চৈতন্য মহাপ্রভু'র নামে নব নির্মিত তোরণ উদ্বোধন কাটোয়ার দাঁইহাটে

করোনা : সচেতনতা বাড়ান, হৃদয়হীনতা নয়



করোনা : সচেতনতা বাড়ান, হৃদয়হীনতা নয়


 🔸 অভিজিৎ মিত্র


  ➡️ ২২ এপ্রিল সংবাদ প্রভাতী-তে ভারতে করোনার সচেতনতা কোন পর্যায়ে, সেই নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। সেই লেখায় বেশ কিছু সংখ্যাতত্ব দেখিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তুলেছিলাম সাধারন মানুষ, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকারের সচেতনতা নিয়ে। এটাও বলেছিলাম, কেন্দ্রীয় সরকারের গাফিলতির জন্য ভারতে যেভাবে করোনার বিস্তার ঘটেছে ও ভবিষ্যতেও ঘটতে চলেছে, তার জন্য কেন্দ্র সরকারকে একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে পাশমার্ক দিতে পারছি না। রাজ্য সরকারকেও কয়েকটা বিষয়ে সমালোচনা করেছিলাম। তখন হয়তো কিছু পাঠক আমার সেই লেখা পড়ে হেসেছিলেন, ভেবেছিলেন আমি হয়তো মানুষকে সচেতন করার জন্য নয়, রাজনৈতিক কারনেই কলম ধরেছি। কিন্তু আজকের সামগ্রিক ছবিটা আপনারা একবার যদি ভাল করে দেখেন, বুঝতে পারবেন কোভিড সংখ্যাতত্বে ভারত সারা পৃথিবীতে এখন কোথায় দাঁড়িয়ে। ২৫ মার্চ লকডাউনের প্রথম দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬১৮ থেকে চারমাস পরে, ৩ অগস্ট অব্ধি, সেটা পেরিয়ে গেছে সাড়ে ১৮ লাখ। মৃত্যু ৩৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ভারত এখন করোনা সংক্রমনের নিরিখে পৃথিবীতে তিন নম্বরে আর মৃত্যুর নিরিখে পাঁচ নম্বরে। এপর্যন্ত ভারতে মোট কোভিড টেস্ট হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮৮ লাখ মানুষের, সুতরাং বলা যায় এই মুহুর্তে পরীক্ষিত প্রতি ১০ জন মানুষের ১ জন সংক্রামিত। এবং এটাও মাথায় রাখুন, এখন এই যে রোজ গড়ে ৫০-৬০ হাজার লোক নতুন করে করোনায় সংক্রামিত হচ্ছেন, এটা কিন্তু সঠিক অর্থে সংক্রমনের সংখ্যা নয় – এটা শনাক্তকরনের সংখ্যা। প্রকৃত সংক্রমনের সংখ্যা এর বেশ কয়েক গুণ। টেস্ট যত বেশি হবে ততই সংক্রামিতের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। ফলে এই লেখায় এইরকম ‘খারাপ’ পরিবেশের ভেতর কি করে ‘ভাল’ রেজাল্ট করা যায়, সেই নিয়েই আলোচনা করতে চাই। আশা করব, পাঠকরা এবার গুরুত্ব সহকারেই এই লেখা পড়বেন এবং চেষ্টা করবেন আপনার চেনাশোনা মানুষের ভেতর এই লেখা ছড়িয়ে দিতে যাতে সবাই সাধ্যমত সজাগ হয়ে ওঠেন।
হ্যাঁ, ১১ মে আমি অন্য এক লেখায় বলেছিলাম যে করোনাকে কোনঠাসা করার দরকার থাকলেও আমি একটানা লকডাউনের বিপক্ষে এবং আমার মতে পেটের ক্ষিদে ও জীবিকার দিকে তাকিয়ে লকডাউন তুলে দিয়ে এবার আস্তে আস্তে জনজীবন স্বাভাবিক করে দেওয়া উচিৎ। এও বলেছিলাম, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত এদেশেও প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্য নিয়েই ধাপে ধাপে লকডাউন তোলা উচিৎ। আমি আজও আমার সেই বক্তব্যকেই সমর্থন করছি। তবে শুধু জীবিকার জন্য নয়, আরেক নিঃশব্দ ঘাতককে বাড়তে না দেওয়ার জন্যও। সেই ঘাতকের নাম টিউবারকিউলোসিস বা টিবি বা যক্ষ্মা রোগ। আপনারা অনেকেই জানেন যে টিবি রোগ মূলত হয় অপুষ্টিজনিত কারনে, শীর্ণ দুর্বল না-খেতে-পাওয়া শরীরে। এবং এই রোগের ব্যাকটেরিয়া (ভাইরাস নয়) অনেকটা করোনার মতই হাঁচি-কাশি-কথার মধ্যে দিয়ে বাতাসে ভেসে বেড়ানো এরোসলের মাধ্যমেই একজন থেকে আরেকজনে সংক্রামিত হয়। দোকানপাট কলকারখানা বন্ধ থাকলে অনাহারে থাকা গরীব মানুষগুলোর এই রোগের কবলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি এবং তাদের ভেতর এই রোগ খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বেশি। এবং এটাও হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন যে ২০১৯ সালে ভারতে ২৪ লাখের বেশি লোকের টিবি রোগ সংক্রমন ও ৮০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যার মানে দাঁড়ায়, এই মারণ রোগ করোনার থেকেও বেশি প্রাণঘাতী। সুতরাং একটা মহামারী থেকে বাঁচার জন্য মানুষকে আরেক মহামারীর মুখে ঠেলে দেওয়াও নিশ্চয় বিবেচকের কাজ নয়।
তাহলে উপায়? আংশিক লকডাউন, এখন যে রকম চলছে? আমি এই প্রশ্নের উত্তরে আসব, কিন্তু প্রথমে আবার একটা ছোট সংখ্যাতত্ব। এটা চোখের সামনে না ভাসলে আপনারা লেখার পরবর্তী অংশে সহজে ঢুকতে পারবেন না।
২০১৪ সালে আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ PSAF নামক এক গাণিতিক মডেল দেয় যেখানে তারা দেখায় যে কোন মারণ মহামারী বা অতিমারী কোন এক দেশের ৩০% অব্ধি জনসংখ্যাকে আক্রান্ত করে দিতে পারে, যদি সেখানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রুখে দেওয়া না যায় অথবা যদি সেই দেশের বাজারে ঐ অতিমারীর টিকা না আসে। সেই হিসেবে, ভারতে টিকা না আসা অব্ধি মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪২ কোটি মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা। মনে করে দেখুন, কিছুদিন আগেই কিন্তু ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, ব্যাঙ্গালোরের দুজন প্রফেসর এক গাণিতিক মডেল দেখিয়েছেন যেখানে তারা আশঙ্কা করছেন যে কোভিডের টিকা বাজারে না এলে আগামি মার্চের ভেতর ভারতে প্রায় ৩৬ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবেন। অর্থাৎ সংক্রামিতের সংখ্যাটা আর লাখে সীমিত থাকছে না, এই দুই মডেলের ভবিষ্যতবাণীর হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৪০ কোটির আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। প্রতি ১০ জনে ৩ জন। ভারতের জন্য এটাই আশঙ্কার কথা। সেক্ষেত্রে এই রোগ যতদূর সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখার জন্য টিকা না আসা অব্ধি আমাদের সবাইকেই কিন্তু শারীরিক দূরত্ববিধি, মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহার করা, সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, বাইরের জামাকাপড় রোজ কেচে ফেলা, এগুলো করে যেতেই হবে। এবং মাস্ক কিন্তু নাক-মুখ ঢাকার জন্যই ব্যবহার করতে হবে, ফ্যাশন করে থুতনির নিচে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ির মত ঝুলিয়ে রাখার জন্য নয়।
এবার আসা যাক আংশিক লকডাউনের কথায়। এই মুহুর্তে আমাদের রাজ্যে সপ্তায় দু’দিন, কোন কোন জেলায় বা শহরে আবার একটানা সাতদিন! যারা এই লকডাউন সমর্থন করছেন, তারা বলছেন - জীবিকাও চলতে থাকল, আবার মাঝে মাঝে লকডাউনের ফলে একে অপরের সংস্পর্শে আসাও বন্ধ হল। এভাবেই হবে ব্রেকিং দ্য চেন। আমি সবিনয়ে এই মডেলের বিরোধিতা করছি। কেন? খুব সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি, কোথাও ভুল মনে হলে ইমেল দিয়ে জানাবেন, আমি পরের লেখায় নিজের ভুল শুধরে নেব।
ওপরে যে দুটো গাণিতিক মডেলের কথা বললাম, সেই দুটোই কিন্তু একটা কথা বলছে - কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা গোষ্ঠী সংক্রমন। সেটা রুখতে না পারলে জনসংখ্যার ৩০% অব্ধি সংক্রামিত হতে পারে। তাহলে প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে এই গোষ্ঠী সংক্রমন কি জিনিষ। ধরা যাক, কোন এক ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা বা একটা পয়েন্ট যেখানে দিনের কোন একসময় অনেকে একত্রিত হয়। এরা সবাই কাজের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় যায় এবং আবার দিনের শেষে সেই এলাকা বা পয়েন্টে একত্রিত হয়। এদের ভেতর যে কেউ যদি কোভিডে আক্রান্ত হয়, তাহলে সেই এলাকায় বা পয়েন্টে তার মাধ্যমে বাকিরাও খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারে যেহেতু শারীরিক দূরত্ববিধির এখানে কোন বালাই থাকছে না। এটাই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। সেক্ষেত্রে কিন্তু এটাও মাথায় রাখুন যে দোকান বা বাজার বা পাবলিক বাস-ট্রেন, এগুলো সবই কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যম হতে পারে। এবার আসুন আংশিক লকডাউনের প্রসঙ্গে। ভাবুন, আপনার এলাকায় সাতদিন লকডাউন হতে চলেছে। আপনি কি করবেন? তার আগের দিন দোকান বাজার সব কিছু ভরে রেখে দেবেন। আবার লকডাউন শেষ হবার পরের দিনও সেটাই করবেন কারণ এই সাত দিনে সব জিনিষ খতম। এবং এটা শুধু আপনি একা নন, বাকি সমস্ত লোকেরাও করবেন। অর্থাৎ ঐ দুটো দিন আপনার এলাকায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হবার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি কারন দোকান বাজারে ভিড় থাকবে সর্বাধিক। আংশিক লকডাউন যদি সপ্তায় দুদিন হয়, তাহলে লকডাউনের আগের-পরের দিন পাবলিক বাস-ট্রেনেও একই সম্ভাবনা থাকবে। এবং এটাও ভাবতে হবে যে আমেরিকার এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে কোভিড মানুষের দেহে ৪৯ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ৭ বা ২ দিনের লকডাউনে আদৌ কোন কাজ হবে? এরপরেও কি আংশিক  লকডাউনকে সমর্থন করা যায়? ভাবুন।
বরং, আমার মনে হয়, একটু অন্যরকম ভাবে ব্যাপারটা সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কমাতে গেলে ভিড় কমাতে হবে। দোকান-বাজার বন্ধ করলে আগের-পরের দিন ভিড় কিন্তু বেড়ে যাবে। ফলে আমরা যদি রিসোর্স (দোকান-বাজার) খোলা রেখে উপভোক্তার সংখ্যা কমাতে পারি, তবেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন কমতে পারে। তাহলে আসুন, একটা মডেল ভাবা যাক। কোন এক ওয়ার্ডে ধরুন পাঁচখানা গলি আছে, ক খ গ ঘ ঙ। দেখবেন সব ওয়ার্ডেই কমবেশি কিছু না কিছু দোকান বাজার থাকবেই। এবার ধরা যাক, সেই ওয়ার্ডে একটা নিয়ম করা  হল যে সোমবার ক গলির লোকজন দোকান বাজার করবেন, মঙ্গলবার খ গলির, বুধবার গ গলির...। দোকান বাজারের দিন আলাদা হবার জন্য কোন এক গলির লোকজন সহজে অন্য গলির লোকের কাছাকাছি আসতে পারছেন না, কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের সম্ভাবনাও কমছে। লকডাউনের আর দরকার থাকছে না। এক্ষেত্রে শুধু দোকানদার বা সব্জিওয়ালাকে বলতে হবে যে সে যেন মাস্ক ছাড়া কাউকে দোকান-বাজার না দেয় এবং নিজের দোকান-বাজারের সামনে তিন বা চারজনের বেশি লোককে দাঁড়ানোর অনুমতি না দেয়। আরেক ধাপ এগিয়ে এটাও করা যেতে পারে যে নির্দিষ্ট সময়ে কোন এক গলির কোন একজন দোকান বা বাজারে ফর্দ লিখে নিয়ে গেলেন, কোন্‌ জিনিষ কতটা লাগবে। দোকানদার বা সব্জিওয়ালাকে দিয়ে দিলেন। তারপর আরেক সময়ে গিয়ে সেগুলো নিয়ে চলে এলেন। ফলে দোকান বা বাজারের সামনে কখনোই ভিড় জমল না। এমনকি ওয়ার্ডে কোন করোনা আক্রান্তর বাড়ি থাকলে তাদের দোরগোড়ায় দোকান-বাজার পৌঁছে দেবার কথা ভাবুন। এবং এগুলো করতে কিন্তু প্রশাসনের সাহায্য নেবার দরকার নেই, আপনাদের প্রত্যেকের নিজের ওয়ার্ডে নাগরিক কমিটি থাকলে তার মাধ্যমেই এটা শুরু করা যায়। সেখানকার দোকানদার বা সব্জিওয়ালার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে। আর চাকরি বা যাতায়াতের ক্ষেত্রে, আমার মতে, সম্ভব হলে নিজের সাইকেল বা বাইক বা গাড়ি ব্যবহার করুন। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নয়।
প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করুন যাতে আপনার ওয়ার্ডের গলিগুলোয় খুব তাড়াতাড়ি র‍্যাপিড টেস্ট শুরু করানো যায়। কারন একটা ব্যাপার আমাদের মনে রাখতে হবে – টেস্ট না হলে লকডাউনের কোন অর্থ নেই। লকডাউন আমাদের খানিকটা সময় দেয় মাত্র, করোনা শনাক্ত করতে পারে না। টেস্ট করে সংক্রামিতকে আলাদা করে তার সংস্পর্শে শেষ ১৪ দিনে আসা সবাইকে যদি চিহ্নিত না করা যায়, তাহলে লকডাউন করেও কোন লাভ হবে না। বরং লকডাউন ওঠার পরের দিনেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের সম্ভাবনা থাকবে সর্বাধিক, যেটা একটু আগেই বলেছি। আবারো বলি, প্রশাসন থেকে সাধারন মানুষ, সবাইকে সচেতন হতে হবে, কার্য-কারণের সম্পর্কটা বুঝতে হবে, কি করলে কি হতে পারে, এবং কি করলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আটকানো যায়, সেটা। মাথায় রাখুন, আমাদের গা-ছাড়া মনোভাব থাকলে কিন্তু খুব সহজেই ভারতে সংক্রমনের সংখ্যা ৪০ কোটির কাছকাছি চলে যেতে পারে। এবার বুঝতে পারছেন তো, আমি কেন ঐ দুটো গাণিতিক মডেলের কথা শুরুতেই বলেছিলাম!
আরেকটা সাইজে ছোট কিন্তু অনুভূতিতে বড় ব্যাপার বলে এই লেখা এবার শেষ করব। শেষ প্রায় একমাস হল নিউজ চ্যানেলে দেখছি, কোথাও কোভিড আক্রান্তর স্ত্রী ফ্ল্যাটের ছাদে কাপড় মেলতে উঠলে তাকে মারধর করা হচ্ছে, কোথাও কোভিড আক্রান্তদের একঘরে করে রাখা হচ্ছে বা হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কোথাও আক্রান্ত ব্যক্তিকে অ্যাম্বুলেন্সে কেউ তুলে দিতে এগিয়ে আসছে না বলে সে রাস্তায় পড়ে মারা যাচ্ছে। কোথাও সংক্রামিতকে ছ’কিলোমিটার নিয়ে যাবার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ৯ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। কোথাও আবার আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যাবার পর তাকে দাহ করার জন্য প্রাইভেট হসপিটাল তার ছেলের কাছে প্রচুর টাকা চাইছে। ভাবতে ভয় লাগে, এই কি আমার ভারতবর্ষ? এ কোন্‌ হৃদয়হীন দেশে আছি? প্রশাসনের কাছে এবং প্রতি ওয়ার্ডের নাগরিক কমিটির কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, নিজের ওয়ার্ডে এই ভয়, আতঙ্ক আর রোগ নিয়ে ব্যবসার বাতাবরণ শেষ করুন। ঐ অসহায় মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ান। দরকার হলে পি-পি-ই কিট পরে গিয়ে ওদের সাহায্য করুন। যতটুকু সম্ভব। আসলে, আমরা তো আদপে সামাজিক জীব। সমাজ ও মানুষ না থাকলে আমরা কেউই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত একা বেঁচে থাকতে পারব না। দেখবেন, কোন একসময় করোনা নিজের শক্তি হারিয়ে জ্বর-সর্দি-কাশির মত সাধারন ভাইরাস হয়ে উঠেছে। তখনও কিন্তু সমাজ আজকের মত টুকরো হয়েই রয়ে যাবে, যদি আজ আমরা এই ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিতে না পারি। ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গান “মানুষ মানুষের জন্য...একটু সহানুভূতি কি...?” আমরা কেউই ভুলতে পারব না। এই তো আদর্শ সময়, সেই গান বাস্তবায়িত করার।


(লেখক বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অধ্যক্ষ এবং আই-আই-টি গুয়াহাটির প্রাক্তন অধ্যাপক)