্গতি নেই তার। আসলে তারও সংসার বড়ো হয়েছে। দীর্ঘ লক ডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছে মা বন্দনা মাঝিও। ফলে অভাবে পড়েছে সংসারটি। গেঁড়াই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, সঙ্গিতা মাঝি এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০% নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বাংলায় ৮৪, ইংরাজিতে ৫৪ ছাড়া প্রত্যেক বিষয়ে ৯৭ করে নম্বর পেয়েছে। কোনো টিউশনি ছিল না। বাড়িতে পড়াশোনার কোনো পরিবেশ নেই। সব বইও সে কিনতে পারেনি। স্কুলের লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ে তার এই সাফল্য। সঙ্গীতার একার লড়াইএ তার এই জয়। আমরা তার পাশে আছি।


এবিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে আউশগ্রাম ২ ব্লকের বিডিও গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,"আমরা জেনেছি। দেখছি যদি মেয়েটিকে স্নাতকে ভর্তি করা যায়, তার ব্যবস্থা করছি।"

তবে চলচ্চিত্র জগতের অভিনেতা সঞ্জু-র কাছে খবরটি পৌঁছাতেই শনিবার তিনি ছাত্রীটির বাড়ি গিয়ে, পড়াশোনা যাতে না বন্ধ হয় সে আশ্বাস দেন। পূর্ব বর্ধমানের জেলা পুলিশও এবিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে।